গান-বাজনার ব্যাপক বিস্তারের ফলে মানুষের অন্তরে এই পরিমাণ নিফাক সৃষ্টি হয়েছে যে, সাহাবীদের ইসলামকে এ যুগে অচল মনে করা হচ্ছে এবং গান-বাদ্য, নারী-পুরুষের মেলামেশা ইত্যাদিকে হালাল মনে করা হচ্ছে।
সহীহ বুখারীতে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে।-সহীহ বুখারী হাদীস : ৫৫৯০
মুসনাদে আহমদের হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
আল্লাহ তাআলা আমাকে মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন এবং বাদ্যযন্ত্র, ক্রুশ ও জাহেলি প্রথা বিলোপসাধনের নির্দেশ দিয়েছেন।
হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুল (স) ইরশাদ করেছেন যে, মহান আল্লাহ আমাকে জগদ্বাসীর জন্য রহমত ও বরকত এবং হিদায়ত ও পথপ্রদর্শক হিসাবে প্রেরণ করেছেন। আর আমার সেই প্ররাক্রমশালী প্রভু আমাকে সর্বপ্রকারের ঢোল তবলা, যাবতীয় বাদ্যযন্ত্র, মূর্তিপূজা, শূলি ও ক্রুশ থেকে এবং জাহেলী যুগের কুপ্রথা ও কুসংস্কার নির্মূল ও ধংস সাধনের নির্দেশ দিয়েছেন।
(ইমাম আহমাদ, সূত্র : মিশকাতুল মাসাবিহ, ২/৩১৮)
দু’একটি ক্ষেত্রে শুধু দফ বাজানোর বিষয়টি ব্যতিক্রম থাকলেও যে কোনো বাদ্যযন্ত্রই হারাম। রাসূলুল্লাহ সা:-এর হাদীস এবং সাহাবীদের বাস্তব আমল তা প্রমাণ করে।
বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ রাহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন। কিছু দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে’! এখনো কি আওয়াজ শুনছ? আমি বললাম হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন। [মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪৫৩৫; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪৯২৪] বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. থেকেও এমন একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৯০১]
বাজনাদার নুপুর ও ঘুঙুরের আওয়াজও সাহাবায়ে কেরাম বরদাশত করতেন না। তাহলে গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রশ্নই কি অবান্তর নয়?
নাসাঈ ও সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে, একদিন হযরত আয়েশা রা.-এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে কোনো বালিকা আসলে আয়েশা রা. বললেন, খবরদার, তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।-সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদীস : ৫২৩৭
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।-সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসুল সা: এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহু রাববুল আলামিন হারাম করে দিয়েছেন আমার উম্মতের উপর মদপান করা, জুয়া খেলা,বাশিঁ বাজানো,তবলা ও বাদ্যযন্ত্র। আমার জন্য বৃদ্ধি করে দিয়েছেন বিতিরের নামাজ। বিখ্যাত মুহদ্দিস ইয়াজিদ বলেন, হাদিসে কাইনান বলতে বাদ্যযন্ত্রকে বুঝানো হয়েছে।
(মুসনদে আহমদ ২য় খন্ড পৃ:১৬৫)
হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , রাসুলে খোদা (সা)এরশাদ করেন আমি প্রেরিত হয়েছি বাদ্যযন্ত্রকে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য।অতঃপর রাসুল (সা) বলেন, গায়ক গায়িকার জীবিকা (গানের মাধ্যমে) হারাম এবং ব্যাবিচারের জীবিকা হারাম। যে শরীর হারাম দ্বারা গঠিত তাকে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
(কানজুল উম্মাল ১৫তম খন্ড পৃষ্ঠা ২২৬)
মাজহাবের দলীল:
ইমাম আবু ইউসুফ , ইমাম মুহাম্মদ , ইমাম শাফী , ইমাম মালিক এবং ইমাম আহমদ মত দিয়েছেন যে কেউ যদি কারো বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলে তাহলে সে দায়ী হবে না ( যেহেতু গান বাজনা নিষেধ ) এবং কারো জন্য বাদ্যযন্ত্র ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ নয় । [ উমদাতুল কারী ]
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লামা কামাল উদ্দীন ইবনে হুমাম রা: বলেন, হ্যাঁ যে সমস্ত কছিদা বা গজল বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে পড়া হয় যদিও বা ঐ গজলে নছিহত ও হিকতমত রয়েছে তবুও তা নিষেধ করা হবে। নিষেধ করাটা বাদ্যযন্ত্রের কারণে গজলের কারণে নয়। [ফত্হুল কদির ]
আল্লামা ইবনে নুজাইম মিশরী রা: বলেন, ইমাম ফকিহ বযযাবী রা: তাঁর মানাকেবে উল্লেখ করেন, গান যখন বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে গাওয়া যাবে তখন হারাম হওয়ার ব্যাপারে আলেম সমাজ ঐক্য মত পোষন করেছেন। বাদ্যযন্ত্র ছাড়া গাওয়ার মধ্য মতানৈক্য রয়েছে। ব্যাখ্যা কারীরা ব্যাখ্যা দেন নাই।
Информация по комментариям в разработке