ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এর প্রতিটি আদেশে রয়েছে মানবকল্যাণ, নৈতিকতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের রহস্য। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হলো যাকাত। এটি কেবল দান নয়, বরং সম্পদকে পবিত্র করার অন্যতম মাধ্যম। কুরআন ও হাদিসে যাকাতের গুরুত্ব বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। যারা যাকাত আদায় করে না, তাদের জন্য কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। হাদিসে উল্লেখ আছে, “যে ব্যক্তি যাকাত দেয় না, তার ধন-সম্পদ কিয়ামতের দিন বিষাক্ত সাপের রূপ ধারণ করবে, যা তার গলায় পেঁচিয়ে তাকে দংশন করবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
এই দীর্ঘ বিবরণে আমরা আলোচনা করবো যাকাতের অর্থ, এর গুরুত্ব, যাকাত না দেওয়ার ভয়াবহতা, যাকাতের সামাজিক উপকারিতা এবং ইসলামের দৃষ্টিতে যাকাতের মূল উদ্দেশ্য।
---
যাকাতের সংজ্ঞা ও অর্থ
‘যাকাত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ‘পবিত্র করা’ এবং ‘বৃদ্ধি লাভ করা’। শরীয়তের পরিভাষায় যাকাত হলো— নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের উপর নির্দিষ্ট সময় শেষে নির্দিষ্ট হারে একটি অংশ আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত ও নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিতরণ করা।
কুরআনে বলা হয়েছে:
তাদের ধন-সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করো যাতে তুমি তাদের পবিত্র কর ও পরিশুদ্ধ করা
অর্থাৎ যাকাত শুধু সম্পদকেই পবিত্র করে না, বরং মানুষের অন্তরকে হিংসা, কৃপণতা ও অহংকার থেকে মুক্ত করে।
---
যাকাতের গুরুত্ব কুরআন ও হাদিসে
যাকাত ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি। কুরআনে প্রায় ৩০টির বেশি স্থানে নামাজের সাথে যাকাতের নাম উল্লেখ হয়েছে।
কুরআনের বাণী:
নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত দাও
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: (১) কালেমা শাহাদাত, (২) নামাজ, (৩) যাকাত, (৪) রমজানের রোজা, (৫) হজ।” (বুখারি ও মুসলিম)
এ থেকে স্পষ্ট হয় যে যাকাত না দেওয়া ইসলামের একটি বড় অংশকে অমান্য করার সমান।
---
যাকাত না দেওয়ার ভয়াবহ শাস্তি
কিয়ামতের দিন যাদের উপর যাকাত ফরজ ছিল কিন্তু তারা যাকাত দেয়নি, তাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
হাদিসে এসেছে:
“যে ব্যক্তি যাকাত দেয় না, কিয়ামতের দিন তার সম্পদ বিষাক্ত সাপের রূপ নিয়ে তার গলায় পেঁচিয়ে যাবে এবং বলবে— আমি তোমার ধন, আমি তোমার ধন।” (বুখারি, হাদিস: ১৪০৩)
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
যারা স্বর্ণের রৌপ্য জমা করে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের কঠিন শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন সেই ধনসম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের কপাল, পিঠ ও পার্শ্বদেশ দগ্ধ করা হবে
এই আয়াত ও হাদিসগুলো আমাদেরকে সতর্ক করে যে, যাকাত শুধু দান নয়, এটি আল্লাহর হক। যাকাত না দিলে সে ব্যক্তি নিজের জন্য জাহান্নামের আগুন তৈরি করে।
---
যাকাত সম্পদকে পবিত্র করে
যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে সম্পদে বরকত আসে। যাকাত হলো সম্পদের সেই অংশ, যা অন্যদের হক। যখন আমরা যাকাত দেই, তখন আমাদের সম্পদ হারাম অংশ থেকে মুক্ত হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যাকাত তোমার সম্পদের পবিত্রতা।” (বুখারি)
যাকাত দিলে কৃপণতা দূর হয়, দারিদ্র্য কমে এবং সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। অন্যদিকে যাকাত না দিলে আল্লাহ সেই সম্পদে বরকত উঠিয়ে নেন।
---
যাকাতের সামাজিক প্রভাব
১. গরিবদের সহায়তা: যাকাতের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্ররা সহায়তা পায়।
২. হিংসা ও বিদ্বেষ দূর হয়: ধনী-গরিবের মধ্যে ফারাক কমে যায়।
৩. অর্থনৈতিক স্থিতি তৈরি হয়: সমাজে সম্পদের সঠিক বণ্টন হয়।
৪. আল্লাহর রহমত লাভ হয়: যাকাত দাতার অন্তরে শান্তি আসে।
---
যাকাত কারা পাবে?
কুরআনের সূরা আত-তাওবা (আয়াত: ৬০) এ যাকাতের ৮ শ্রেণির মানুষ উল্লেখ করা হয়েছে:
১. গরিব,
২. মিসকিন,
৩. যাকাত সংগ্রহকারী,
৪. ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য,
৫. দাসমুক্তির জন্য,
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি,
৭. আল্লাহর পথে সংগ্রামী,
৮. মুসাফির।
---
যাকাত না দেওয়ার বর্তমান বাস্তবতা
আজকের যুগে আমরা অনেকেই যাকাতকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। ধনীরা যাকাত দেয় না, ফলে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। যদি সবাই যাকাত দিত, তবে দারিদ্র্য অনেকটা হ্রাস পেত। হাদিসে এসেছে, “যদি মানুষ যাকাত না দেয়, আল্লাহ আসমান থেকে বৃষ্টি আটকিয়ে দেন।” (ইবনে মাজাহ)
---
উপসংহার
যাকাত হলো ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ, যা আমাদের সম্পদকে হালাল ও পবিত্র করে। যাকাত না দেওয়া মারাত্মক গুনাহ এবং কিয়ামতের দিন তার ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। আমাদের উচিত সময়মতো যাকাত আদায় করা এবং এর গুরুত্ব বোঝা।
fullnesstalk
/ @fullnesstalk
📢 ভিডিওটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো। হয়তো কারো হিদায়াতের কারণ হবে তুমি।
🔔 সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকো ইসলামিক ভিডিওর জন্য।
Информация по комментариям в разработке