কিয়ামতের আলামতের সম্পূর্ণ ধারাবাহীক পর্ব শুনতে আমার এই চ্যানেলের সাথেই থাকুন।
✔লেখকঃ মারজান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী
ঢাকা, বিশ্ববিদ্যালয়
✔ভয়েজঃ আহমদ নিয়াজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আল-আশরাত্ব : হাদিসে বর্ণিত কিয়ামতের আলামত (৫ম পর্ব)
ইমাম মাহদীর আগমন কিয়ামতের সর্বশেষ গৌণ বা ছোট আলামত। তিনি পৃথিবীতে থাকা অবস্থায় বড় আলামত প্রকাশ পাওয়া শুরু হবে।
ভিডিও শুরু করার আগে কয়েকটি কথা-
প্রথমত, পবিত্র কুরআনে ইমাম মাহদীর ব্যাপারে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। তবে অন্তত ২০টির মতো হাদিস রয়েছে, যা মাহদীর আগমনকে ইঙ্গিত করে। এজন্য মাহদীর আগমনের ব্যাপারে উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, মাহদী সম্পর্কে সুন্নী এবং শিয়া মতবাদে পার্থক্য রয়েছে। আহলে সুন্নাতের মতে, ইমাম মাহদী সর্বশেষ মুজাদ্দিদ। তিনি মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করে ইসলামি খেলাফত (الخلافة علی منهاج النبوة) প্রতিষ্ঠা করবেন। প্রক্ষান্তরে, শিয়াদের কাছে মাহদী 'ইমামে গায়েব' (১২তম ইমাম), যিনি কিয়ামতের পূর্বে প্রকাশিত হবেন। এজন্য শিয়ারা তাঁকে 'মুহাম্মদ আল মুনতাযার' নামে ডাকে।
উল্লেখ্য, আমরা এখানে কেবল সুন্নী মতাদর্শ এবং সুন্নী সূত্রগুলো ব্যবহার করব।
তৃতীয়ত, ইমাম মাহদী কোনো অলৌকিক চরিত্র (Supernatural Character) নন। তিনি রক্তে-মাংসে গড়া একজন মানুষ। সাধারণ মানুষের মতো তিনি জন্মগ্রহণ করবেন, বেড়ে উঠবেন, মৃত্যুবরণ করবেন।
মাহদী (الْمَهْدِي) শব্দের অর্থ হেদায়াতপ্রাপ্ত। এটি তাঁর নাম নয়; বরং উপাধি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
"যদি পৃথিবীতে একটি দিনও অবশিষ্ট থাকে, আল্লাহ সে দিনকে দীর্ঘায়িত করে দেবেন। যেন আমার আহলে বায়েত থেকে এক ব্যক্তিকে আবির্ভূত করেন, যার নাম হবে আমার নামে এবং বাবার নাম হবে আমার বাবার নামে। তিনি পৃথিবীকে ন্যায় নৈতিকতায় পরিপূর্ণ করে দেবেন, যেভাবে পৃথিবী অন্যায় অবিচারে পরিপূর্ণ ছিল।"
[সুনান আবি দাউদ ; কিতাবুল মাহদী]
এ হাদিস থেকে আমরা কিছু বিষয় জানতে পারি।
১. মাহদীর আগমনের ব্যাপারে খোদ রাসূলুল্লাহ ﷺ নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তবে হাদিসে উল্লেখিত 'একটি দিন' কথাটি আক্ষরিক নয়; বরং গুরুত্ব ও নিশ্চয়তা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
২. মাহদী রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আহলে বায়েতের সদস্য।
৩. মাহদীর নাম হবে মুহাম্মদ, বাবার নাম আবদুল্লাহ।
৪. চরম বিশৃঙ্খলা এবং অন্যায়-অবিচারের মূহুর্তে মাহদীর আবির্ভাব হবে এবং তিনি পৃথিবীতে ন্যায়-নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করবেন।
দুটি হাদিস থেকে মাহদীর পরিচয় স্পষ্ট হয়। উম্মে সালামাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
"মাহদী আমার বংশধর, ফাতিমার সন্তানদের মধ্য থেকে।"
[সুনান আবি দাউদ ; কিতাবুল মাহদী]
আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ
"আলী রাদ্বিআল্লাহু আনহু তাঁর পুত্র হাসানের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার এই ছেলে নেতা হবে, যেমনটি নবী ﷺ বলেছেন। এবং তার বংশধর থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবেন, যার নাম হবে তোমাদের নবীর নামে।"
[সুনান আবি দাউদ ; কিতাবুল মাহদী]
বুঝা যায় যে, মাহদী সায়্যিদা ফাতিমা রাদ্বিআল্লাহু আনহা'র সন্তানদের মধ্য থেকে আসবেন। এবং তিনি হবেন হাসান ইবনে আলী রা. এর বংশধর।
হাদিস থেকে তাঁর শারীরিক গঠন কিছুটা অনুমান করা যায়। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
"মাহদী আমার বংশ থেকে। তার কপাল হবে চওড়া, নাক লক্ষণীয় (ধারালো)।"
[সুনান আবি দাউদ ; কিতাবুল মাহদী]
আরেকটি হাদিসে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতীয়মান হয়। আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
"মাহদী আমাদের আহলে বায়েতের মধ্য থেকে। আল্লাহ তাকে এক রাতে পরিশুদ্ধ করবেন।"
[সুনান ইবনে মাজাহ ; কিতাবুল ফিতান]
বুঝা যায় যে, মাহদী জীবনের শুরু থেকে তেমন কোনো লক্ষণীয় ব্যক্তি বলে গণ্য হবেন না। বরং একটি রাতে এমন কিছু হবে যে, আল্লাহ তাঁকে উম্মতের নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা দান করবেন।
মাহদীর আগমনের প্রেক্ষাপট হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। উম্মে সালামাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
"(আরবের) এক নেতার মৃত্যুতে (ক্ষমতা নিয়ে) দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে। তখন মদীনা থেকে এক ব্যক্তি মক্কার দিকে পলায়ন করবেন। মক্কার কিছু লোক তাকে খুঁজে বের করবে এবং তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রুকন ও মাকামে ইবরাহিমের মাঝখানে তার হাতে বাই'আত দেবে। তখন সিরিয়া থেকে একটি বাহিনী প্রেরণ করা হবে, যাদেরকে মক্কা-মদীনার মধ্যখানে 'বাইদা' নামক স্থানে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। যখন মানুষ এ দৃশ্য দেখবে, তখন শাম থেকে আবদালগণ এবং ইরাকের দীনদার ব্যক্তিবর্গ আসবেন এবং তার হাতে বাই'আত দেবেন।"
[সুনান আবি দাউদ ; কিতাবুল মাহদী]
বি.দ্রঃ 'রুকন' দ্বারা হাজারে আসওয়াদ উদ্দেশ্য। উক্ত হাদিসের সনদ দ্বয়িফ। তবে সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিমে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যার দ্বারা এ হাদিসের পক্ষে সমর্থন পাওয়া যায়।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
একটি দল কা'বা শরীফ আক্রমণ করতে আসবে। যখন তারা 'বাইদা' নামক স্থানে পৌঁছাবে, তখন সবাইকে যমিনে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে।"
[মুত্তাফাকুন আলাইহি]
আরেকটি হাদিসে প্রেক্ষাপট আরও পরিষ্কার হয়। ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
"তিন ব্যক্তি তোমাদের গুপ্তধন নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হবে, যারা প্রত্যেকেই নেতার সন্তান। তবে কেউই সফল হবে না। অতঃপর পূর্বদিক থেকে কালো পতাকাধারী একটি বাহিনী আসবে এবং এমনভাবে যুদ্ধ করবে, যা কেউ কখনো করেনি। যখন তোমরা তাকে দেখবে, তার হাতে বাই'আত দেবে। এতে যদি তোমাকে বরফের ওপর হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়, তবুও। কারণ তিনিই হবেন আল্লাহর খলিফা মাহদী।"
[সুনান ইবনে মাজাহ ; কিতাবুল ফিতান]
উক্ত হাদিসের সনদও দ্বয়িফ। তবে পূর্বাপর বর্ণনা একে অপরকে সমর্থন করে।
একটি হাদিসে এর পরবর্তী ঘটনা প্রকাশ পায়। আবদুল্লাহ ইবনে হারিছ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
"পূর্বদিক থেকে মানুষ বের হবে এবং তারা মাহদীর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে।"
[সুনান ইবনে মাজাহ ; কিতাবুল ফিতান]
চলবে...
✔জায়গা না থাকায় কিছু অংশ দেয়া সম্ভব হয় নি!
Информация по комментариям в разработке