Скачать или смотреть শিশুরা অপরাধ করলেও বিচার হবেনা- আইনজীবীর বক্তব্য থেকে জেনে নিন

সুনির্দিষ্ট আইন থাকার পরেও শিশু কর্তৃক সংগঠিত অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় বিব্রত হাইকোর্ট। এ কারণেই শিশুদের বিচারিক অধিকার নিশ্চিত করতে বারবার হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে দেশের উচ্চ আদালতকে।

সর্বশেষ ২০১৯ সালেল ৩১ অক্টোবর দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দণ্ড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। প্রতিবেদনটি ‘টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ১২১টি শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের দণ্ড দিয়েছেন র্যা বের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরা তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগে করছে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আইনের বাইরে শিশুদের ওপর এমন দণ্ডারোপ দেখে বিব্রত প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘উই আর শকড’। পাশাপাশি ওইসব ভ্রাম্যমান আদালতের দণ্ডারোপকে অবৈধ ঘোষণাও করেছেন হাইকোর্ট।

আদালত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে মন্তব্য করে বলেছেন, শিশু আদালত নিয়ে ২০১৩ সালের স্পষ্ট আইন রয়েছে। কিন্তু এ আইনের (শিশু আইন, ২০১৩) বাইরে গিয়ে শিশুদের বিচার বা দণ্ড দেওয়া অবৈধ।’

অথচ জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ২০১৩ সালে ‘শিশু আইন’ নামে নতুন আইন প্রণয়নে করেন। ওই আইনের ৪ ধারায় ‘শিশু’র সংজ্ঞা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান অন্য কোন আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, অনুর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসাবে গণ্য হবে।’

আর শিশুদের বিচারের জন্য গঠিত আদালত বিষয়ে আইনটির ১৬ ধারার (১) উপধারায় আইনের সঙ্গে সংঘাত জড়িত শিশু কর্তৃক সংঘটিত যে কোনো অপরাধের বিচার করার জন্য, প্রত্যেক জেলা সদরে শিশু-আদালত নামে এক বা একাধিক আদালত থাকবে। পাশাপাশি (২) উপধারায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (২০০০ সনের ৮ নং আইন) এর অধীন গঠিত প্রত্যেক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্বীয় অধিক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত শিশু আদালত হিসাবে গণ্য করার এবং কোনো জেলায় উক্তরূপ কোনো ট্রাইব্যুনাল না থাকিলে উক্ত জেলার জেলা ও দায়রা জজ স্বীয় অধিক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত শিশু-আদালত হিসাবে গণ্য করতে বলা হয়েছে।

আইনের ওইসব সুস্পষ্ট বিধান উপেক্ষা করে ভ্রাম্যমান আদালত ১২১ শিশুকে দণ্ড দিয়েছে। তবে ১২১ জন শিশুর বাইরেও যেসব শিশু ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যতীত অন্য অন্যান্য আদালতে (শিশু আদালত ব্যতীত) দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘আমাদের দণ্ডবিধিতে ৯ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোন অপরাধই গণ্য হবেনা বলে উল্লেখ রয়েছে। কেননা, ৯ বছরের নীচে শিশুদের অপরাধজ্ঞান থাকেনা, তাই এটা কোন আদালতেই শাস্তিযোগ্য নয়। অথচ র্যা বের ভ্রাম্যমান আদালত ৯ বছরের নীচেও শিশুদের শাস্তি দিয়েছে, যা অবৈধ।’

তিনি আরও বলেন, ৯ বছরের ওপরে এবং ১৮ বছরের নীচে সকলকে শিশু বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এদের (৯ থেকে ১৮ বছর) বয়সী শিশুদের বিচারের ক্ষেত্রে তাদের অপরাধমূলখ জ্ঞান বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। আর এসব শিশুদের বিচার শিশু আদালত ব্যাতিত অন্য কোন আদালত শাস্তিযোগ্য নয়। এদিকে ভ্রাম্যমান আদালত যেটি কিনা ইতিমধ্যে হাইকোর্টের রায়ে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে এবং আপিলে মামলাটি শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে সে কারণে ভ্রাম্যমান আদালত শিশু আইন, দণ্ডবিধি না মেনে যে শাস্তি দিয়েছেন তা অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।’

ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, ভ্রাম্যমান আদালত শিশু আদালত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। শিশু আইনের ওপর নজর না রেখে সম্পূর্ণ তারা যেহেতু বেআইনীভাবে দণ্ড দিয়েছেন, সেহেতু এই দণ্ডকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা, শিশু আইন অনুসারে ‘শিশু আদালত’ ব্যাতিত অন্য কোন আদালত শিশুদের বিচার বা দণ্ড দিতে পারবেনা।