ধর্ম ও রাজনীতি
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার কিংবা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নতুন কোন বিষয় নয়! প্রাচীন ইতিহাসের পাতা উল্টালে দুটি বিষয়কে ঘিরে অসংখ্য যুদ্ধ, হানাহানির গল্পকাহিনী ঝড়ে পড়বে। ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মের মূলভিত্তি হিসেবে শান্তি কিংবা মানবতা বা উদারতার কথাই বলেছে!
কিন্তু পণ্যদাসত্বের যান্ত্রিক সভ্যতায় হানাহানি, হিংসা কিংবা বিদ্বেষ বা লোভের মতো রিপুর তাড়না, ধর্মের সেসব শ্বাশতবাণীকে আজ যেনো শুধু কাগজের লেখায় অক্ষরেই বন্দী করে রেখেছে।
ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে আমি একজন মুসলিম। আমার ধর্মকেই আমি শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে জানি এবং মেনে চলার আন্তরিক চেষ্টা চালাই। আমার ধর্মে এও বলা আছে যেন অন্য ধর্মাবলম্বীরা আমার দ্বারা কষ্ট না পায়। আমি বিশ্বাস করি!যেহেতু প্রতিটা ধর্মের মূলনীতি প্রায় একই অর্থাৎ কোন ধর্মেই হিংসা-বিদ্বেষ, কলহ কিংবা কোলাহল সৃষ্টির কথা বলা নেই, তাই কোন ধর্মেই কোনপ্রকার অশান্তিরও স্থান নেই!
গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানবসৃষ্ট সংবিধানে ধর্মীয় নিয়মনীতি খুব একটা গুরুত্ব পায় না। সেখানে কাজ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং মানচিত্র ভিত্তিক সম্পর্ক। আর এরই জের ধরে তৈরী হয় নানা বিষয়ে বৈষম্য। কখনো ত্বকের রং নিয়ে, কখনো বা ধর্মকে নিয়ে!
বর্তমান সময়ে ধর্মভিত্তিক বৈষম্যটা একটু বেশিই প্রভাব ফেলছে। গণতান্ত্রিক ভোট বাক্স ভারী করতে কিংবা অন্যায় আবদারের চাহিদা মেটাতে, পশ্চিমা দেশগুলোর হাত ধরে আমরা শিখেছি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি! ডুবে গেছি, দিন দিন ডুবে যাচ্ছি গভীর থেকে গভীরে।
ভাই-ভাই হয়ে গেছে আজ শত্রু! নিজেরাই নিজেদের উপর ক্রোধ ঝাড়ছে, বাঁশ হাতে নিচ্ছে, হচ্ছে গুলিবর্ষণ! কিন্তু কেন? এতসবের আদৌ কি কোন প্রয়োজন আছে? শান্ত মস্তিষ্কে একবারও কি কখনো ভেবেছেন?
ক্ষমতা, দম্ভ অর্থ-সম্পদ কোনটাইতো চিরস্থায়ী নয়! কে কাকে বোঝাবে যে- টাকা দিয়ে কেনা যায় না প্রিয়জনের হাসি, আনন্দ, কিংবা সুস্থতা! সৃষ্টিকর্তা বারংবার সতর্ক করে যাচ্ছেন। ওইদিকে দৃষ্টি নেই কারো রি, বিধিনিষেধ মানা তো আজ যেনো দূরের ব্যাপার! একটু ছাড়া পেলেই ভুলে যাচ্ছে সব! নানাইস্যু তৈরী হচ্ছে রোজ, অন্দরমহলে চলছে কোন্দল আর বহির্মহলে খাদ্যের খোঁজ!
কে বুঝে? কেইবা বুঝাবে কাকে?
ধর্ম নাকি যার যার! যদি হয় তবে তাতে অন্যের ধর্মপালনে বাঁধা কেন, নিজের ধর্মের মূলনীতি প্রতিষ্ঠায় রাজনীতি আসবে কেন? ভাইয়ের হাতে ভাই মরবে কেন? মনের মাঝে নানা প্রশ্নের ঝড়!
দেশটাকে মাঝে মাঝে হ্যামিলন মনে হয়। এই দেশের সাধারণ মানুষগুলো এতটাই সহজ সরল আর আবেগী, এরা ঘুষ যত খায়! অতটাই আবার ধর্ম খায়, অতটাই আবার চেতনাও খায়!
অন্যদিকে যত যা-ই বলি এরাই কিন্তু মারাত্মক হিংস্র! মাতৃভূমির প্রতি এদের একাংশের কুনজর থাকলেও বৃহদাংশই নিজের তাজা রক্ত ঝড়াতে মূহুর্তও চিন্তা করে না। ৭১ এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তারা ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করেনি। যুদ্ধ করেছে মাটি নিয়ে, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে। পাক বিরোধিতায় সেইদিন তো মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবধর্মের লোকেরাই ছিল। কই তখনতো তাদের মাথায় 'ধর্ম' আসেনি! যদিও মাতৃভূমি রক্ষাও ধর্মের একটি বড় শর্ত।
মুসলমান হয়ে জম্মেছি, ধর্মের বিধি-নিষেধ মানতে গিয়ে ধার্মিক আমি হতেই পারি, সুন্নাহ্ মানতে গিয়ে দাড়ি টুপিতে নিজেকে সাজাতেই পারি। এটা আমার সৃষ্টিকর্তাপ্রদত্ত ব্যক্তি স্বাধীনতা।
আমিতো কারো ক্ষতি করছি না, কাউকে কষ্ট দেবার ইচ্ছাও আমার নেই। তার মানে আমার কোন ভয় পাবার কারণও নেই! কিন্তু এ যুগে এটাও দোষের হয়। কেউ ধর্মীয় লেবাসধারণকারীর মাঝে দোষ খুঁজে পায়, আবার কেউ ধর্মীয় লেবাসকে পুঁজি করে কুটিল-জটিল স্বার্থোদ্ধারে এটাকে 'ঢাল' হিসেবে ব্যবহার করে!
দুটি বিষয়ই কি নষ্টামির পর্যায়ে পড়ে না?
আফসোসটা কেবল এই একটা জায়গায়। হাতের একটা আঙুল বাঁকা মানেই পুরো হাতই বাঁকা, বলে ফেলাটা কি কোন যুক্তির মধ্যে পড়ে? কিংবা নিজ স্বার্থোদ্ধারে জেনে, বুঝে বিরোধ লাগানোতে কিসের সার্থকতা লুকিয়ে? তা আজও বুঝতে পারিনি!
আমি স্বপ্ন দেখি সুন্দর এক বাসযোগ্যপৃথিবীর! যেখানে আমি আমার পরিবার নিয়ে আনন্দে ঘুরে বেড়াবো, বন্ধু ভাইদের নিয়ে প্রাণ খুলে হাসবো। আমার সকল নিত্য চাহিদা পূরণ, আমার সাধ্যের মধ্যই থাকবে। আমার দেশ নিয়ে সারা বিশ্ব গর্ব করবে, বুক ফুলিয়ে গর্বিত হবো এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে!
আপনারা কি দিবেন এমন একটি দেশ? দিন না আপনারা-এমন এক দেশ! হাতে হাত মিলিয়ে একবার ভাবুন না-কেবল দেশটার কথা, দেশটার ১৮কোটি মানুষের কথা!
#ধর্ম #রাজনীতি #Filmpark #SouravRahman #Vlog #Bangladeshipolitics
Информация по комментариям в разработке