Скачать или смотреть আমি আসছি তোমার শহরে/ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কবিতা/ দিপ্র হাসান/ মৃন্ময় মিজানের আবৃত্তি

কবিতাঃ আমি আসছি তোমার শহরে
কবিঃ দিপ্র হাসান।

আমি তোমার শহরে আসছি প্রিয়তমা!
এই খবর রটে গেছে দেশের সবগুলো টিভি চ্যানেলে
পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়েছে আট কলাম ইঞ্চি নিউজ
ফেসবুকে, ব্লগে, ওয়েব সাইটে ভাইরাল আমাদের প্রেম কাহিনী
রাজধানীর প্রতিটি বিলবোর্ডে ঝুলছে আমাদের যুগলছবি
আজকের দিনটি যেন শুধুই তোমার, আমার।

আমার আগমন ঠেকাতে মাঠে নেমেছে সবগুলো ফ্যাসিস্ট বাহিনী
মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড, সড়কে সড়কে তল্লাসী
ঘরে ঘরে পুলিশের হানা, গ্রামে গ্রামে যৌথ অভিযান
নদীতে নদীতে কার্ফ্যু, মাঠে মাঠে একশ’ চুয়াল্লিশ ধারা
আসমানে টহল দিচ্ছে মিগ-২৯ আর সদ্য কেনা এপাচি হেলিকপ্টার
বাস ও লঞ্চ মালিকেরা ডাক দিয়েছে লাগাতার ধর্মঘটের
দোকানপাট বন্ধ, থেমে গেছে কারখানার ইঞ্জিন
সম্ভব হলে যেনবা থামিয়ে দিবে চন্দ্র সূর্যের আবর্তন।

তুমিই বল হে প্রাণেশ্বরী!
প্রেমিক যাবে প্রেমিকার কাছে তাতে কার বাপের কি?
আমি তোমার কাছে আসছি প্রিয়তমা!
যেভাবে যুদ্ধ শেষে ঘরে ফেরে প্রতিটি যোদ্ধা
ভয়ানক সব সমরাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে
যেভাবে ব্যারাকে ফেরে আর্মাড কারগুলো।

ওরা আমাকে থামাতে চায়
যেভাবে থামিয়েছে হোসেন ইবনে আলীকে
ওরা আমাকে ফাঁসীতে লটকাতে চায়
যেভাবে লটকিয়েছে বেঞ্জামিন মলয়েসকে
ওরা আমাকে বুলেটে বুলেটে ক্ষত বিক্ষত করতে চায়
যেভাবে একাত্তরে ঝাঁঝড়া করেছিল বাংলাদেশের বুক
ওরা আমার শিরদাঁড়া গুঁড়িয়ে দিতে চায়
যেভাবে ইস্রাইলী বুলডোজার গুঁড়িয়ে দেয় ফিলিস্তিনীদের আবাস
ওরা আমাকে নিষিদ্ধ গন্ধম বলে ফতোয়া দিয়েছে
আমাকে ছুঁলেই ধ্বংস হয়ে যাবে মানবজাতি
মস্তকবেচা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরা এ আগমনকে বলছে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা-
যেনবা আমিই বিরোধী জোটের একমাত্র মহান নেতা
তখত থেকে নামিয়ে দিবো ইতিহাসের কুখ্যাত সব স্বৈরাচারকে
পৃথিবীর সব শক্তি এখন আমার প্রতিপক্ষ
যেনবা আমিই সমকালীন হিটলার- ঘোষণা দিয়েছি পৃথিবী ধ্বংসের।

কিন্তু তুমি তো আমাকে জানো প্রিয়তমা!
যেভাবে শিরিকে জানত ফরহাদ, লাইলিকে মজনু
আশেকে রাব্বানীরা যেভাবে জানে তাদের হৃৎস্পন্দনকে
আলিঙ্গনাবদ্ধ যুগলরা যেভাবে জানে পরস্পরের নিউরনকে
জোয়ারের টান যেভাবে জানে ভাটার পুনরাবর্তনকে
এই জল্লাদ সময়ও জানবে-
আসমানে আমি লিখব না কোন পরাজয়ের ইতিহাস!

এই উত্তুঙ্গ সময়ের কসম!
কসম পৃথিবীর সবগুলো রণতরীর
কসম চেঙ্গিসের সবচেয়ে দ্রুতগামী অশ্বারোহী দলের
আমি তোমার কাছে আসছি প্রিয়তমা
কোন স্বৈরচক্ষু আমাকে ফিরাতে পারবে না
ঈর্ষাপরায়ণ নারীদের ভ্রকুটি আমাকে টলাতে পারবে না
আমি আসছি কোটি কোটি আবাবিলকে সাথে নিয়ে
আমি আসছি নুহের প্লাবনকে সঙ্গী করে
আমি আসছি খালিদ বিন ওলিদের অপ্রতিরোধ্য তরবারী
আর আলী ইবনে আবু তালিবের হায়দারি হাঁক নিয়ে
তুমি প্রস্তুত থেকো।

আমি যখন তোমার শহরে পৌঁছবো প্রিয়তমা!
গাছে গাছে পাখিরা গান গেয়ে উঠবে
পুকুরে পুকুরে শুরু হবে মাছেদের নৃত্য
গৃহাশ্রিত পশুপাখির দল শুরু করবে আনন্দময় উলুধ্বনি
আকাশ থেকে বৃষ্টির বদলে ঝরে ঝরে পড়বে ফুলের পাপড়ি
তোমার জানালা ভরে যাবে রঙিন প্রজাপতির আলপনায়।

তোমার কার্ফ্যুঘেরা শহরে আমার জন্য অপেক্ষা করবে
পৃথিবীর সবচেয়ে চৌকস সেনাবাহিনী
তাদের সহায়তা করবে দুনিয়া কাঁপানো আঠারোটি কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা
আসমান থেকে একযোগে চারশ আশিটি স্যাটেলাইট
তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে
আমি সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পৌঁছে যাব নির্ধারিত গন্তব্যে।

শহরের কোণে কোণে রটে যাবে আমাদের মিলন কথা
শত শত সেনা আর পুলিশের যৌথ টহলকে উপেক্ষা করে
লাখ লাখ জনতার প্লাবন আমাদের অভিবাদন জানাবে
শ্লোগানে শ্লোগানে কাঁপবে তোমার শহর
তুমি সেই কাঁপা কাঁপা শহরের একটি কানাগলি থেকে
বেরিয়ে আসবে উজ্জ্বল সূর্যের মত
যেনবা তুমিই আজ বাংলাদেশের আকশে উদিত একমাত্র নক্ষত্র।

আমাদের দেখা হবে সেই মাঠে
যে মাঠে একদা দেখা হয়েছিল আদম আর হাওয়ার
মামলুক আর মঙ্গলের, তৈমুর আর বায়েজিদের
ইব্রাহীম লোদী আর বাবরের, শেরশাহ আর হুমায়ুনের।

তুমি কামান আর গুলির শব্দ ভেদ করে এসে দাঁড়াবে আমার সামনে
আমি তোমার চোখের দিকে তাকাবো, তুমি আমার
আমাদের দৃষ্টিতে থেমে যাবে মহাকালের চাকা
যেভাবে মেরাজের রাতে থেমে গিয়েছিল সকল চরাচর।

আমাদের আনন্দাশ্রু ছড়িয়ে পড়বে গ্রহ থেকে গ্রহে
আমাদের দৃষ্টিতে জন্ম নিবে শত শত নতুন পৃথিবী
আমাদের আলিঙ্গনে জেগে উঠবে পৃথিবীর সকল মৃত মানুষ
ইস্রাফিলের শিঙ্গা বাজার আগেই কেয়ামতের আলামতে
থরথর করে কাঁপবে খোদার আরশ।

আমাকে তুমি চুম্বনে চুম্বনে বিবস করলে
শেষ হবে পৃথিবীর সকল ক্যার্ফ্যুঘেরা নিষিদ্ধ পূর্ণিমা
বাসের চাকা আবার ঘুরতে শুরু করবে, নদীতে চলবে লঞ্চ
আসমান থেকে বিদায় নিবে যান্ত্রিক ফড়িং আর প্যারাট্রুপারদের কসরত
সৈনিকেরা অস্ত্র ফেলে নিজ নিজ প্রেমিকার কাছে ফিরে যাবে
রাষ্ট্রনায়কেরা যৌথ বিবৃতিতে ক্ষমা চাইবে
পৃথিবীর সকল প্রেমিকযুগলের কাছে
আরশে মহল্লায় স্বয়ং খোদা ফেরেস্তাদের ডেকে বলবে,
দেখে নে তোরা আমার সৃষ্টি কত মহান!

#শতাব্দীর_শ্রেষ্ঠ_কবিতা #দিপ্র_হাসান

আবৃত্তিশিল্পী সম্পর্কেঃ
বাংলাদেশে আবৃত্তির স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর কোর্সে র পাইওনিয়র মৃন্ময় মিজান আবৃত্তি বিশ্বজ্ঞানালয়ের উপাচার্য । দেশসেরা আবৃত্তি সংগঠন আবৃত্তি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক পরিচালক মৃন্ময় মিজান এ পর্যন্ত নির্দেশনা দিয়েছেন কুড়িটিরও বেশি আবৃত্তি প্রযোজনায়।

মৃন্ময় মিজানের কণ্ঠে কথা বলে মহাকাল। সকল ভাব ও রসের কবিতা তার কণ্ঠে ফুটে ওঠে সহজাত দক্ষতায়। বৈচিত্রপূর্ণ কণ্ঠের ব্যবহার আর নির্মাণের মুন্সিয়ানায় সুধী মহলে একটি বিশেষ স্থান তৈরি করে নিয়েছেন তিনি।

মৃন্ময় মিজানের নির্দেশিত উল্লেখযোগ্য আবৃত্তি প্রযোজনাগুলো হল, শব্দের চোখে জল, তিরিক্ষি প্যাচাল, সাজাহান, চোখে আঙুল দাদা, মেঘলা আলাপের ঘোর, এই দেশ এই মৃত্তিকা, মহাকাল পরিব্রাজক, বারুদগন্ধী মানুষের গান, বৃষ্টি জলের কাব্য, পুড়িয়ে দিবো নীল কারুকাজ, মরিচঝাঁপি, আমি ছুঁয়েছি স্বাধীনতা, বৃশ্চিক লগ্ন, সংগ্রাম অনির্বাণ, রুপালী সিঁড়িতে স্বর্ণমাধুলি ও দাবায়ে রাখতে পারবা না।

ওয়েবসাইটঃ https://mrinmoymizan.com
ফেসবুকঃ   / mrinmoy.mizan.1