Скачать или смотреть Nai Rash Nai || Suchetana De || Rabindra Sangeet

'নাই রস নাই', গানটি রবীন্দ্রনাথের ৬৪ বছর বয়সের রচনা। রচনাস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পেলাম না। তবে গানের বাণীতে গ্রীষ্মের যে রূপ বর্ণনা আছে তাতে যেন মনে হয় যেন শান্তিনিকেতনে কোনো এক নিঃসঙ্গ দুপুরে এই গান তিনি লেখেছিলেন। মনে পড়ে যায় কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনা। 'পিতৃস্মৃতি'র ' শান্তিনিকেতনে গ্রীষ্মের একটি ছুটি ' শীর্ষক রচনা থেকে সেই বর্ণনার কিছু কিছু আপনাদের বলি।
" গ্রীষ্মের ছুটি এসে পড়ল। সহপাঠীরা সবাই বাড়ি চলে গেছে। ছেলেদের কলরব হঠাৎ বন্ধ হয়ে গিয়ে আশ্রম নিস্তব্ধ, নিঝুম। আমার ভাইপো দিনেন্দ্রনাথ, বন্ধু সন্তোষ মজুমদার আর আমি কেবল পড়ে আছি সেই ভাঙা হাটে। গ্রীষ্মের লম্বা ছুটির দীর্ঘ অবসর কী করে কাটাব ভাবছি। বৈশাখ-জৈষ্ঠের দারুণ গরমে নিঃসঙ্গ দিনগুলির কথা ভেবে দুশ্চিন্তা হতে লাগল। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই আশ্রমের নির্জনতা আর পীড়া দিল না, সঙ্গীদের অভাব আর কষ্টকর বোধ হল না। হট্টগোলের মধ্যে যেসব ঘটনা তুচ্ছ বলে অবহেলা করেছি, যে সব জিনিস নজর দিয়ে দেখবার অবকাশ পাই নি এতদিন, এখন সেগুলির প্রকাশ দেখে মন পুলকিত হয়ে উঠল, আরো ভালো করে দেখবার জন্য, ভালো করে বোঝবার জন্য আগ্রহ হল।
প্রত্যেকদিন প্রত্যুষে ঘণ্টার শব্দে ঘুম ভেঙেছে, পূবের মাঠের শেষে তালের শ্রেণীর ফাঁকে ফাঁকে তখন আকাশে সবে একটু রঙ ধরেছে। রাত্রির অন্ধকার অপসারিত করে সূর্যোদয় প্রত্যহ যে আশা নিয়ে আমাদের কাছে এসেছে তা কি তখন আমরা গ্রহণ করেছি? ভোরবেলার যে মাধুর্য, যে শান্তি তা কি মনের মধ্যে অনুভব করেছি? লোকের কোলাহলের মধ্যে প্রকৃতির সৌন্দর্য আমরা দেখেও দেখি না। "

গানের সঞ্চারীর জায়গাটি শোনার সময় আরো মনে পরে কবিপুত্রের বর্ণনার কিছু অংশ " দুপুরের পর একদিন লাইব্রেরির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। বৈশাখের রোদ ঝাঁ ঝাঁ করছে। উত্তপ্ত মাটি থেকে গরম হাওয়া কাঁপতে কাঁপতে উপর দিকে উঠছে। কোথাও কিছু নেই, হঠাৎ মাঝে মাঝে ঘূর্ণি এসে মাঠের জঞ্জাল কুড়িয়ে নিয়ে আকাশে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। ধূ ধূ করছে মাঠ, কোথাও কোনো জনপ্রাণী নেই, কেবল ধানের খেতে কয়েকটি নির্জীব ভেড়া সবুজ ঘাসের বৃথা সন্ধানে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে। গ্রীষ্মের এই রুদ্রমূর্তি একদৃশ্যে দেখে বেড়াচ্ছি।"

এবার গানের সুরের প্রসঙ্গে বলি। মোটামুটি ভাবে গানটি মূলতান রাগাশ্রিত বলা চলে। তবে শুদ্ধ ধৈবত, শুদ্ধ মধ্যমের ব্যবহার তাকে আলাদা করেছে। রাগরাগিনীতে শুদ্ধস্বরের আধিক্য রবীন্দ্রনাথের গানে প্রায়ই দেখা যায়। এই বিষয়টি বিষ্ণুপুর ঘরাণা থেকে তিনি পেয়েছিলেন বলা যায়। জোড়াসাঁকোর সঙ্গীত গুরুরা সকলেই বিষ্ণুপুরের ধ্রুপদী। আড়াল আবডাল থেকে তিনি যা শিখেছিলেন সেই সুরের চয়ন রয়ে গিয়েছিল শেষ জীবন পর্যন্ত। তাঁর সারাজীবনের সুরের ব্যবহারিক বিবর্তন নিয়ে পরপর গবেষণা করলে এই ধারাবাহিকতা আরো স্পষ্ট হয়ে আসে।
.............................