Скачать или смотреть KHETRAPAL BABA TAMPLE VISIT WITH FAMILY Vlog, 2K

Khetrapal Mandir, Panagarh
Visiting Hours :- All Day (8 am–6 pm)
পানাগড়ের ক্ষেত্রপাল রুদ্র, না কি লৌকিক কৃষিদেবতা ?
ক্ষেতরক্ষক, যিনি ক্ষেত রাখেন তিনিই ক্ষেত্রপাল৷ ক্ষেত্রপাল মূলত ভূমিরক্ষক এবং কৃষির লৌকিক দেবতা হিসেবে পূজিত হন৷ ইনি সর্বভারতীয় দেবতা৷ মূলত ভৈরব মূর্তির এই দেবতাকে অনেকেই লৌকিক শিবের একটি রুদ্র রূপ হিসেবে কল্পনা করেন৷ ক্ষেত্রপাল কোথাও মূর্তির আকারে কোথাও বা শিলার আকারে পূজিত হন৷
মত্স্যপুরাণে বর্ণিত ক্ষেত্রপালের মূর্তির যে বিবরণ আছে সেখানে ক্ষেত্রপালকে জটামণ্ডিত ও বিকৃতানন করে নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে৷ ক্ষেত্রপাল দিগম্বর , জটিল , কুকুর ও শৃগাল বেষ্টিত , তাঁর মস্তক কেশসমাবৃত, বাম হস্তে কপাল , দক্ষিণ হস্ত অসুরনাশিনী শক্তি প্রদান করে৷
ক্ষেত্রপালের একটি ধ্যানমন্ত্রও রয়েছে , তার অর্থ খানিকটা এই রকম‘উজ্জ্বল ভয়ংকরজটাধারী , ত্রিনয়ন , নীল কজ্জ্বল ও পর্বতসদৃশ প্রভাবিশিষ্ট , দুই হাতে ধৃত গদা ও কপাল , রক্তবর্ণমাল্য , গন্ধ ও বস্ত্রে উজ্জ্বল , কটিতে বদ্ধ ঘণ্টার ঘর্ঘরশব্দের ভীষণ ঝংকারে ভয়ংকর , সাদা সর্পের কুণ্ডলধারী ভগবান ক্ষেত্রপালকে আমি বন্দনা করি৷ ’এই দু’টি বিবরণ অনুধাবন করলে ক্ষেত্রপালকে শিবের রূপান্তর বলে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক৷ ক্ষেত্রপাল জটামণ্ডিত , ত্রিনয়ন , দিগম্বর৷ প্রথম বিবরণে বামহস্তে কপাল ও দ্বিতীয় হস্তে শক্তি , দ্বিতীয় বিবরণে তাঁর এক হাতে গদা ও অপর হাতে কপাল৷
দ্বিতীয় বিবরণে ক্ষেত্রপালের কর্ণে সাদা সাপের কুণ্ডল৷ এই বর্ণনার সঙ্গে শিবের সাদৃশ্য সহজেই চোখে পড়ে৷ মত্স্য পুরাণের প্রতিমা বর্ণনায় ক্ষেত্রপাল কুকুর শৃগালের দ্বারা সেবিত৷ শিবের পশুপতিত্বের ইঙ্গিত এখানে লভ্য৷ শিবের সঙ্গে এই গভীর সাদৃশ্য থাকায় ক্ষেত্রপালকে শিবের মূর্তিভেদ বলে জ্ঞান করা হয়৷ ক্ষেত্রপালের গদা বিষ্ণুর কাছ থেকে গৃহীত৷ কিন্ত্ত কপাল বা পানপাত্র (অথবা ভিক্ষাপাত্র ) শিব ও কালীর সম্পত্তি৷
মঙ্গলকাব্যগুলিতে শিব স্বয়ং কৃষিকার্যে নিযুক্ত হয়েছিলেন৷ যজুর্বেদের শতরুদ্রীয় স্তোত্রে রুদ্রকে ক্ষেত্রপতি বলা হয়েছে৷ তন্ত্রশাস্ত্রে শিবের একটি নাম ক্ষেত্রপাল বা ক্ষেত্রেশ৷ সুতরাং ক্ষেত্রপাল যে শিবেরই রূপান্তর , তাতে সংশয় নেই৷ তথাপি কেউ কেউ ক্ষেত্রপালকে অনার্য দেবতা বলে সিদ্ধান্ত করেছেন৷
সদূক্তিকর্ণামৃত নামক সংস্কৃত কোষগ্রন্থে এবং কোনও কোনও মঙ্গলকাব্যে ক্ষেত্রপালের উল্লেখ পাওয়া যায়৷ কোনও কোনও স্থানে ধর্মরাজের পুজোয় চতুর্দিকের অধিপতি হিসেবে ক্ষেত্রপালের বন্দনা করা হয়৷ বৌদ্ধ মহাযানীদের মধ্যেও ক্ষেত্রপালের পুজো প্রচলিত ছিল৷ কিন্ত্ত আধুনিককালে ক্ষেত্রপালের পুজো প্রায় বিলুন্ত হয়ে গেছে৷
ক্ষেত্রপাল বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ক্ষেত্রসমীক্ষার দাবি না করে বর্তমান প্রবন্ধকে বর্ধমান জেলার পানাগড় , শ্যামসুন্দর ও ভাতার থানার কয়েকটি গ্রামে এখনও প্রচলিত ক্ষেত্রপাল পুজোর সুলুকসন্ধানও বলা যেতে পারে৷
বর্ধমান জেলার সর্বাধিক পরিচিত ক্ষেত্রপাল মন্দিরটি আছে পানাগড় মিলিটারি ক্যাম্পে৷ ক্ষেত্রপাল মন্দিরে যেতে হলে দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে দুর্গাপুর অভিমুখে পানাগড় মিলিটারি ক্যাম্পের তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতে হয়৷ এই গেটটি হাঁসুয়া গেট নামেও পরিচিত৷ কিছুটা এগোলেই পড়ে সিকিউরিটি চেকিং -এর পর্ব৷ গাড়ি নিয়ে গেলে চালকের লাইসেন্স জমা রাখতে হয়৷ দেখাতে হয় যাত্রীদের সচিত্র সরকারি পরিচয়পত্র৷ গাড়ির ডিকি , সঙ্গে থাকা ব্যাগ পরীক্ষা করে তার পর প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়৷ নিরাপত্তা বেষ্টনী থেকে দু-কিলোমিটার ভিতরে ক্ষেত্রপালের মন্দির৷
১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাইশটি গ্রাম সরিয়ে দিয়ে তৈরি হয় পানাগড় মিলিটারি বেস ক্যাম্প৷ ক্ষেত্রপাল দেবতার অবস্থান ছিল তত্কালীন হাঁসুয়া গ্রামে৷ প্রায় দু-বিঘা জায়গা জুড়ে থাকা মন্দির চত্বরটিকে বাদ দেওয়া হয় উচ্ছেদ থেকে৷ হাঁসুয়ায় ক্ষেত্রপাল পুজোর সূত্রপাত কবে হয়েছিল তা সম্পূর্ণভাবে অনুমান নির্ভর৷ পুরুষানুক্রমে চলে আসা নিয়মে হওয়া বর্তমান পূজারীদের একজন ষষ্ঠীচরণ চক্রবর্তীর মতে এই পুজো আনুমানিক পাঁচশো বছরের পুরনো৷ মন্দির খোলা থাকে সকাল ছ ’টা থেকে রাত্রি সাড়ে আটটা পর্যন্ত৷ মোট চোদ্দো জন পুরোহিত আছেন এবং নিত্যপুজো হয় পালা করে৷ নিত্যপুজোয় নারকেল , ফল , মিষ্টি দেওয়ার রীতিই প্রচলিত৷ মার্চ মাসের প্রথম সন্তাহের শনি ও রবিবার হয় বাত্সরিক উত্সব৷ ভক্তদের আর্থিক অনুদানেই আয়োজিত এই উত্সবে প্রায় তিন হাজার মানুষের সমাগম হয়৷ বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শ্রাবণ মাসের সোমবারগুলিতে ভক্তসমাগম হয় একটু বেশিই৷
বহু পুরনো একটি তেঁতুলগাছের নীচে ক্ষেত্রপাল মন্দিরটি অবস্থিত৷ ক্ষেত্রপাল এখানে প্রস্তরখণ্ড রূপে আছেন৷ প্রথমে ক্ষেত্রপালের অবস্থান ছিল খোলা আকাশের নীচে৷ বর্ধমান রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষেত্রপালের মাথার ওপর একটি ধাতুনির্মিত ছাতার মতো ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়৷ মন্দির হয়েছে বহু পরে৷
লোকবিশ্বাস হল ক্ষেত্রপালের কাছে মানত করলে মনস্কামনা পূর্ণ হয়৷ দেবতার আশিস পাবার আশায় ভক্তগণ মন্দিরে মানত করে মাটির ঘোড়া বাঁধেন৷ পরে আশা পূর্ণ হলে যে-কোনও একটি ঘোড়া খুলে পিতলের ঘণ্টা বেঁধে আসেন৷ মন্দির -সহ সমগ্র চত্বর জুড়ে চোখে পড়ে হাজার হাজার পিতলের ঘণ্টা৷ ক্ষেত্রপালের ধ্যানমন্ত্রে ঘণ্টার উল্লেখ আছে এবং ‘বিশ্বকোষ ’ ও ‘প্রয়োগসার ’ নামক তন্ত্রগ্রন্থে ক্ষেত্রপালের নাম ‘ঘণ্টাদ ’ থেকেই বোধ হয় এই ঘণ্টা বাঁধার রীতি৷ অনেকে ঘণ্টাবাবা হিসেবে অভিহিত করেন ক্ষেত্রপালকে৷ ক্ষেত্রপাল মন্দির চত্বরেই আছে কালী , তুলসী এবং গণেশ মন্দির৷ ক্ষেত্রপালের পাশাপাশি তাঁরাও মানত হিসেবে ভক্তদের কাছ থেকে ঘণ্টা পান৷ সেনাছাউনির আবাসিকরা খুবই মান্য করেন ক্ষেত্রপাল দেবতাকে৷ কোনও রেজিমেন্ট সেখান থেকে চলে গেলে একটি স্মারক তৈরি করে দিয়ে যান৷ এমনই বেশ কয়েকটি স্মারক চোখে পড়ে এই এলাকায়৷

VLOG BY EXPLORER MOU SUBHO