টয়লেটে পড়ে মৃত্যুবরণ সংক্রান্ত অপবাদের জবাব
হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আ.)-এর মৃত্যু নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধবাদী শত্রুদের পক্ষ থেকে আরেকটি ন্যাক্কারজনক আপত্তি করা হয় যে, ‘নাউযুবিল্লাহ-মিথ্যবাদীর উপর আল্লাহর অভিসম্পাত’ মির্যা সাহেব টয়লেটে পড়ে মারা গেছেন। এই জঘন্য ও নোংরা কথা বলে তারা এটা প্রমাণ করতে চায়, এমন ব্যক্তি কি করে সত্যবাদী খোদা প্রেরিত নবী হতে পারে যে এমন নোংরা স্থানে পড়ে মারা যায়!! এটা প্রমাণ করছে তিনি একজন মিথ্যাবাদী এবং আল্লাহ তাকে তাঁর মিথ্যা দাবীর জন্য শাস্তিস্বরূপ এমন মৃত্যু প্রদান করেছেন!
এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও দুঃখজনক যে, হযরত মির্যা সাহেবের বিরোধিতায় মানুষ কতোটা নীচু ও হীন মানসিকতার হতে পারে আর তাদের এই ঘৃণ্য কার্যক্রম কোথায় গিয়ে থামতে পারে এসব আপত্তি হচ্ছে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। বিরুদ্ধবাদীরা একের পর এক মিথ্যা আপত্তি ও অপবাদ ছড়িয়েই যাচ্ছে কিন্তু কোন অভিযোগের জন্য তো প্রমাণ আবশ্যক। কোথায় প্রমাণ? কোথায় চাক্ষুস স্বাক্ষী যে দেখেছে যে, মির্যা সাহেব টয়লেটে পড়ে মারা গিয়েছে?
মির্যা সাহেব টয়লেটে পড়ে মারা গিয়েছে এটা দেখেছে এমন কি কোন প্রত্যক্ষদর্শী আছে?
মির্যা সাহেব টয়লেটে পড়ে মারা গিয়েছে এমন কোন কথা কি আহমদীয়া জামাতের কোন পুস্তকে লিপিবদ্ধ আছে?
ডাক্তারগণ তাঁর মৃত্যু সনদে একটিবারের জন্যও কেউ লেখে নি মির্যা সাহেবকে মৃত অবস্থায় টয়লেটে পাওয়া গিয়েছিল?
এমনকি এই জঘন্য আপত্তি একটিবারের জন্যও তাঁর মত্যুর সময় বা তাঁর মৃত্যুর পর উচ্চারিত হয় নি! এই অপবাদ মিথ্যাবাদী বিরুদ্ধবাদীগণের পক্ষ থেকে অনেক পরে আরোপ করা হয়- কিন্তু কিসের ভিত্তিতে? এর পক্ষে কোন সুনির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট কোন তথ্য-প্রমাণ নাই। এটা শুধু মিথ্যার উপরেই রচিত হয়েছিল।
তবে আহমদীয়া জামাতের ফেসবুকীয় প্রধান বিরুদ্ধবাদী মৌলভী সাহেব নিজের ফিতরাত (স্বভাব)-এর মাঝে যে বৈশিষ্ট্য রাখেন তার পক্ষে প্রমাণ হাজির করা আলাদীনের দৈত্যের ন্যায় তুরি মারার কাজ। তিনি মির্যা সাহেবের টয়লেটে মৃত্যু বরণ করা নিয়ে যে পোষ্ট দিয়েছিলেন সেখানে মির্যা সাহেবের স্ত্রীর ভাষ্যকে বিকৃতি করে ও প্রকৃত ঘটনা আড়াল রেখে, সম্পূর্ণ স্বাক্ষ্যের বাংলা অনুবাদ না করে এই নোংরা আপত্তির অবতারণা করেছেন। আমরা এই প্রিন্সিপালের এরকম কুৎসা রটনাকারী, মিথ্যা আরোপকারীর প্রতি নিতান্তই করুণা প্রকাশ করছি। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তাঁর স্ত্রীর হুবহু স্বাক্ষ্য যা তিনি তাঁর ছেলের কাছে বর্ণনা করছিলেন তুলে ধরা হলো।
“আমি মায়ের এই বর্ণনা যা আমি শুরুতেই বর্ণনা করেছি যখন দ্বিতীয়বার এটির সত্যায়নের জন্য মায়ের কাছে বর্ণনা করলাম এবং হযরত মসীহ মাওউদ (আ.)-এর মৃত্যুর কথা আসলো তখন মা বললেন, “ হযরত মসীহ্ মাওউদ (আ.)- এর প্রথম দাস্ত হয়েছিল খাবার গ্রহণ করার সময়। কিন্তু এরপর অনেকক্ষন পর্যন্ত আমরা তাঁর পা টিপে যাচ্ছিলাম এবং তিনি আরাম করে শুয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন আর আমিও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষন পর তাঁর আবার প্রয়োজন অনুভব হলো এবং সম্ভবত এক কিংবা দুইবার প্রাকৃতিক কর্ম করার জন্য তিনি পায়খানায় গেলেন। এরপর তিনি নিজেকে দুর্বল অনুভব করতে লাগলেন এমতাবস্থায় তিনি নিজের হাত দিয়ে আমাকে জাগ্রত করলেন। আমি জাগ্রত হলাম। তিনি এতোটাই দুর্বল ছিলেন যে, তিনি আমার পালংকেই শুয়ে পড়লেন আর আমি তাঁর পা টিপে দেওয়ার জন্য বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর হযরত সাহেব বললেন, তুমি এখন শুয়ে পড়ো। আমি বললাম, আমি (পা) টিপে যাই। এরই মধ্যে তাঁর আরেকবার দাস্ত হলো কিন্তু তিনি এতোটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, পায়খানায় যেতে পারতেন না। এজন্য আমি পালংকের কাছেই ব্যবস্থা করে দিলাম এবং তিনি সেখানে বসেই কাজ সারলেন এবং তারপর উঠে শুয়ে পড়লেন আর আমি পা টিপেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু দুর্বলতা অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল। এরপর আরেকবার দাস্ত আসলো এবং এরপর তিনি বমিও করলেন। যখন তিনি বমি করা শেষ করে শুতে যাচ্ছিলেন তখন এতোটাই দুর্বল হয়ে পড়লেন যে, তিনি শুতে শুতেই পিঠের দিকে পালংকের উপর পড়ে গেলেন এবং তাঁর মাথা পালংকের কাঠের সাথে বাড়ি খেলো এবং অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়লো। এতে আমি আতংকিত হয়ে বললাম, “আল্লাহ একী হচ্ছে!” তখন তিনি বললেন, “এটা হচ্ছে তাই যা আমি তোমাকে বলতাম। ” আমি মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি বুঝতে পেরেছিলেন হযরত সাহেবের কি ইচ্ছা? মা বললেন, ‘হ্যাঁ’। মা এটাও বললেন, যখন অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন ছিল এবং দুর্বলতা অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল তখন আমি বললাম, মৌলভী সাহেব (হযরত মৌলভী নূরুদ্দীন সাহেব)-কে ডাকবো? তিনি বললেন, ডেকে নাও। (তিনি) এও বললেন, মাহমুদকে জাগিয়ে দাও। তারপর আমি বললাম, মোহাম্মদ আলী খান অর্থাৎ নবাব সাহেবকে কি ডাকবো? মা বললেন, আমার মনে নেই, হযরত সাহেব এর জবাব দিয়েছিলেন কিনা আর দিলেও কি দিয়েছিলেন।”
(এই বর্ণনায় হযরত আম্মাজান যিনি এই বর্ণনা করেছিলেন যে তাকে আতংকিত অবস্থায় দেখে হযরত মসীহ্ মাওউদ (আ.) বলেছিলেন, “এটা হচ্ছে তাই যা আমি তোমাকে বলতাম।” এ সর্ম্পকে আমি মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এর অর্থ কি? যার উত্তরে তিনি বললেন, হযরত সাহেব এটাই অর্থ ছিল যা তিনি বলতেন, “আমার মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী। অতএব এখন ঐ প্রতিশ্রুত সময় এসে গেছে।” মা বললেন, এই বাক্য বলার মধ্যে দিয়ে মূলত হযরত সাহেব আমাকে এক ধরণের স্বান্তনা দিলেন যে, চিন্তার কোন কারণ নেই। কেননা এটি সেই নির্ধারিত সময় যার সর্ম্পকে আমি খোদার কাছ থেকে অবগত হয়ে বর্ণনা করেছিলাম আর যেভাবে খোদার এই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হচ্ছে। এরূপেই খোদার অপরাপর প্রতিশ্রুতিও যা আমার পরে ঐশী সাহায্য-সমর্থনের ব্যাপারে রয়েছে পরিপূর্ণতা লাভ করবে আর খোদা তা’লা তোমাদের সকলের তত্ত্বাবধায়ক হবেন। মা আরও বললেন, হযরত সাহেব ডায়রিয়ায় প্রায়ই অসুস্থ হতেন যার ফলে অনেক সময়েই তিনি খুবই দুর্বল হয়ে পড়তেন আর তিনি এই অসুখেই মৃত্যুবরণ করেন)।
(সীরাতুল মাহদী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১০-১১)
বিস্তারিত জানুন - http://ahmadiyyabangla.org/
#MizanurRahmanAzhari #BanglaWaz2020 #Qadiyani
Информация по комментариям в разработке