নবম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ ৪র্থ সপ্তাহের প্রশ্নঃ
রুহি তার বাবার সাথে শেরপুর বেড়াতে গেলো। যাওয়ার পথে স্থানীয় একটি বাজারে নাস্তা খেতে নামলো। সে দেখলো রাস্তার পাশে বাঁশ ও বেতের তৈরি সুন্দর সুন্দর ঝুড়ি, কুলা, চেয়ার, দোলনা, ফুলদানি বিক্রি করছে। রুহি বাবাকে বলে দুটো ফুলদানি কিনলো। রুহির বাবা বললো এভাবেই স্থানীয়ভাবে তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং পর্যটকদের নিকট এগুলোর চাহিদাও ব্যাপক। বর্তমানে সরকার এ খাতের নারী উদ্যোক্তাদের দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন খণ প্রদান করছে।
ক. ব্যবসায় পরিকল্পনা কী?
খ. সেবামূলক ক্ষুদ্র শিল্প বলতে কী বুঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত পণ্যগুলো কোন শিল্পের অন্তর্গত বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে প্রদত্ত তথ্য মতে এ খাতের বিকাশ সম্ভব বলে মনে করো কী? মতামত দাও।
ক)
খ)
গ) (উত্তরটি ভিন্নভাবেও লেখা যায়। নিম্নরূপঃ)
উদ্দীপকে বর্ণিত পণ্যগুলো কুটির শিল্পের অন্তর্গত বাঁশ ও বেত শিল্প।
বাংলাদেশে যেসব শিল্প সাধারণত স্বল্প মূলধন, সহজলভ্য কাঁচামাল ও অল্প সংখ্যক শ্রমিক দ্বারা নিতান্ত পারিবারিক পরিবেশে পরিচালিত হয় তাকে কুটির শিল্প বলে। এরূপ শিল্পের স্বল্প মূলধন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্যগণ সরবরাহ করে। এসব শিল্পে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় না এবং উৎপাদন কলাকৌশল প্রাচীন আমলের। এ দেশের উল্লেখযোগ্য কুটির শিল্পগুলো হলো- হস্তচালিত তাঁত শিল্প, মৃৎ শিল্প, বাঁশ ও বেত শিল্প, বিড়ি
শিল্প, কাসা ও পিতল শিল্প, শঙ্খ ও ঝিনুক শিল্প প্রভৃতি।
উদ্দীপকে রুহি তার বাবার সাথে শেরপুর বেড়াতে গিয়ে পথে স্থানীয় একটি বাজারে দেখলো রাস্তার পাশে বাঁশ ও বেতের তৈরি সুন্দর সুন্দর ঝুড়ি, কুলা, চেয়ার, দোলনা, ফুলদানি বিক্রি করছে। রুহি বাবাকে বলে দুটো ফুলদানি কিনলো। এগুলো কুটির শিল্পের অন্তর্গত বাঁশ ও বেত শিল্প।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত পণ্যগুলো কুটির শিল্পের অন্তর্গত বাঁশ ও বেত শিল্প।
ঘ) (এ উত্তরটিও ভিন্নভাবে লেখা যায়। নিম্নরূপঃ)
উদ্দীপকে প্রদত্ত তথ্য মতে কুটির শিল্প খাতের বিকাশ সম্ভব বলে আমি মনে করি। নিম্নে আমার মতামত উপস্থাপন করছি :
কুটির শিল্প বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির
ধারক।এক সময় এদেশের কুটির শিল্পজাত পণ্য বিশ্বজুড়ে রপ্তানি করা হত। কিন্তু এসব এখন সোনালি অতীত। বিভিন্ন সমস্যার কারণে কুটির শিল্প আজ হুমকির মুখে। ঢাকার মসলিনের সুনাম ছিল বিশ্বব্যাপী। কিন্তু তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যদি কুটির শিল্প রক্ষাকল্পে উদ্যোগ গ্রহণ করা
হয় তাহলে মসলিনের মতো বাংলাদেশের সব কুটির শিল্প
বিলুপ্ত হবে না।
সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কুটির শিল্পের সাথে
দেশ পৌঁছাবে উন্নতির শীর্ষে। বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ, স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং আত্মনির্ভরশীল। জাতি ফিরে পাবে তার হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব।
এক সময় বাংলাদেশের কুটির শিল্পের সুনাম ছিল। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে কুটির শিল্পগুলো টিকে থাকতে পারছে না। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখনও বেশ কিছু সংখ্যক কুটির
শিল্প আছে। এ শিল্প দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নিদর্শন
বহন করে।
বাঁশ ও বেত শিল্পে সোফা সেট, ঝুড়ি, কুলা, মোড়া, পাটি, দোলনা, মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী ইত্যাদি বাঁশ ও বেত থেকে তৈরি করা হয়।
কুটির শিল্পের বিকাশ প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ
বেকার। কুটির শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে বেকার পুরুষ এমনকি
মহিলাদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাছাড়া কুটির শিল্পের মাধ্যমে দেশীয় কাঁচামালের
সদ্ব্যবহার সম্ভব। এ শিল্পের উন্নতির মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করা যায়। কুটির শিল্পের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের জনগণের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব। শহর ও গ্রামের মধ্যে সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। কুটির শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও শিল্পকলা রক্ষা করা সম্ভব।
---------------
অতিরিক্ত তথ্যঃ
অন্যান্য কুটির শিল্প:
কাঠের আসবাবপত্র, গৃহস্থালী সামগ্রী, লাঙ্গল, পুতুল,
খেলনা, খাট, আলমারি ইত্যাদি বাংলাদেশের সব
জায়গায় তৈরি ও ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও শঙ্খ, ঝিনুক, হাতির দাঁত ও হাড় থেকে মালা,
বোতাম, শাখা, চিরুনি,খেলনা ইত্যাদি; ধাতব পদার্থ থেকে কুড়াল দা, ছুরি কাঁচি, বটি, নিড়ানি ইত্যাদি; নারিকেলের ছোবড়া থেকে দড়ি, পাপোশ, জাজিম, ব্রাশ প্রভৃতি;
চরকায় কাটা সুতার দ্বারা খদ্দরের কাপড়, চাদর, কাঁচা পাট থেকে দড়ি, সিকা, থলে গৃহসজ্জার বিভিন্ন
জিনিস; লোনা পানি থেকে লবণ তৈরি,চামড়ার ছোট ছোট গৃহস্থালী দ্রব্য তৈরি, বই বাঁধাই, তেলের ঘানি, ঢেকি,
মিষ্টি দই ও ঘি তৈরি ইত্যাদি বাংলাদেশের সম্ভাবনাময়
কুটির শিল্প।
হস্তচালিত তাঁত শিল্প: এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ও প্রাচীন কুটির শিল্প। শাড়ি, লুঙ্গি, মশারি,গামছা, কাতান ও জামদানি শাড়ি
ইত্যাদি হস্তচালিত তাঁত কারখানায় তৈরি হয়। এসব কারখানায় প্রায় ১১ লাখ শ্রমিক কাজ করে।রেশম থেকে শাড়ি, চাদর, থান কাপড় তৈরি হয়। রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি খুব জনপ্রিয়।
কাঁসা ও পিতল শিল্পে কাঁসা ও পিতলের থালাবাসন, কলস, চামচ, ঘটিবাটি, ফুলদানি তৈরি হয়। কিন্তু এখন আর কাঁসা ও পিতলের এসব সামগ্রীর তেমন ব্যবহার নেই।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে কুমারেরা মাটি দিয়ে হাড়ি,
পাতিল, মূর্তি, খেলনা, কলস, ফুলদানি, টব,বাসন প্রভৃতি
সামগ্রী তৈরি করে থাকে।
Информация по комментариям в разработке