Скачать или смотреть কেন গানে এলেন না সাবিনা ইয়াসমিনের সন্তানেরা | NCBD News

কিংবদন্তির সুরের উত্তরাধিকার: কেন গানে এলেন না সাবিনা ইয়াসমিনের সন্তানেরা?
বাংলা গানের আকাশজুড়ে যার কণ্ঠ কয়েক দশক ধরে সুরের দ্যুতি ছড়িয়েছে, তিনি কিংবদন্তি শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। যার গানের সুরে কোটি মানুষ ভেসেছে আবেগ আর ভালোবাসায়, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে—তার পরবর্তী প্রজন্ম কি সেই সুরের মশাল বয়ে নিয়ে যাবে? তবে বাস্তবতা ভিন্ন। সাবিনা ইয়াসমিনের দুই সন্তানই সঙ্গীত জগৎ থেকে নিজেদের রেখেছেন দূরে, বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পেশা। সম্প্রতি এক ডকুফিল্মে এই কিংবদন্তি শিল্পী নিজেই জানিয়েছেন এর পেছনের কারণ।
চ্যানেল আইতে সম্প্রচারিত ‘জুঁই ফুল: সাবিনা ইয়াসমীন’ শীর্ষক একটি বিশেষ ডকুফিল্মে এই প্রসঙ্গে কথা বলেন সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি জানান, তার মেয়ে ফায়রুজ বাঁধন দেশেই একটি ব্যাংকে কর্মরত এবং ছেলে মো. রাফি হোসেন শ্রাবণ লন্ডনে নিজের চাকরি নিয়ে ব্যস্ত।
মেয়ে সম্পর্কে তিনি বলেন, "সে টুকটাক গান করে, কিন্তু সময়ের অভাবে নিয়মিত গাইতে পারে না।"
সন্তানদের গানে না আসার কারণ হিসেবে তিনি নিজের একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "আমি খেয়াল করেছি যে, বিশ্বের বেশিরভাগ তারকা বাবা-মায়ের সন্তানেরা মিডিয়ায় কম আসে। সম্ভবত তারা কাছে থেকে দেখে যে, এই জগতের জীবনটা কতটা সংগ্রামের এবং কষ্টের।" এই সহজ কিন্তু গভীর উপলব্ধি থেকেই তিনি তার সন্তানদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন।
তবে সঙ্গীতের পথ না ধরলেও, মায়ের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অমলিন। ডকুফিল্মে এক ভিডিও বার্তায় ছেলে শ্রাবণ তার মায়ের প্রতি আবেগঘন বার্তা দেন। তিনি বলেন, "এমন একজন মায়ের সন্তান হিসেবে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। তিনি আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছেন এবং নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে বড় করেছেন। ধন্যবাদ মা, আমরা তোমাকে ভালোবাসি। তুমি তোমার সঙ্গীত জীবন নিয়ে আরও বহু যুগ এগিয়ে যাও।"
সাবিনা ইয়াসমিনের বেড়ে ওঠাটাই ছিল এক সঙ্গীতময় পরিবারে। মা মৌলুদা খাতুন এবং চার বোন—ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নাজমা ইয়াসমিন এবং নিলুফার ইয়াসমিন—সবাই ছিলেন গানের জগতের মানুষ। মায়ের কাছেই তার সঙ্গীতে হাতেখড়ি। মাত্র ৬ বছর বয়সে 'অল পাকিস্তান স্কুল মিউজিক কম্পিটিশনে' প্রথম পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর ১৯৬৭ সালে জহির রায়হানের ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমার মাধ্যমে প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে।
তার দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে তিনি প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেছেন। এর মধ্যে ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ এবং ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’-এর মতো দেশাত্মবোধক গানগুলো তাকে অমর করে রেখেছে।
শুধু বাংলাতেই নয়, তিনি হিন্দি, উর্দু, নেপালি, চায়নিজসহ একাধিক ভাষায় গান গেয়েছেন। কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকর থেকে শুরু করে আর. ডি. বর্মণের মতো ব্যক্তিত্বরা তার গানের প্রশংসা করেছেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো সম্মাননা।
সাবিনা ইয়াসমিনের সন্তানেরা পেশা হিসেবে গানকে বেছে না নিলেও, মায়ের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করে। অন্যদিকে, সাবিনা ইয়াসমিনের রেখে যাওয়া সুরের legacy প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বেঁচে থাকবে তার অগণিত ভক্ত ও শ্রোতার হৃদয়ে। তার কণ্ঠই যেন তার সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার।

#bangladeshnews #everytime #ncbd #today #todaynews #worldnews #foryou #news #worldnews2025