ইসলামে ছবি এবং ভিডিও করার বিধান নিয়ে আলেম ও ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন হাদিস এবং কোরআনের আয়াতকে ভিত্তি করে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
মূলত, ইসলামে প্রাণীর ছবি বা মূর্তি তৈরি করার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ বিষয়ে একাধিক হাদিসে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। যেমন, একটি হাদিসে বলা হয়েছে যে, কেয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে ছবি নির্মাতাদের জন্য, যাদেরকে তাদের তৈরি করা ছবির মধ্যে প্রাণ দিতে বলা হবে, যা তারা পারবে না। এই হাদিসগুলো মূলত হাতে আঁকা ছবি বা মূর্তি তৈরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে বেশিরভাগ স্কলার মনে করেন।
তবে, আধুনিক ডিজিটাল ছবি এবং ভিডিওর বিষয়ে কিছু পার্থক্য রয়েছে। আলেমদের মধ্যে এই বিষয়ে প্রধানত দুটি মত প্রচলিত:
১. ছবি ও ভিডিও করা সম্পূর্ণরূপে হারাম: এই মতের অনুসারীরা মনে করেন যে, হাতে আঁকা ছবি হোক বা ক্যামেরায় তোলা হোক, উভয়ই হাদিসে বর্ণিত 'তাসবীর' (ছবি) এর অন্তর্ভুক্ত। তারা মনে করেন, ডিজিটাল ছবিও এক ধরনের স্থায়ী প্রতিচ্ছবি যা কাগজের ওপর প্রিন্ট করা হলে তা আরও সুস্পষ্টভাবে হারামের আওতায় পড়ে। তাদের মতে, অপ্রয়োজনে কোনো ধরনের ছবি বা ভিডিও করা জায়েজ নয়।
২. প্রয়োজন সাপেক্ষে ছবি ও ভিডিও করা জায়েজ: এই মতের অনুসারীরা মনে করেন যে, ডিজিটাল ছবি বা ভিডিও হাতের তৈরি মূর্তি থেকে ভিন্ন। এটি মূলত আলোর প্রতিফলনকে ধরে রাখা। তাদের মতে, যদি কোনো ছবি বা ভিডিওর উদ্দেশ্য শিরক, মূর্তিপূজা বা অনৈতিক কোনো কাজ না হয়, তাহলে তা জায়েজ হতে পারে। বিশেষত, কিছু প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যেমন- পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ভিসা, শিক্ষামূলক কাজে বা চিকিৎসার প্রয়োজনে ছবি তোলাকে তারা জায়েজ মনে করেন। একই সাথে, ইসলামী অনুষ্ঠান বা দ্বীনি দাওয়াতের কাজে ভিডিও ধারণ করাকেও অনেকে জায়েজ বলে মনে করেন, যদি তা কোনো অশ্লীলতা বা অনৈতিকতা থেকে মুক্ত থাকে।
ভিডিওর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা:
ভিডিওর ক্ষেত্রেও অনেক আলেম একই ধরনের মত পোষণ করেন। তারা বলেন, যদি ভিডিওতে কোনো অশ্লীলতা, মিথ্যাচার, বা অন্যকে অসম্মান করা হয়, তাহলে তা নিশ্চিতভাবে হারাম। যেমন, 'প্র্যাঙ্ক ভিডিও' বা অন্যকে বিব্রত করে এমন ভিডিও তৈরি করা ইসলামে অনুমোদিত নয়।
সার্বিকভাবে বলা যায়, ইসলামে ছবি এবং ভিডিওর বিষয়ে প্রধানত দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়:
উদ্দেশ্য: ছবি বা ভিডিওর উদ্দেশ্য কী? যদি তা কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে করা হয়, যেমন- অহংকার, শিরক বা অশ্লীলতা, তাহলে তা নিঃসন্দেহে হারাম।
প্রয়োজন: যদি ছবি বা ভিডিও কোনো প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হয়, যেমন- পরিচয়পত্র, চিকিৎসা, বা শিক্ষামূলক প্রচার, তাহলে অনেক আলেম এটিকে জায়েজ বলে মনে করেন।
সুতরাং, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন বিজ্ঞ আলেমের সাথে পরামর্শ করা ভালো।
#ইসলামিক_ভিডিও #ছবিআঁকাশিখা
Информация по комментариям в разработке