বিহারে এমনকি ২০১৫ তে যেবার লালু বিরোধী সমস্ত ভোট পড়েছিল বিজেপির দিকে কারণ সেবার নিতীশকুমার লালুর সঙ্গে জোটে ছিলেন, সেবারেও বিজেপি ২৪% ভোট পেয়েছিল, মানে ২৫%, এক এর চার ভাগ ভোট পায় নি। এবার তার কাছে সবথেকে বড় বোঝা হল নিতীশ কুমার, শারিরীকভাবে অসুস্থ, কী করতে কী করছেন, সামনে জাতীয় সঙ্গীত বাজছে না কাওয়ালি, তাই বুঝে উঠতে পারছেন না, অপারেশন সিন্দুরের পরে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে এমন অঙ্গভঙ্গি করছিলেন যাতে আমাদের লাজলজ্জাহীন প্রধানমন্ত্রীও বিব্রত হয়েছিলেন। সেই বোঝা কে নামালেও বিজেপি শেষ, কারণ তাদের কাছে তেজস্বীর বিরুদ্ধে কোনও বিশ্বাসযোগ্য মুখ নেই। এখন ভরসা নতুন দল, প্রশান্ত কিশোরের দল জনসুরাজ পার্টি কত ভোট কাটবে, কটা আসন পাবে। যদি খুব কম পায় তাহলে বিজেপির কোনও লাভ নেই, আবার বিরাট একটা কিছু পেয়ে গেলে, মানে ১২/১৫% ভোট আর জনা ৩০ বিধায়ক পেলে অবধারিত কেলো। ওদিকে এবারের আরজেডি, কংগ্রেস বামেদের জোট কিন্তু অনেক অনেক বেশি পাকাপোক্ত। গতবারের মানে ২০২০ তে এন ডি এর ভোট শতাংশ ছিল ৩৭.২৬ আর মহাগটবন্ধনের ৩৭.২৩%, মানে এক্কেবারে ফোটোফিনিশ। তারপর পাক্কা পাঁচ বছরের অ্যান্টিইনকমব্যান্সি, নিতীশের জোট ছাড়া, আবার ফিরে আসা সব মিলিয়ে বিজেপি নেতারা জানেন এক দুবন্ত জাহাজের সাহায্যে যুদ্ধজয় হবে না, কিন্তু বিহার তো বিজেপির চাই। কারণ বিহার গেলে এরপরে নির্বাচন বাংলাতে, কেরালায়, তামিলনাড়ুতে, সেখানে প্রভাব তো পড়বেই। আর বিহার যাওয়া মানে মোদি সরকারের ইকুয়েসন ঘেঁটে যাওয়া, এই মূহুর্তে নিতীশ হেরে গেলে তাঁর দলের সাংসদেরা নতুন সমীকরণের দিকে যেতেই পারেন। সব মিলিয়ে বিজেপির ঘরে বাইরে নানান বিপদ। অতেব তাঁরা এক সহজ পদ্ধতিকে বেছে নিলেন, অনুগত ইলেকশন কমিশনকে দিয়ে ভোট ভোট খেলেটা খেলতে চাইছে বিজেপি আর প্রথম দানেই ধরা পড়েছে, বিহারে নতুন ইস্যু যোগ হয়েছে, ব্জেপি আমাদের ভোট কেড়ে নিতে চায়, শ্রম কোডের বিরুদ্ধে ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছিল ট্রেড ইউনিয়নগুলো কিন্তু বিহারে আদতে ভোট হয়েছে ঐ ভোটার তালিকা আর ইলেকশন কমিশনের ফতোয়া জারি নিয়েই। ২০২৪ সালের চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচন ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা—আর সেটা কোনো গৌরবজনক কারণে নয়, জালিয়াতি আর জোচ্চুরির জন্যই সেই নির্বাচন সবার মনে থাকবে। ঐ নির্বাচনেই দেখা গিয়েছিল, এক নির্বাচন আধিকারিক, অনিল মাসি, ভোট গোনার সময় বিরোধী কাউন্সিলরদের ব্যালট পেপারে ইচ্ছে করেই কালো দাগ দিয়ে দেন, যাতে সেগুলোকে পরে বাতিল বলে ঘোষণা করা যায় —যাতে বিজেপি জিতে যায়। জিতেওছিল, কিন্তু ঐ ঘটনা অনেকের নজরে আসে, মামলা হয়, পুরো ঘটনাটা ধরা পড়েছিল সিসিটিভি ক্যামেরায়। পরে সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্বাচন বাতিল করে দেয়।
এই একটা ঘটনাই দেখিয়ে দেয়, সিসিটিভি ফুটেজ বা নির্বাচনী তথ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মজার কথা হল ঠিক এই ঘটনার পরপরই নির্বাচন কমিশন হঠাৎ করে এমন নিয়ম বদল করে ফেলল, নতুন নিয়ম এলো, যাতে এইসব প্রমাণ ভবিষ্যতে আর পাওয়াই না যায়। মানে ঐ সিসি টিভি ফুটেজ নাকি এতটাই গোপনীয়, যা পাবলিককে, যারা অভিযোগ করছে, এমনকি যারা মামলা করছে, সেখানেও দেওয়াই যাবে না। মানে না রহেগা বাঁশ, না বজেগা বাঁশুরি। কাজেই যে প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে তা হল নির্বাচন কমিশন কি এখন আর নিরপেক্ষ নেই? নতুন নিয়মে স্বচ্ছতা কি আরও কমছে, মানুষের বিশ্বাস ভরসা যা একটা সময়ে টি এন শেসন এনেছিলেন, সেই ভরসা বিশ্বাস কি ভেঙে পড়ছে? ঐ টি এন শেসনের সময় থেকে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) একসময় দেশের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সংস্থাগুলোর একটা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই নিয়ম পরিবর্তন, বিশেষ করে নির্বাচনী আইন রুল ৯৩(২)-এর বদল, নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই নিয়মগুলোই বলে দেয় যে —এইসব বদল আসলে শাসকদলের পক্ষেই নির্লজ্জভাবে কাজ করছে। তাহলে আসুন জানা যাক কীভাবে এই নিয়ম বদল হচ্ছে, তথ্য লুকানো হচ্ছে, কমিশনার নিয়োগের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা হচ্ছে—সবটাই করা হচ্ছে নির্বাচনের ফলাফলকে ঘুরিয়ে দেবার জন্য, প্রভাবিত করার জন্য, যার ফলে এক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের বিশ্বাস উঠে যাবার মুখে। আপনি যাকেই ভোট দিন, তা যদি বিজেপির বাক্সেই গিয়ে ঢোকে, তাহলে ভোট দিয়ে লাভ কী? নির্বাচনের আগেই যদি কে জিতবে সেটা ঠিক হয়ে যায়, তাহলে নির্বাচন এক প্রহসন, আর গণতন্ত্রে নির্বাচন যদি প্রহসন হয়ে ওঠে তাহলে সেই গণতন্ত্র মূল্যহীন, একথা বুঝতে হলে এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স না পড়লেও চলবে। প্রথমে দেখা যাক নিয়ম বদল এর তথ্যগুলো। যে নিয়ম বদল আসলে জনগণের কাছে তথ্যের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আগে নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনো কাগজপত্র—যেমন সিসিটিভি ফুটেজ, প্রিসাইডিং অফিসারের রিপোর্ট, ভোটার উপস্থিতির হিসাব—সব কিছু জনগণ চাইলে দেখতে পারত। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট পরিস্কার নির্দেশ দিয়েছিল—ECI-কে এসব তথ্য দিতে হবে। এই রায়ের মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই, সরকার ও কমিশন মিলে রুল ৯৩(২) বদলে দেয়। এখন বলা হচ্ছে, শুধু যেসব কাগজপত্র নিয়মে "নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে", সেগুলোই দেখা যাবে। বাকি কিছুই আর পাবলিকের নাগালের মধ্যে নেই। মানে সোজা ব্যাপার, অনিল মাসি কালো কালি দিয়ে বিরোধীদের ব্যালট পেপার বাতিল করে দেবে, সি সি টিভিতে সেটা ধরা পড়বে, কিন্তু সেই ফুটেজ কাউকে দেখানো যাবে না। এর মানে দাঁড়ায়—কমিশনের কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বা ভোটকেন্দ্রের রিপোর্ট (যেখানে ২ ঘণ্টা অন্তর ভোটার উপস্থিতির হিসাব লেখা থাকে) আর পাওয়া যাবে না। কেন? কমিশন বলছে, এত তথ্য দিতে গেলে লোকবলের সমস্যা হয়, বিভ্রান্তিও তৈরি হতে পারে। যা শুনলে হাসি পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
Информация по комментариям в разработке