Скачать или смотреть পর্ব ০৬ | ইউরোপে নারীদের বঞ্চনার ইতিহাস ও নারী আন্দোলনের উৎপত্তি | সংকটে নারীত্ব | Raindrops Media

মানবজাতির ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এত দীর্ঘ ইতিহাসের দিকে না গিয়ে, আমরা শুরু করব, একটি যুগসন্ধিক্ষণ বা ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট থেকে, আর সেটা হোলো যখন থেকে ইউরোপে খ্রিস্টধর্মকে বাদ দিয়ে, মানুষের বানানো ‘ধর্ম’ দিয়ে রাষ্ট্র, সমাজ আর পরিবার পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হোলো, এই ধর্মের নাম সেকুলারিজম।

ইউরোপে কীভাবে এই ধর্মের প্রচার-প্রসার হোলো?

মধ্যযুগে ইউরোপের প্রধান ধর্ম ছিল খ্রিস্টধর্ম। সায়্যিদিনা ঈসা আলাইহিসসালাম এর আগমন ঘটেছিল ফিলিস্তিনে। ইহুদীরা রোমানদের সাথে যোগসাজশে ঈসাকে হত্যার চক্রান্ত করলো। কিন্তু তাদের চক্রান্ত সফল হয় নি, আল্লাহ তাআলা ঈসাকে আসমানে উঠিয়ে নিলেন। একসময় ইউরোপে খ্রিস্টধর্ম প্রবেশ করলো ঠিকই, কিন্তু সেই খ্রিস্টধর্ম ছিল সেন্ট পল কর্তৃক বিকৃত খ্রিস্টধর্ম, যে ধর্মে তাওহীদ নেই, ঈসার প্রচারিত ধর্মের কোনো মিল নেই। খ্রিস্টধর্ম আসার আগে ইউরোপের মানুষ ছিল পৌত্তলিক, প্রকৃতিপূজারী। আর ইউরোপে যখন প্রবেশ করলো সেটাও রূপান্তরিত হয়ে গেছে শিরকের ধর্মে।

খ্রিস্টানরা সংখ্যা ও ক্ষমতায় বাড়লেও দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়। বিভিন্ন খ্রিস্টান দলের মধ্যে লাগাতার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতে থাকে বছরের পর বছর। সংঘাত, বিরোধ আর ধর্মের অপব্যবহারে বিরক্ত-অতিষ্ট হয়ে ইউরোপের লোকেরা খ্রিস্টধর্মের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিল, জনপরিসর থেকে ধর্মের প্রভাব, শাসন ও প্রয়োগকে বিলুপ্ত এবং ধর্মীয় বিধানগুলোকে মান্য করার বিষয়টা ব্যক্তিগত ইচ্ছার অধীন করে দেবে। এভাবে ইউরোপ থেকে ধর্মের প্রভাব কমতে শুরু করে, ধর্ম হয়ে ওঠে এক আচারসর্বস্ব বিশ্বাসের নাম যার সত্যিকারের কোনো প্রভাব মানুষের কাজে-কর্মে-চিন্তায় আর থাকলো না। এভাবে ধর্ম খুবই সীমিত গন্ডির মধ্যে বন্দী হয়ে গেলো।

অপরদিকে মানব-জীবনের বাকি বিষয়গুলো পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিল মানুষ নিজেই। ধর্মগ্রন্থ বাদ দিয়ে তারা নিজেদের চিন্তা,যুক্তি,বুদ্ধি থেকে নিজেদের জীবন ও দুনিয়া পরিচালনা করার ‘নয়া পদ্ধতি’ চালু হলো। এটাই হয়ে উঠলো ইউরোপের নতুন ধর্ম সেকুলারিজম।

নীতি, নৈতিকতা ও চিন্তাকাঠামোর এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ঘটনাকে নাম দেওয়া হোলো এনলাইটেনমেন্ট বা রেঁনেসা। মানে- অন্ধকারের অবসান, নবজাগরণ ইত্যাদি। এই ঘটনা ঘটেছিল ইংরেজি সপ্ত এবং অষ্টাদশ শতাব্দী জুড়ে। সেই সময়ের চিন্তাবিদ-দার্শনিক-শিক্ষাবিদদের মধ্যে আলোচনা চলতো জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। নারীদের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে শুরু করলো আমূলভাবে। এই রেঁনেসার আগে- এতকাল ধরে সমাজে নারীদের ভূমিকা নির্ধারিত হয়েছে, ধর্মীয় বই পুস্তকের মাধ্যমে বা চার্চের মাধ্যমে। কিন্তু এখন যেহেতু তারা ধর্মীয় বিধানকে দূরে সরিয়ে রাখতে শুরু করেছে দুনিয়ার জীবন থেকে, তাই এই নতুন পটভূমিতে পরিবারে-সমাজে-রাষ্ট্রে তথা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নারীদের ভূমিকা কি হবে? এই নিয়ে আলাপ আর তর্ক-বিতর্ক শুরু হলো।

সেখান থেকেই আলোচনা শুরু করা যাক।
বিস্তারিত শুনুন, অডিওতে।