ধর্মপদের পালি এবং বাংলা
ধম্মপদ (পালি; প্রাকৃত: धम्मपद; সংস্কৃত: धर्मपद #ধর্মপদ )
বৌদ্ধধর্মের সর্বাধিক পঠিত ও সর্বাধিক পরিচিত ধর্মগ্রন্থ। মূল ধম্মপদ গ্রন্থটি থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের পালি ধর্মগ্রন্থ খুদ্দক নিকায়-এর অন্তর্গত। ধম্মপদ পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ধর্মগ্রন্থ।
ধম্মপদের কিছু বাণী:
১. চিন্তা বা অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটে স্বভাব বা প্রকৃতিতে । যদি কেউ মন্দ অভিপ্রায় নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে দুঃখ তাকে অনুগমন করে । আর কেউ যদি সুচিন্তা নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে সুখ তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে । [ #যমকবগগোঃ ১-২]
২. আমাকে বকেছে, আমাকে মেরেছে, আমার জিনিষ কেড়ে নিয়েছে – এমন চিন্তা বা অভিযোগ যারা করে, ঘৃণা ও শত্রুতা তাদের চিরসঙ্গী হয় । আর যারা এরূপ চিন্তা করে না তাদের ঘৃণা ও শত্রুতা দ্রুত উপশম হয় । [যমকবগগোঃ ৩-৪]
৩. হিংসুক বা শত্রুর চেয়েও বিপদগামী চিত্ত মানুষের বেশী ক্ষতি করে । [চিত্তবগগোঃ ৪২]
৪. যার চিত্তে পাপ নাই, বাইরের পাপ তাকে স্পর্শ করতে পারে না । [পাপবগগোঃ ১২৪]
৫. সকল মলের নিকৃষ্ট মল হল অবিদ্যা । হে ধ্যানী ! এই মল বর্জন করে নির্মল হও । [মলবগগোঃ ২৪৩]
৬. অবিদ্যার কারণে যারা অসারকে সার আর সারকে অসার মনে করে তারা কখনো সত্যের সন্ধান পায় না । [যমকবগগোঃ ১১]
৭. সত্য সচেতনতা অসৃতের পথ আর মূর্খতা মৃতপুরীর পথ । সত্য সচেতন ব্যাক্তিরা অমর হন আর মূর্খরা তো মৃত সদৃশ । [ অপপামদবগগোঃ ২১]
৮. ভালো কাজ সব সময় কর । বারবার কর । মনকে সব সময় ভালো কাজে নিমগ্ন রাখো । সদাচরণই স্বর্গসুখের পথ । [পাপবগগোঃ ১১৮]
৯. মিথ্যাবাদী, ধর্মলংঘনকারী ও পরলোকে অবিশ্বাসী ব্যাক্তি যে কোন পাপ কাজ করতে পারে । [লোকবগগোঃ ১৭৬]
১০. সৎ কর্মে সদা তৎপর থাকো । পাপ থেকে মনকে নিবৃত্ত কর । ভালো কাজে দীর্ঘসূত্রিতা বা আলস্যের প্রশ্রয় দিলে মন পাপে লিপ্ত হবে । [পাপবগগোঃ ১১৬]
১১. আলস্যকে প্রশ্রয় দিওনা । ধর্মকে অনুসরণ কর । ইহলোক ও পরলোক – দুই লোকেই সূখে থাকবে । [লোকবগগোঃ ১৬৮]
১২. আলস্য ও অতিভোজনের দরুন স্হুলকায় নিদ্রালু হয়ে বিছানায় গড়াগড়ি দেয়া স্বভাবে পরিণত হলে সেই মূর্খের জীবনে দুঃখের পুনঃ পুনরাবৃত্তি ঘটবে । [ নাগবগগোঃ ৩২৫]
১৩. মূর্খরা আলস্যে নিপতিত হয় । আর প্রাজ্ঞরা সচেতন প্রয়াসে সৎ কর্মে [ইবাদতে] সদা তৎপর থাকেন । [অপপমাদবগগোঃ ২৬]
১৪. গন্ধহীন পুষ্পের ন্যায় কর্মবর্জিত সুন্দর বাক্যমালাও নিষ্ফল । [পুপকবগগোঃ ৫১]
১৫. অর্থহীন শব্দমালার সহস্র বাক্যের চেয়ে মন প্রশান্তকারী একটি অর্থবহ বাক্য উত্তম । [ সহসসবগগোঃ ১০০]
১৬. নিজেকে নিয়ন্ত্রণ কর । তারপর অন্যকে অনুশাসন কর । নিজে নিয়ন্ত্রিত হলে অন্যকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে । নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন । [অত্তবগগোঃ ১৫৯]
১৭. রাগের ন্যায় আগুন নাই , হিংসার ন্যায় গ্রাসকারক নাই, মোহের ন্যায় জাল নাই, আসক্তির ন্যায় খরস্রোতা নাই । [ মলবগগোঃ ২৫১]
১৮. কাম বা আসক্তি থেকে শোক ও ভয় জন্মে । কাম বা আসক্তি না থাকলে শোক ও ভয় থাকে না । [পিয়বগগোঃ ২১৫-২১৬]
১৯. যারা সদা সচেতন, দিবারাত্র জ্ঞান অনুশীলন করেন , যারা নির্বাণ লাভের প্রয়াসী তাদের সকল আসক্তি বিনষ্ট হয় । [কোধবগগোঃ ২২৬]
২০. মার্গ বা পথের মধ্যে আর্য অস্টাঙ্গ শ্রেষ্ঠ, সত্যের মধ্যে চতুরার্য সত্য শ্রেষ্ঠ, গুনের মধ্যে নিরাসক্তই শ্রেষ্ঠ, আর মানুষের মধ্যে প্রাজ্ঞই শ্রেষ্ঠ । [মগগবগগোঃ ২৭৩]
২১. যিনি অস্হির চিত্ত, যিনি সত্যধর্ম অবগত নন, যার মানসিক প্রসন্নতা নেই, তিনি কখনো প্রাজ্ঞ হতে পারেন না । [ চিত্তবগগোঃ ৩৮]
২২. উচ্ছৃংখল ও মূর্খ ব্যাক্তির শত বছরের জীবনের চেয়ে প্রাজ্ঞ ও ধ্যানীর একদিনের জীবন উত্তম । [সহসসবগগোঃ ১১১]
২৩. প্রাজ্ঞ ব্যাক্তি কখনো নিন্দা বা প্রশংসায় প্রভাবিত হন না [পন্ডিতবগগোঃ ৮১]
২৪. ওঠার সময় যে ওঠেনা, যৌবনের শক্তি থাকতেও আলস্যপরায়ণ, সংকল্প ও চিন্তায় আবসাদগ্রস্ত- এমন অলস ও দুর্বলচিত্ত প্রজ্ঞার সন্ধান পায় না ।
২৫. শত্রুতা দ্বারা কখনো শত্রুতা বিনাশ করা যায় না । মিত্রতা দ্বারাই শত্রুতার নিরসন হয় । [ যমকবগগোঃ ৫]
২৬. যে ব্যাক্তি অন্যকে দুঃখ দিয়ে নিজে সুখ পেতে চায়, সে ঘৃণার আবর্ত থেকে মুক্ত হতে পারে না [পকিন্নকবগগোঃ ২৯১]
২৭. সবাই জীবন ভালোবাসে । সবাইকে নিজের মতো ভাবো । কাউকে কখনো আঘাত বা কষ্ট দেবে না । [দন্ডবগগোঃ ১৩০]
ধর্মপদের পালি এবং বাংলা ll DHAMMAPADA PALI BANGLA ll S. LOKAJIT THERO
২৮. কাউকে কটু কথা বলবে না । কারণ সে-ও কটু প্রতুত্তর দিতে পারে । উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় তোমার জন্যও কষ্টদায়ক হবে । দন্ডের প্রতিদন্ড তোমাকেও স্পর্শ করবে । [দন্ডবগগোঃ ১৩৩]
২৯. রণক্ষেত্রের সহস্রযোদ্ধার ওপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্নজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ । [সহসসবগগোঃ ১০৩]
৩০. কোন পাপকেই ক্ষুদ্র মনে কর না । ক্ষ্রুদ্র ক্ষ্রুদ্র পাপ-ই জমা হতে হতে মূর্খের পাপের ভান্ড পূর্ণ করে ফেলে । [পাপবগগোঃ ১২১]
৩১. পাপী ইহলোক ও পরলোক – উভয়লোকে মনস্তাপে দগ্ধ হয় । অপরদিকে পূণ্যবান উভয়লোকেই পরমমানন্দ লাভ করেন । [যমকবগগোঃ ১৭-১৮]
৩২. পাপের প্রতিফল না পাওয়া পর্যন্ত মূর্খরা পাপকেই অমৃত বলে মনে করে । মনস্তাপ শুরু হয় পাপের ফল পাওয়ার পর । [ বালবগগোঃ ৬৯]
৩৩. ক্রোধকে ক্ষমা দ্বারা, অন্যায়কে ন্যায় দ্বারা , কৃপণকে দান দ্বারা, মিথ্যাকে সত্য দ্বারা জয় কর । [কোধবগগোঃ ২২৩]
৩৪. ভালো বা সমমনা সঙ্গী না পেলে একাকী ভ্রমণ উত্তম । মূর্খ সংসর্গ সবসময় বর্জনীয় [বালবগগোঃ ৬১]
৩৫. মূর্খরা ‘আমার পুত্র, আমার অর্থ, আমার ধন’ এই চিন্তা করে যন্ত্রণা ভোগ করে । যখন সে নিজেই নিজের না তখন পৃত্র বা ধন তার হয় কিভাবে ? [বালবগগোঃ ৬২]
৩৬. বর্ষাকালে এখানে , শীত-গ্রীষ্মে ওখানে বাস করবো- মূর্খরা এভাবেই চিন্তা করে । শুধু জানে না জীবন কখন কোথায় শেষ হয়ে যাবে । [মগগবগগোঃ ২৮৬]
৩৭. লোভ হচ্ছে কঠিনতম রোগ, সংস্কার চরম দুঃখ, সুস্বাস্হ্য পরম লাভ , সন্তুষ্টি পরম ধন, বিশ্বাসই পরম বন্ধু, নির্বাণ পরম সুখ । [সুখবগগোঃ ২০৩-২০৪]
৩৮. ধর্মশিক্ষা দান সর্বোত্তম দান, ধর্মের আলো সর্বোত্তম আলো, ধর্ম পালন সর্বোত্তম আনন্দ, আসক্তির বিনাশ সর্বদুঃখে বিজয় । [তনহাবগগোঃ ৩৫৪]
#TheDhammapadaverses
Информация по комментариям в разработке