Скачать или смотреть কিয়ামাত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার আগে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) অসংখ্য আলামত (নিদর্শন) বর্ণনা করে গেছেন।

কিয়ামাত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার আগে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) অসংখ্য আলামত (নিদর্শন) বা চিহ্ন বর্ণনা করে গেছেন। এই নিদর্শনগুলো প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত—ছোট আলামত (আশরাত আস-সা'আত আস-সুগরা) এবং বড় আলামত (আশরাত আস-সা'আত আল-কুবরা)।
ছোট আলামতগুলোর মধ্যে অনেকগুলো ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং বাকিগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। বড় আলামতগুলো কিয়ামতের একেবারে নিকটবর্তী সময়ে পরপর প্রকাশ পাবে।
নিচে কিয়ামতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
১. ছোট আলামতসমূহ (যা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে)
ছোট আলামতগুলোর সংখ্যা অনেক এবং সময়ের সাথে সাথে এর ব্যাপকতা বাড়ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর আগমন: এটি কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত। তিনি শেষ নবী, তাই তাঁর আগমনই প্রমাণ করে যে কিয়ামত আসন্ন।
ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব ও অজ্ঞতার বিস্তার: ইলম (জ্ঞান) তুলে নেওয়া হবে এবং অজ্ঞতা, মূর্খতা ও অশ্লীলতা সমাজে ছড়িয়ে পড়বে।
হত্যা ও রক্তপাতের আধিক্য: সমাজে খুন, হত্যা, রক্তপাতের ঘটনা বৃদ্ধি পাবে, এমনকি হত্যাকারীও জানবে না সে কেন হত্যা করছে।
সময়ের দ্রুত চলে যাওয়া: মনে হবে যেন সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
দুনিয়ার সম্পদের প্রাচুর্য: সম্পদ ও বিত্তের এমন প্রাচুর্য হবে যে, যাকাত নেওয়ার মতো লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা: মানুষ বড় বড় এবং সুউচ্চ অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করবে। হাদিসে 'নগ্ন পদবিশিষ্ট ও বস্ত্রহীন মেষপালক'দের অট্টালিকা নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে।
অসৎ লোকের সম্মান ও সৎ লোকের অসম্মান: আমানতদারিতা কমে যাবে। মিথ্যাবাদী ও অসৎ লোকেরা সমাজে নেতৃত্ব ও মর্যাদা লাভ করবে, আর সৎ ও সত্যবাদীদেরকে মিথ্যাবাদী ও অযোগ্য হিসেবে দেখা হবে।
ফিতনা-ফাসাদের বিস্তার: বিভিন্ন ধরনের গোলযোগ, বিশৃঙ্খলা ও ফিতনা ব্যাপক আকার ধারণ করবে।
বাদ্যযন্ত্র, ব্যভিচার ও মদ্যপানের ব্যাপকতা: সমাজের সর্বত্র গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র, ব্যভিচার এবং মদ্যপানের প্রসার ঘটবে।
নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি: পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।
২. বড় আলামতসমূহ (যা কিয়ামতের একেবারে নিকটবর্তী সময়ে প্রকাশ পাবে)
কিয়ামতের একেবারে নিকটবর্তী সময়ে এই দশটি বড় আলামত একের পর এক প্রকাশিত হতে থাকবে। এই দশটি আলামত হলো:
১. ইমাম মাহদীর (আঃ) আগমন: সর্বশেষ সময়ে মহানবী (সাঃ)-এর বংশ থেকে ইমাম মাহদী নামক একজন ন্যায়পরায়ণ নেতার আগমন ঘটবে, যিনি মুসলমানদের নেতৃত্ব দেবেন এবং পৃথিবীতে ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।
২. দাজ্জালের আবির্ভাব: মাহদীর আগমনের পর, মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় ফিতনা হিসেবে মিথ্যুক মাসীহ দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। সে নিজেকে খোদা হিসেবে দাবি করবে এবং অলৌকিক কিছু কাজ দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে।
৩. ঈসা (আঃ)-এর পুনঃআগমন: দাজ্জালের ফিতনা চরম আকার ধারণ করলে, মহান আল্লাহ'র নির্দেশে ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আকাশ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসবেন। তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং পৃথিবীতে শান্তি ও সুবিচার ফিরিয়ে আনবেন।
৪. ইয়াজুজ ও মাজুজের উত্থান: ঈসা (আঃ)-এর সময়ে, পৃথিবীর দু'টি ধ্বংসকারী জাতি ইয়াজুজ ও মাজুজ বাঁধ ভেঙে বের হয়ে আসবে এবং পৃথিবীতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। মহান আল্লাহর আদেশে তারা ধ্বংস হবে।
৫. তিনটি স্থানে ভূমিধ্বস: পৃথিবীর পূর্ব, পশ্চিম এবং আরব উপদ্বীপে— এই তিনটি স্থানে বিশাল ভূমিধ্বস হবে।
৬. আকাশে ধোঁয়ার আগমন (দুখ'আন): আকাশ থেকে এমন এক ধোঁয়া নেমে আসবে যা চল্লিশ দিন পর্যন্ত থাকবে এবং কাফিরদের জন্য তা হবে এক কঠিন শাস্তি।
৭. দাব্বাতুল আরদ-এর আগমন: ভূমি থেকে একটি বিশেষ প্রাণীর (দাব্বাতুল আরদ) আবির্ভাব হবে, যা মানুষের সাথে কথা বলবে। এটি মুমিন ও কাফিরের মাঝে পার্থক্য চিহ্নিত করে দেবে।
৮. পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়: এটি সবচেয়ে বড় আলামতগুলোর মধ্যে অন্যতম। একদিন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে। এই ঘটনার পর তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে এবং নতুন করে কারো ঈমান আনা আর গ্রহণযোগ্য হবে না।
৯. ইয়েমেন থেকে আগুন বের হওয়া: কিয়ামতের সর্বশেষ আলামত হিসেবে ইয়েমেন থেকে এক বিশাল আগুন বের হয়ে লোকজনকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। এই আগুন মানুষকে তাদের হাশরের ময়দানের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে।
১০. ঈমানদারদের মৃত্যু: উপরোক্ত বড় আলামতগুলো প্রকাশের পর এক মৃদু বাতাস প্রবাহিত হবে, যা সকল ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের রূহ কবজ করে নেবে। এরপর পৃথিবীতে একমাত্র নিকৃষ্ট ও খারাপ লোকেরা বেঁচে থাকবে, যাদের ওপর কিয়ামত সংঘটিত হবে।
এই আলামতগুলো মূলত মানুষকে পরকাল এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় করতে এবং সৎকাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সতর্ক করে।

#subscribe #quran #islamic #history #viralvideo