নাগলিঙ্গম বা হাতির জোলাপ এক প্রকার বৃক্ষ এবং ফুল। এই গাছের ইংরেজি নাম 'cannonball tree' এবং বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis, যা Lecythidaceae পরিবারভুক্ত। এর আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। দুই তিন হাজার বছর ধরে ভারতে জন্মানোর কারণে অনেকে এ বৃক্ষটির উত্পত্তিস্থল ভারতকেও বিবেচনা করে থাকেন।
নাগলিঙ্গম ৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণভাবে ৮-৩১ সেন্টিমিটার, কিন্তু ৫৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বায় পৌঁছতে পারে। পাতার রং সবুজ, প্রায় কালো, কিন্তু অত্যন্ত উজ্জ্বল। গ্রীষ্মকালে এদের পত্র মোচন হয়। উল্লেখ্য, নাগেশ্বর, নাগকেশর ও নাগলিঙ্গম তিনটি ভিন্ন প্রজাতি। এই গাছে ফুল ধরার পর বেলের মতো গোল গোল ফল ধরে। এগুলো হাতির খুবই প্রিয় খাবার। এজন্য এর অন্য নাম হাতির জোলাপ গাছ।
নাগলিঙ্গমের ফুল, বীজ ও জন্ম সম্পাদনা
এ বৃক্ষ বহু শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট এবং বড় বড় ডালে ফুলের মঞ্জুরি ধরে। কখনো কখনো সরা বৃক্ষের কান্ড থেকেই ফুল বের হয়। ফুলগুলো কমলা, উজ্জ্বল লাল গোলাপি রঙের, ঊর্ধ্বমুখী, ছয়টি পাপড়িযুক্ত এবং তিন মিটার দীর্ঘ মঞ্জুরিতে ফুটে থাকে। একটি বৃক্ষে প্রায় এক হাজারটি ফুল ধরতে পারে। ফুল দৈর্ঘে ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পাপড়ি গোলাকৃতি, বাঁকানো, মাংসল এবং ভেতর ও বাইরে যথাক্রমে গাঢ় গোলাপী ও পান্ডুর হলুদ। নাগলিঙ্গমের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর পরাগচক্র সাপের ফণারমত বাঁকানো এবং উদ্যত ভঙ্গি। রাতের বেলায় ফুল থেকে তীব্র সুগন্ধ বের হয় যা সকাল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। সারা গ্রীষ্মকাল ধরেই নাগলিঙ্গম ফুল ফোটে। ফল ক্যানন বলের মত অর্থাৎ দীর্ঘ, গোলাকার, ভারি এবং ২৫ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। নয় মাসের মধ্যে ফল পরিপক্ক হয়। ফল মাটিতে পড়লে মৃদু শব্দে ফল ফেটে যায়, এবং বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধের সৃষ্টি করে। ফলগুলো কখনো কখনো পরিপক্ক হতে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ফলগুলো গাছের মত শক্ত। প্রতিটি ফল থেকে প্রায় ৬৫টি বীজ পাওয়া যায়। বীজগুলোতে আলাদা আলাদা ফুলের মত আস্তরণ থাকে যা এদেরকে প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। পঁচা ফলের গন্ধ অত্যন্ত উগ্র, কুৎসিত। বীজ থেকে সহজেই এ বৃক্ষেও চারা জন্মে।
এর ফল ফুটবল আকারের এবং বাদামি-খয়েরি বর্ণের। এটি পৃথিবীর অনেক জায়গায় চাষ করা হয়।
বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, নটর ডেম কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ, টঙ্গী, শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট, বরিশালের বিএম কলেজ, ময়মনসিংহের মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, গফরগাঁও সরকারি কলেজ, নওগাঁ জেলার হাট নওগাঁ ঈদগা মাঠ,চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এণ্ড কলেজ, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, অযাচক আশ্রম রহিমপুর, কুমিল্লা, যশোরসহ সারাদেশে অনধিক ৫০টি গাছ রয়েছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত এই উদ্ভিদটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। দক্ষিণ আমেরিকায় এ বৃক্ষেও কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। তবে সুগন্ধী ফুলের গাছ হিসেবে বাগানে বা বাড়ীর আঙ্গিণায় রোপন করা হয়।
Информация по комментариям в разработке