আত্মজা ও একটি করবী গাছ ||হাসান আজিজুল হক

Описание к видео আত্মজা ও একটি করবী গাছ ||হাসান আজিজুল হক

হাসান আজিজুল হকের আত্মজা ও একটি করবীগাছ গল্প
DR HASAN ARINDAM
.................................-----------------------
৪৭-পরবর্তী বাংলা কথাসাহিত্যের ক্ষেেেত্র এক বিশিষ্ট নাম হাসান আজিজুল হক (১৯৩৯-২০২১)। তাঁর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থের নামগল্প আত্মজা ও একটি করবী গাছ। এ গল্পে দেশ বিভাগের কারণে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্ববঙ্গে আগত একটি পরিবারের বিপন্ন ক্লেদাক্ত জীবনের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
শীতের রাতে তিনজন বখে যাওয়া কৈশোর পেরুনো তরুণের যাত্রাপথের বৃত্তান্তই গল্পের অধিকাংশ স্থান জুড়ে আছে। গল্পের বিপথগামী এই তিন তরুণের নাম ইনাম, ফেকু ও সুহাস। তারা আসলে বিশেষ উত্তেজনা নিয়ে চলছে এক নারীর সাক্ষাৎ পেতে। সুহাস যার সম্পর্কে বলেছে, ‘এট্টু এট্টু সর হইছে এমন ডাবের মত লাগে মেয়েডারে।’ এই মেয়ে রুকুর পিতাকে কেশো বুড়ো বলে অভিহিত করা হযেছে। পথ চলতে চলতে তারা তিনজন আশপাশের বাড়িগুলোতে কী হচ্ছে তার প্রতি নজর রেখে নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা চালিয়ে যায়। তারা খেয়াল করে খাঁদের বাড়িতে ধান সেদ্ধ হচ্ছে। উনোনের আগুনের পাশে সে বাড়ির সুন্দর সুন্দর মেয়েদের মুখ দেখা যাচ্ছে হঠাৎ হঠাৎ চাঁদমণির বাড়িতে একটা মুরগি নিয়ে গিয়েছে শেয়ালে। মুরগির শোক ভুলে বাড়ির লোকজন ঘুমতে যাচ্ছে। একটা বুড়ি পিদিম জে¦লে ফাটা পায়ে তেল ঢালছে। পালদের পলেস্তারা-খসা বাড়ি থেকে পোড়ামাটির গন্ধ পাওয়া যায়।
হাতে রেডিও নিয়ে সুহাস তার ছোট মামার বিয়েতে বরযাত্রী যাওয়ার গল্প বলে চলে। একই কথার পুনরাবৃত্তিতে বিরক্ত হয় ইনাম। ওর হাতের রেডিওর খেয়াল গানও ভালো লাগে না সহযাত্রীদের, তাছাড়া গানের আওয়াজ আশপাশের লোকজনকে সচকিত করে তুলতে পারে। বন্ধুদের কথায় বাধ্য হয়ে রেডিও বন্ধ করে সুহাস। ইনাম এক সময় স্কুলে যেত, এখন যায় না। লেখাপড়া সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত নেতিবাচক। সে স্কুল ও শিক্ষকদের অকথ্য গালিগালাজ করে। সে জানে লেখাপড়া করে লাভ নেই, কেউ চাকরি দেবে না। ফেকু পকেটপার, সে বলে মার খাওয়ার কৌশল না জানলে লোকের পকেটে হাত দেয়া যায় না।
কথায় কথায় ওরা তিনজন কেশোবুড়োর বাড়ির কাছে চলে এলে হারিকেন হাতে বুড়ো এগিয়ে এসে স্বাগত জানায়। বলে, ‘এসো বড্ড ঠাÐা হে, ভেতরে এসো।’ বুড়ো যেন মনে মনে তাদের জন্যই অপেক্ষা করছিল। সে বলে, ‘‘এই তোমরা একটু আধটু আসো, যখন তখন এসে খোঁজখবর নাও।... তোমরাই ভরসা, আমার পরিবার তোমাদের কথা বলতে অজ্ঞান।’ সে বলে তার বড় মেয়ে রুকু তাদের জন্য চা করতে যাচ্ছে। কথা বলতে বলতে সুহাস বুড়ো হাতে টাকা তুলে দিলে গদগদ ভঙ্গিতে বুড়ো তা গ্রহণ করে। তারপর হারিকেন রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বুড়ো স্ত্রী এই অনাচারের প্রতিবাদ করলে বুড়ো তাকে ‘মাগী, কুত্তী বলে গালিগালাজ করে। খানিক বাদে বুড়ো ফিরে এসে ফিসফিস করে পাশের ঘরে যেতে বলে। ফেকু আর সুহাস পাশের ঘরে চলে যায় বুড়ো মেয়ের কাছে। ইনাম গল্প করতে থাকে বুড়ো সাথে। বুড়ো ইনামকে বলে এ বাড়িতে এসে সে একটা কবরী গাছ লাগিয়েছিল। ফুলের জন্য নয়, বিচির জন্য, কবরী গাছের বিচিতে খুব ভালো বিষ হয়।
এ গল্পে মোট চারটি প্রত্যক্ষ চরিত্রকে আমরা পাইÑ ইনাম, ফেকু, সুহাস আর কোশো বুড়ো। বখে যাওয়া তিনটি তরুণকে গল্পকার দক্ষ হাতে চিত্রিত করেছেন। তাদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে তাদের হীন রুচি, অশিক্ষা, অপরাধপ্রবণতা ও ইন্দ্রিয়পরায়ণতা ষ্পষ্ট হয়েছে। কোশো বুড়ো সাম্প্রদায়িক কারণে জন্মভূমি ভারত ত্যাগ করে নিতান্ত অভাবের তাড়নায় আত্মসম্মানবোধ ও কাÐজ্ঞান হারিয়েছে। ভিন্ন পরিশে-প্রকৃতির পূর্ববঙ্গে এসে সে কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা করতে পারেনি। তাই নীতিবোধ ত্যাগ করে তরুণী কন্যার দেহকে তার পয়সা উপার্জনের অবলম্বন করতে হয়েছে।
ইনাম, ফেকু ও সুহাসের কথাবার্তার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয় তারা একটি নীতিহীন সমাজ থেকে উঠে এসেছে। অভিভাবকেরা তাদেরকে সুপথ দেখাতে পারেনি। এমনকি সেখানকার পাঠশালাগুলোও ব্যর্থ। বিদ্যালয় উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারে না। বেকারত্ব তরুণদের অপরাধের পথে ঠেলে দেয়। তাই ইনাম বলেছে, লেহাপড়ার মুহি পেচ্ছাপ”।

হাসান আজিজুল হক গল্পের শৈলীর ক্ষেত্রে এক অনন্য শিল্পী। তিনি নিখুঁত ও বিস্তৃতভাবে পরিবেশ-পরিপ্রেক্ষিত বর্ণনা করে গল্পকে পাঠকের সামনে দৃষ্টিগ্রাহ্য করে তোলেন। এ গল্পে তরুণেরা কোথায় যাচ্ছে তা প্রথমে না বলে শেষ দিকে রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। হাসানের বর্ণনার ভাষা নিপুণ ও দৃঢ়তাপূর্ণ। কোথাও কোথাও উপমা-রূপকের ব্যবহার ভাষাকে বিশেষ হৃদয়গ্রাহী করে তোলে। যেমন : ‘সেখানে শঙ্খচ’ড়ের মত দেখায় যে ধবল পথ’। ‘নেকড়ের মত ছায়া পড়ে শিয়ালটারও।’ এ গল্পে খুলনা বাগেরহাট এলাকার আঞ্চলিক ভাষা তিন তরুণকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে। তাদের ভাষার নমুনা : ক. ইস্কুলি লেহাপড়া বিয়োচ্ছে, বিটার শালার মাষ্টাররা
খ. কাজ কোয়ানে? জমি নেই খাঁটি, ট্যাহা নেই ব্যবসা করিÑ কি কলাডা করবানে?
গ. অ, খালি হাতে মজা মারতি আইছ?

বিষয়বস্তু, সমাজ-নিরীক্ষণ, চরিত্রনির্মাণ, ভাষা ও প্রকরণ-শৈলী বিচারে হাসান আজিজুল হকে আত্মজা ও একটি করবী গাছ নিঃসন্দেহে একটি শিল্পসফল ছোটগল্প। এমনকি এই গল্পটিকে সমগ্র বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প রূপে অভিহিত করলেও অত্যুক্তি হয় না।

Комментарии

Информация по комментариям в разработке