Women in the freedom movement/স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীরা/দশম শ্রেণীর ইতিহাস/#history #class #bengali🙏#exam #wbcshistory #historywbcs #wbeducation #class10th #wbclass10 #swapnakhonjeducation
দশম শ্রেণীর ইতিহাস
আজকের বিষয় - স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীরা।
অষ্টাদশ শতক ছিল ভারত ইতিহাসের এক অন্ধকারাছন্ন অধ্যায়। ভারতীয় নারী সমাজের অবস্থাও সেদিন ছিল অতি শোচনীয়। বাল্যবিবাহ, কৌলিন্যপ্রথা, সতীদাহ, কন্যাবিক্রয়, বিধবার প্রতি অবিচার সেদিন ছিল সমাজের সাধারণ নিয়ম। উনিশ শতকের বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারকরা এইসব সামাজিক কুপ্রথার বন্ধন থেকে নারী সমাজকে মুক্ত করে তাদের গৌরবের আসনে ও পূর্ন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হন। বাংলায় স্বর্ণ কুমারী দেবী, হিরণ্ময়ী দেবী, সরলা দেবী প্রমুখ এগিয়ে আসেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা -
ক। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে নারীরা -
১। সরকারের বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা বাংলা জুড়ে প্রতিবাদ ওঠে। বাংলার নারী সমাজও এই প্রতিবাদে সামিল হয়। এ ব্যাপারে সরলাদেবী চৌধুরানী সম্পাদিত ভারতী পত্রিকা, সরজুবালা দত্তের সম্পাদিত ভারত মহিলা এবং বামাবোধিনি পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
২। ময়মনসিংহ এর মেয়েরাই সর্বপ্রথম সভা করে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং দেশবাসীকে বিদেশি বর্জন ও স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহারের অনুরোধ করে। কলকাতায় মেয়েদের প্রথম বড়ো সভা হয় ১৩১২ বঙ্গাব্দের ৫ই আশ্বিন।
৩। ১৯০৫ সালের ১৬ ই অক্টোবর সরকারি আইনবলে বাংলাদেশ দু টুকরো হয়ে যায়। সেদিন রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদির নেতৃত্বে সারা দেশ জুড়ে অরন্ধন দিবস পালিত হয়। কোথাও উনুন জ্বলেনি, বাংলার মা বোনেদের সক্রিয় সমর্থনে অরন্ধন দিবস সফল হয়। এই আন্দোলনে স্বর্ণ কুমারী দেবী, সরলাদেবী, হিরণ্ময়ী দেবী প্রমুখ নারীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
খ। অসহযোগ আন্দোলনে নারীরা -
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের রাওলাট আইন ও জালিয়ানওয়ালানাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন এর প্রস্তাব গ্রহণ করেন। গান্ধীজির ডাকে হিন্দু মুসলিম, নারী পুরুষ, ধনী দরিদ্র, শ্রমিক কৃষক সমগ্র ভারতবাসীর মধ্যে এক অভূতপূর্ব সাড়া জাগে।
১। দেশবন্ধুর স্ত্রী বাসন্তী দেবী যখন সভা সমিতির মাধ্যমে নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ করছেন, তখন দেশবন্ধুর ভগিনী উর্মিলা দেবী মহিলাদের মধ্যে স্বরাজের মূলমন্ত্র প্রচার এবং চরকা ও খাদিকে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্দেশ্য ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে নারী কর্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ভবাণিপুরে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে বহু অনাথা মেয়ে আশ্রয় পেয়েছিল। যেখানে তাঁত, চরকা প্রভৃতি শিল্পশিক্ষা দেওয়া ছাড়াও মেয়েদের আইন অমান্য ও সত্যাগ্রহে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করা হতো।
২। মফস্বলে এই আন্দোলন যথেষ্ট ঢেউ তুলেছিল। ঢাকার গেন্ডারিয়ার আশালতা সেন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে নিজের শ্বশুর বাড়িতে শিল্পাশ্রম নামে মেয়েদের জন্য একটি বয়নকেন্দ্র গড়ে তোলেন। সেখানে মেয়েরা নিজেরা খদ্দর বুনে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সেগুলি বিক্রি করতেন। এখানে তৈরি শিল্প সামগ্রী বিক্রির জন্য প্রতিবছর শিল্পমেলা সংগঠিত হত।
৩। গান্ধীজির বাণী ও জাতীয়তাবাদী চেতনা প্রচারের উদ্দেশ্য তিনি ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি গড়ে তোলেন আশালতা সেন।
৪। বাংলার বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু মহিলা নেত্রীর আবির্ভাব হয়। বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করে তাঁরা মেয়েদের ঐক্যবদ্ধ করেন এবং নানা ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজে তাঁদের যুক্ত করেন। এব্যাপারে সিলেটের সরলাবালাদেবী, বালুরঘাটের প্রভা চট্টোপাধ্যায়, নোয়াখালীর সুশিলা মিত্র, বরিশালের প্রফুল্ল কুমারী বসু প্রমুখের নাম অতি উল্লেখযোগ্য।
গ। আইন অমান্য আন্দোলনে নারীরা -
১৯৩০ সালের ৬ ই এপ্রিল ডান্ডির সমুদ্র উপকূলে গান্ধীজি লবন আইন ভঙ্গ করে স্বহস্তে লবন তৈরি করে ভারতব্যাপি আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন। ভারতীয় নারী সমাজের উদ্দেশ্য এক ভাষণে তিনি বলেন যে, " এই অহিংস যুদ্ধে পুরুষদের চেয়ে নারীদের দানই অধিক হওয়া উচিত।"
১। নারী সমাজ গান্ধীজির আবেদনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাড়া দিয়েছিল এবং তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ এই আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দিল্লি, বোম্বাই, কলকাতা ও গ্রামাঞ্চলে পর্দানশীন নারী সমাজ আন্দোলনে যোগ দিয়ে আবগারি দোকান ও বিদেশি পন্যাগারের সামনে পিকেটিং শুরু করে। গান্ধী পত্নী কস্তুরবা গান্ধী, কমলা নেহেরু, সরোজিনী নাইডু, বাসন্তী দেবী, সরলাবালা দেবী, লীলা নাগ প্রমুখ মহিলারা এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
২। মহাত্মা গান্ধীর ডান্ডি যাত্রার পরদিনই ১৩ মার্চ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় নারী সত্যাগ্রহ সমিতি। ঢাকায় আশালতা সেন, শ্রীহট্টের সরলাবালা দেবী প্রমুখ নারীরা এই আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
ঘ। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীরা -
ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ই আগস্ট গান্ধীজি নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটিতে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ঢাকায় আশালতা সেন, শ্রীহট্টের সরলাবালা দেবী প্রমুখ নারীরা এই আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
১। তমলুকে গড়ে উঠে ভগিনী সেনা, এছাড়া বিনা দাস, কমলা দাস গুপ্ত, বনলতা সেন প্রমুখ অসংখ্য বীরাঙ্গনা নারীর কথা বলা যায়। যাঁরা ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন , কিন্তু দেশের পতাকাকে হস্তচ্যুত হতে দেননি। তাঁরা হলেন তমলুকের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা, মেদিনীপুর সদরের শশীবালা দাসী, আসামের ১৪ বছরের বালিকা কনকলতা বড়ুয়া এবং পাঞ্জাবের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী ফুকোননী।
মূল্যায়ন -
বিশ শতকের ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য। তাদের অবদান ভুলবার নয়। স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের আত্মবলিদান ভারতের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
History of bengali literature
History of competitive exams
History of bengal
Информация по комментариям в разработке