বিভীষণ এর প্রতি মেঘনাদ কবিতার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা।পর্ব-১।মাইকেল মধুসূদন দত্ত

Описание к видео বিভীষণ এর প্রতি মেঘনাদ কবিতার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা।পর্ব-১।মাইকেল মধুসূদন দত্ত

⁠​⁠​⁠​⁠‪@maithikbangla‬ #মাইকেল_মধুসূদন_দত্ত

বিভীষণ এর প্রতি মেঘনাদ কবিতার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা।

বিভীষণ এর প্রতি মেঘনাদ।মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের রেনেসাঁর বরপুত্র।
ঊনিশ শতকের রেনেসাঁস কিংবা রেনেসাঁ ফরাসি শব্দ। রেনেসাঁস কিংবা রেনেসাঁ শব্দের অর্থ হচ্ছে নবজাগরণ। রেনেসাঁ হচ্ছে নতুন চিন্তাধারা, নতুন ভাবধারা। এই নতুন চিন্তাধারার মূল কথা হচ্ছে যুক্তিবাদ এবং মানবতাবাদ।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত যুক্তি দিয়ে বাল্মিকী-রামায়ণকে নবমূল্য দান করেছেন।তাঁর যুক্তিতে বাল্মিকী-রামায়ণ এর রাম-লক্ষ্মণ কখনো নায়ক হতে পারে না।কারণ লক্ষ্মণ কাপুরুষের মতো পিছন থেকে গিয়ে নিরস্ত্র মেঘনাদকে অন্যায়যুদ্ধে হত্যা করেছে।একজন প্রকৃত যোদ্ধা কখনোই পিছন দিক থেকে নিরস্ত্র যোদ্ধাকে হত্যা করে না।যারা কাপুরষ, ব্যক্তিত্বহীন এবং মেরুদণ্ডহীন-শুধু তারা-ই
পিছনের দিক দিয়ে আক্রমণ করে এবং নিরস্ত্র যোদ্ধাকে হত্যা করে।একজন নায়ক হবে বীরোচিত এবং নায়কোচিত,আত্মশক্তিতে বলীয়ান আত্মনির্ভরশীল সক্রিয় চরিত্র হবে নায়ক।একজন নায়ক হবে কাজী নজরুল ইসলাম এর 'বিদ্রোহী' কবিতার আমিসত্তার মতো ভয়ঙ্কর এবং শুভঙ্কর রূপের অধিকারী আত্মশক্তিতে বিকশিত আত্মনিয়ন্ত্রিত আত্মনির্ভরশীল চরিত্র। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'বিলাসী 'গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় মৃত্যুঞ্জয়ী হতে না পারলেও মনজয়ী হতে পেরেছে
আত্মশক্তি এবং আত্মমুক্তির মাধ্যমে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'অপরিচিতা'গল্পের অনুপম নায়কত্বের ইমেজ সংকটে ভুগলেও গল্পের শেষপৃষ্ঠায় নায়কত্ব অর্জন করেছে আত্মযুক্তি,আত্মমুক্তি এবং সক্রিয়তার মাধ্যমে।পরনির্ভরশীলতা কখনোই নায়কের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।লক্ষ্মণ ছিলো দেবতাদের উপর নির্ভরশীল। দেবতাদের শেখানো কৌশলে, মায়াদেবীর
জাদুকরী বৈশিষ্ট্য এবং মনুষ্যত্বহীন বিশ্বাসঘাতক বিভীষণ এর সহায়তায় লক্ষ্মণ এর মতো অসমসাহসী বীরকে হত্যা করতে পেরেছে।লক্ষ্মণ নিজের বীরত্বে কিংবা শক্তিতে মেঘনাদকে হত্যা করে নি।যে মেঘনাদ এর হাতে দেবতাদের
রাজা ইন্দ্র পরাজিত হয়, সেই ইন্দ্রজিৎ
মেঘনাদকে কাপুরুষের ন্যায় মেরুদণ্ডহীন লক্ষ্মণ হত্যা করেছে-এটা যুক্তিবাদী মাইকেল মধুসূদন দত্ত মেনে নিতে পারেন নি।তাই তিনি তার মেঘনাবধ মহাকাব্যে বাল্মিকী-রামায়ণ এর রাম-লক্ষ্মণকে
ভিলেন/খলনায়ক/খারাপ রূপে দেখিয়েছেন। আর রাবণ-মেঘনাদকে যাবতীয় মানবীয় গুণের অধিকারী হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। লক্ষ্মণ জয়ী হয়েও নায়ক হতে পারে নি।অপরদিকে মেঘনাদ পরাজিত হয়েও নায়ক হয়েছে
মেঘনাদবধ মহাকাব্যে।মেঘনাদ অপরাজিত হয়েও অপরাজেয়।কারণ মেঘনাদ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে গিয়েছে, মাথা নত করে নি লক্ষ্মণ এর কাছে।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যে মেঘনাদ এবং তার বাবা রাবণকে মানবীয় গুণাবলির অধিকারী হিসেবে তুলে ধরেছেন।রাবণ রাজা হিসেবে শুধু একটি জাতি এবং দেশের রক্ষক-ই নন;
তিনি পরিবারের সদস্যদেরও রক্ষক।দোষগুণ মিলানো মানবীয় চরিত্র হচ্ছে রাবণ।মেঘনাদ শুধু বড় যোদ্ধা-ই নয়;সে দেশপ্রেমিক, দেশ-জাতি এবং নিজ বংশের প্রতি ছিল তার অপরিসীম শ্রদ্ধাবোধ।মেঘনাদ ছিলো প্রচণ্ড পিতৃভক্ত।মেঘনাদ তার বাবাকে ত্যাগ করে নি।মানুষ এর মতোই যেন 'মন্দ হোক,ভালো হোক-বাবা আমার বাবা।'

বিভীষণ মনুষ্যত্বহীন ধার্মিক। তিনি শুধু আপন ভাই রাবণ এর সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করেন নি,বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন দেশ-জাতির সঙ্গে, নিজ বংশের সঙ্গে।বিভীষণ এর এই বেঈমানী থেকেই তৈরি হয়েছে বাগধারা/প্রবাদ প্রবচন-"ঘরের শত্রু বিভীষণ "।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত বিভীষণ এর প্রতি মেঘনাদ কবিতার প্রাসঙ্গিকতা এবং উপযোগিতা রয়েছে এখনো।ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই দেশপ্রেমিক মেঘনাদ ফিরে এসেছে ১৯৭১ সালের দেশপ্রেমিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে-যাদের কাছে জীবন এর চেয়েও বড় ছিল জন্মভূমি।
আর বেঈমান বিভীষণকে দেখতে পাই
দেশবিরোধী বেঈমান রাজাকারদের মাঝে।দেশপ্রেমিক মেঘনাদকে খুঁজে পাই
নবাব সিরাজউদ্দৌলার মাঝে।আর বিভীষণকে খুঁজে পাই বেঈমান মীরজাফর এর মাঝে।

বোন শূর্পনখার অপমান এর বদলা নিতে রাক্ষসরাজ রাবণ রাম এর স্ত্রী সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।সীতাকে উদ্ধার এর জন্য রাবণ এর সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় রাম। রাম-রাবণ যুদ্ধে রাবণ এর পুত্র বীরবাহু এবং ভাই কুম্ভকর্ণ মারা যায়।এরপরে পুত্র মেঘনাদকে রাবণ তার সেনাবাহিনীর প্রধান করে।মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে অগ্নিদেবতার পূজা করে। লক্ষ্মণ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে চোরের মতো প্রবেশ করে।লক্ষ্মণকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে বিভীষণ।মায়াদেবীর সহায়তায় তারা মেঘনাদ এর যজ্ঞাগারে পৌঁছে যায়। নিরস্ত্র মেঘনাদ তখন অগ্নিদেবতার পূজারত।যুদ্ধে যাওয়ার আগে মেঘনাদ সবসময় অগ্নিদেবতার পূজা করতো।অগ্নির পূজা করে মেঘনাদ শক্তিতে অজেয় হতো।লক্ষ্মণ নিরস্ত্র মেঘনাদকে যুদ্ধ করার প্রস্তাব করে।মেঘনাদ বলে," আমি নিরস্ত্র এবং পূজারত"।এমতাবস্থায়
যুদ্ধ করা উচিত নয় লক্ষ্মণ এর।কিন্তু লক্ষ্মণ নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করে বসে।মেঘনাদ পূজার বিভিন্ন উপকরণ ছুড়তে থাকে লক্ষ্মণ এর দিকে।মায়াদেবী তার অদৃশ্য মায়াবলে/জাদুবলে লক্ষ্মণকে সুরক্ষিত রাখে।একপর্যায়ে মেঘনাদ দরজায় চাচা বিভীষণকে দেখে। মুহূর্তেই সব পরিষ্কার হয়ে যায় তার কাছে।মেঘনাদ বুঝতে পারে তার আপন চাচাই লক্ষ্মণকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসছে এবং তাকে হত্যা করার মূল পরিকল্পনাকারী।তখন মেঘনাদ চাচার কাছে গিয়ে তাঁদের পারিবারিক আভিজাত্য, বংশা মর্যাদা, জন্মভূমি এবং জাতীয়তাবাদ স্মরণ করিয়ে দিয়ে চাচা বিভীষণ এর বিবেক জাগ্রত করার চেষ্টা চালায়।এমনকি অসহায়-বিপন্ন মেঘনাদ তার দাদী অর্থাৎ নিকষার সতীত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চাচা বিভীষণ এর শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছে।কিন্তু মেঘনাদ এর সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং এক অন্যায়যুদ্ধে অসমসাহসী বীর মেঘনাদ কাপুরষ লক্ষ্মণ এর হাতে নিহত হয়।মাইকেল মধুসূদন দত্ত মেঘনাদকে মানবীয় গুণাবলির অধিকারী করে নায়কোচিত এবং বীরোচিত করে সৃষ্টি করেছেন।



#বিশ্ববিদ্যালয়_ভর্তি_প্রস্তুতি #একাদশ_শ্রেণি #বিসিএস #জব #চাকরির_খবর #দ্বাদশ #সাহিত্য

Комментарии

Информация по комментариям в разработке