জেনারেল লাইন থেকে দ্বীনে আসা বাড়ছে। কিন্তু কেন জানি বেশিরভাগ শুধু কসমেটিক চেইঞ্জে আটকে যাচ্ছে।
এটা নিজেদের ভেতরগত ইচ্ছার অভাব কিংবা উপযুক্ত তরবিয়তকারি মুরুব্বী না থাকা।
উভয় কারণেই হতে পারে।
দ্বীনের জানাশোনা কিংবা বুঝ পেতে হয়ত বেশি কিছু লাগে না।
লাগে শুধু ইচ্ছা।
কিন্তু পূর্বের জাহেলিয়াত বের করে দিয়ে সেখানে দ্বীনি মেজাজ, আচরণ বসাতে চেষ্টা করা লাগে আরো বেশি।
আমি আর হারাম ও গুনাহের কাজ করবো না, সিদ্ধান্তটা নিতে হয় একবারই।
কিন্তু ইচ্ছার সাথে সাথে নফসের বিরুদ্ধাচরণ করে গুনাহের আকর্ষণ থেকে মুক্ত হতে *সংগ্রাম করা লাগে প্রতিদিন*। নাইলে খোলস পালটানোই হবে।
আগে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম বিভিন্ন হারাম টপিক নিয়ে। এখন কিছু দ্বীনি ভাইদের সাথে আড্ডা দেই অমুক তমুক ভাই আর শায়খের সমালোচনা নিয়ে। সাথে সেই আগের মত খানাপিনা থাকে। পকেটে দুটো টাকা জমা হলে আগে খেয়ে উড়াতাম, এখনো তাইই করি।
সালাম, জাজাকাল্লাহ ইত্যাদি কিছু টার্ম শিখলাম, দাড়ি, টুপি, বোরকা নিকাব শুরু করলাম, এরপর যদি ভাবি ব্যাস, আমি তো দ্বীনে ঢুকে গেছি তাহলে বড় ভুল হবে।
আগে ডজন ডজন জামা কিনতাম নিজের স্মার্টনেস আর সৌন্দর্য প্রকাশ করতে, আর এখন ডজন ডজন নতুন নতুন ডিজাইনের বোরকা কিনি (নিজেকে বুঝ দেই পর্দা করতে, আসলে মাকসাদ নিজের সৌন্দর্য সচেতনতা, স্মার্টনেস আর আভিজাত্য প্রকাশ করা)। তাহলে তেমন চেইন্জ আমার মধ্যে আসেনি বলতে হবে।
আগে বন্ধু বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিতাম আর এখন দ্বীনি বোনদের সাথে গেট টুগেদার করি।
হৈ হুল্লোড় আর আমোদ ফুর্তি আর অপচয়ের সাথে পালন করি।
আসলে কোন চেইন্জ আসেনি আমার মধ্যে।
আগে নিজেকে ঢাবিয়ান, বুয়েটিয়ান পরিচয় দিয়ে নিজের পরিচয়কে মহান ও বড় করে দেখাতে চাইতাম, এখন অমুকিয়ান, তমুকিয়ান লাগিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ দেখাতে চাই।
অথচ আমরা জানি শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি একমাত্র তাকওয়া আর সত্যিকার মুত্তাকী নিজের আত্মগরিমা প্রকাশে লজ্জা পায়।
"দ্বীনে আসা" এরকম হালকা কিছু কাজে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগে এমন ছিল না। আগে একটা ছেলে দ্বীনের পথে আসলে আমূল বদলে যেত।
আচার আচরণ, ইবাদত, মুয়ামালাত সবকিছুতে দ্বীনের রুহ পাওয়া যেত। এখন তেমনটা কমই দেখা যায়।
আমাদের মনে রাখা উচিত,
একদিনের এক সিদ্ধান্তে কয়েক শত জিবি গান, মুভি ডিলিট করে দেয়া, নিজের বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দেয়া, এতকালের আচরিত পোশাক পাল্টে বোরকা নিকাব শুরু করা, সুন্নতি দাড়ি রেখে দেয়া অনেক কঠিন কাজ বটে। তবে এর চাইতে কঠিন হলো এরপরের সময়টা। যেখানে প্রতিদিন পরীক্ষা আসতেই থাকবে একের পর এক।
এজন্য দরকার
নিজের উদ্দেশ্যকে স্পষ্টভাবে জেনে নেয়া। যার মনজিল হবে আখিরাত, যার কামনা দুনিয়ার কারো না, শুধু রবের সন্তুষ্টি, এবং যে খুব ভালোভাবে নিজের গন্তব্য জানে, তার জন্য স্থির থাকা সহজ হবে। কিন্তু যে দ্বীনি লেবাস, আচরণ আর আদব গ্রহণ করেছে, কিন্তু উদ্দেশ্য তার এরূপ ক্রিস্টাল ক্লিয়ার নয়, সে পড়ে যাবে ফিতনার ব্ল্যাক হোলে।
আল্লাহ আমাদেরকে নিজেদের আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব বোঝার তাওফীক দিন। দ্বীনের সত্যিকার প্রাণ ধারণ করার তাওফীক দিন। দ্বীনের উপর স্থিরতা ও উত্তরোত্তর উন্নতির পথে চেষ্টা সাধনা অব্যাহত রাখার তাওফীক দিন।
আমাদের বোঝার তাওফীক দিন, "দ্বীনে আসা" এটা একটা বুলেট ছোড়ার মত one-shot প্রসেস না,
বরং এটা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলমান একটা আমলের নাম।
~ মুহাম্মাদ আনওয়ার
Информация по комментариям в разработке