বিপ্লবীছাত্র-জনতা গনঅভ্যুত্থান-২০২৪
১. বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার বিপ্লবী আন্দোলনে শহীদ আবু সাইদসহ দুই শতাধিক শহীদকে জাতীয় বীর ঘোষণা করা,যেটা ছাত্ররা ইতোমধ্যে করেছেন, কৃতজ্ঞতা জানাই।
২. প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ গ্রহণ করেছেন এবং জাতীয় সংসদ বাতিল করা হবে বলেছেন। তিনি বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী বিলুপ্ত করা হবে-এখানেই বিপদ- প্রতিবিপ্লব সফল হলে আন্দোলনকারীর ফাঁসি হবে, কেননা- এটা ফ্যাসিবাদী সরকার সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদে সেই ব্যবস্থা বিদ্যমান রেখেই বিদায় নিয়েছেন। বিদ্যমান সংবিধানে প্রেসিডেন্টকে সকল ক্ষমতা অন্তর্বর্তীকালীন বিপ্লবী জাতীয় সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং সেটাই হবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তিতে বিজয়ী জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিপ্লবী অন্তর্বতিকালীন সরকার সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করবে।
৩. সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং প্রশাসনসহ রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আনুগত্য প্রকাশ করবে। ছাত্র-জনতার অভুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকারে কেউ আনুগত্য না আনলে বিপ্লবী সরকারের দ্বারা গঠিত গণআদালতে তাদেরকে গণশত্রু হিসাবে বিচার করতে হবে।
৪. সেনাবাহিনীকে বিপ্লবী ছাত্র-জনতার বিজয়ী গণক্ষমতার কাছে আনুগত্য আনতে হবে, কেননা ছাত্ররা ক্ষমতা চায় না, বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা গণক্ষমতার সুরক্ষা চায় এবং একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চায়। তারা শুধু মত প্রকাশের বাংলাদেশ চায় না, তারা দ্বিমত প্রকাশের ও স্বাধীনতার সুরক্ষার বাংলাদেশ চায়, তারা চায় ন্যায় বিচারের বাংলাদেশ।
৫. সেনাবাহিনীর উচিত ছিল –বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে জান-মাল রক্ষার দায়িত্ব নেয়া কিন্তু তারা সেটি না করে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পার করাতে এবং বিপ্লবী ছাত্র-জনতার দৃশ্যমান মূল সমন্বয়কারীদের বাদ দিয়ে অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন নিয়ে ফ্যাসিস্ট ক্ষমতার বর্তমান ও পুরনো দোসরদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়, যেটা ছাত্র-জনতার বিপ্লবী অভ্যুত্থানের বিপরীতে একটা প্রতিবিপ্লবের ইঙ্গিত প্রদানকরে। আমরা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে এমনটা প্রত্যাশা করিনি।
৬. সেনাবাহিনী যেহেতু আগে থেকেই জানতেন তাই পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবার আগে বিপ্লবী ছাত্র-জনতার মতামত নেওয়ার দরকার ছিল, কারণ- বঙ্গভবনের চাইতে শাহবাগ বেশি নিকটে ছিলো।
৭. বিপ্লবী অন্তর্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেই প্রথম কাজ হবে ফ্যাসিস্ট সংবিধান বাতিল ও নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নে হাত দেওয়া। অন্তর্বতীকালীন বিপ্লবী জাতীয় সরকারের বৈধতা তাদের বিদ্যমান সংবিধানের উপর নির্ভরশীল না – এটা রাজনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইনেরকথা।
৮. ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে যারা কাজ করতে চাইছেন তারা ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ঈমান রাখেন না। তারা জাতীয় বেঈমান এবং এতে করে প্রতিবিপ্লব (বেহাতবিপ্লব) বা ফ্যাসিস্টদের বি-টিম/সহযোগী টিম ক্ষমতা পেলে/ থেকে গেলে বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে ফাঁসিতে ঝুলাবে, যেটা আগেই উল্লেখ করেছি, সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ।
৯. সেনাবাহিনীর ভিতরে ফ্যাসিবাদের জন্য তৎপর জেনারেল থাকলে জিওসিদের সাথে পরামর্শ করে তাদের বরখাস্ত করতে হবে।
১০. ড. ইউনুস আমাদের আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে উত্তীর্ণ সর্বোচ্চ জাতীয় ব্যক্তিত্ব এবং একই সাথে ¯স্বৈরাচারের জুলুম নিপীড়নের ভিকটিম। শুধু তাই নয়, তিনি সঠিক সময়ে জ্বলে ওঠা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সহযোদ্ধাও বটে। সময় এসেছে তাকে মূল্যায়ন করার। গুণীর কদর করতে দেয়নি এতদিন ফ্যাসিস্ট ও তার দোসররা। বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ঠিকই সে শূণ্যতা পূরণে অগ্রগামী হচ্ছে। এখন যে কোন সিদ্ধান্তে ওভারট্রাম্প হতে পারে কিন্তু ড. ইউনুসকে পিক করলে ওভারট্রাম্প হবার আশঙ্কা বলাচলে ০%। সুদখোর গালিটি ফ্যাসিবাদের মেশিনে তৈরি, এটা কেবল নির্বোধরা গিলবে।
১১. আন্দোলন-সংগ্রামে সহায়তা করতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া রহুল কবীর রিজভী, আন্দালিব রহমান পার্থ, নুরুল হক নুর, শিক্ষক আসিফ মাহতাব, ছাত্রনেতা আখতার হোসেনসহ ১০ সহস্রাধিক মানুষকে যেন আমরা ভুলে না যাই। আহত, নির্যাতিত ও কারাবরনকারী ছাত্র-জনতাকে জনতার সংগ্রামের কাতারে হাজির করাটাও বড় কাজ বলে মনে করি।
১২. আমরা আরও ভুলব না কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারকে, শিক্ষক আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাহসী ও অকুতোভয় শিক্ষককে, ভুলব না মানজুর আল মতিনসহ অনেককে, যারা সঠিক সময়ে সাহসী হয়ে জ্বলে উঠে বিপ্লবকে বেগবান করেছেন। স্মরণে রাখব আলোকচিত্রী, ফ্যাসিবাদের ভিকটিম শহিদুল আলমকে, পরিবেশবিদ সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানসহ বাদ পড়া সকল নাম উল্লেখ না করা সকল যোদ্ধাদের।
১৩. পরিশেষে একটি কথা পরিষ্কার করে আবারও বলতে চাই, সজিব ওয়াজেদ জয় কিন্তু তার ভিডিওতে সংবিধান রক্ষার কথা বলেছেন, সেনাবাহিনীও ছুটে গেছেন রাষ্ট্রপতির কাছে, ফ্যাসিবাদের সাবেক ও বর্তমান দোসররাই গেছেন ক্ষমতার রুটি ভাগাভাগির আলোচনায়, কেবল ছিলেন না বিপ্লবী ছাত্র-জনতার মূল অংশ। রাষ্ট্রপতিও সংবিধানের অধীনে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করতে চাইছেন। সব গানের সুরকার, গীতিকার ও শিল্পী কিন্তু এক সুতোয় গাঁথা। দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা, সেনাবাহিনী সতর্ক পাহারায় থাকুন। জান-মালরক্ষায় মনোযোগী হোন। সংখ্যালঘুদের রক্ষা করুন। বিপ্লব আবারও ৯১ এর মতো যেন বেহাত না হয়। কোনো ফেসবুক সেলিব্রিটির কথায় বিভ্রান্ত হবেন না, রাফসান দ্যা ছোটভাই আর রাষ্ট্রের বর্তমান সঙ্কটাবস্থা এক না।
এরশাদুলবারী
আইনজীবী
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
Информация по комментариям в разработке