সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, পুলিশের যে মনোবল, সেটাকে ধীরে ধীরে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে এবং সেটাকে ইস্যু করে নির্বাচনকে কীভাবে পিছিয়ে দেওয়া যায়- তার আলোচনা চলছে। সেই আলোচনাটা কারা তুলছে? সে আলোচনাটা তুলছে জামায়াতে ইসলামী, সে আলোচনা তুলছে এনসিপি, সে আলোচনা তুলছে অন্যান্য বিভিন্ন পলিটিক্যাল পার্টি। মানে বিএনপির নির্বাচন তাড়াতাড়ি হওয়ার যে দাবি, সেই দাবির বিপক্ষে যেন সবাই উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ আপনি অপেক্ষা করেন, দেখবেন, দুদিন পরে সরকারই বলবে যে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।
নির্বাচনের পরিবেশ কীভাবে তৈরি হবে? পুলিশকে আপনি সক্রিয় করতে হবে। পুলিশকে তো আপনি সক্রিয় করেন না। যখনই কোনো মব তৈরি হয়, আপনি ওখানকার পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্লোজ করে নিয়ে আসেন। তো ক্লোজ করে নিয়ে আসলে এরপরে যাকে ওখানে পাঠাবেন, সে কি মবকে থামানোর জন্য অগ্রসর হবে? কে ক্লোজ হতে চায়? কে চায়? সব মিলিয়ে যে সিচুয়েশন, সেটা হলো- নির্বাচন যত বিলম্বিত করা যায়, বিভিন্ন ছুতায়, তার এক ধরনের পাঁয়তারা চলছে বিভিন্ন কর্নার থেকে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) ‘কথা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি এসব কথা বলেন।
মাসুদ কামাল বলেন, যতই দিন যাচ্ছে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ধীরে ধীরে যেন তাদের মূল বক্তব্য প্রকাশ করতে শুরু করেছে। বিএনপি নির্বাচন চায় এবং দ্রুত নির্বাচন চায়। তারা প্রথমে ডিসেম্বরে চেয়েছিল।
পরে গত ১৩ জুন ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর তাদের যৌথ ঘোষণায় ফেব্রুয়ারির কথাটা আকারে ইঙ্গিতে এসেছিল এবং তাতেই বিএনপিকে ভীষণ খুশি এবং আনন্দিত বলে মনে হয়েছিল। তখন আমি বলেছিলাম, এত খুশি হওয়ার মতো আসলে এখনো কিছু ঘটেনি ঘটে, সেটা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কিন্তু একবারের জন্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে- এমন নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। তারপরও বিএনপি একা একাই খুশি হয়েছিল। আজকে জামায়াতে ইসলামীর একটা স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া গেল।
লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় বুধবার রাতে দুজন আসামিকে ছিনিয়ে নিতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের থানা পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা, ভাঙচুর, পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনাকে ইঙ্গিত করে ‘পাটগ্রামের’ কথা সাংবাদিকদের স্মরণ করিয়ে দেন ডা. শফিকুর রহমান। উনি বলেন, পাটগ্রামে কী হচ্ছে আপনারা দেখেছেন, এখানে যে মব অবস্থা বিরাজ করছে, এই পরিস্থিতিতে কীসের নির্বাচন? এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে তার ভাষায় অথবা তার মূল যে বক্তব্য- সেটা হলো, নির্বাচন হতে হলে দেশে একটা সুশৃঙ্খল পরিস্থিতি থাকতে হবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকতে হবে। মব থাকা চলবে না।
তিনি বলেন, মবটা চালাচ্ছে কারা? ঠিক আছে। আমি পাটগ্রামের কথা ধরে নিলাম, হাতিবান্ধার কথা ধরে নিলাম- এর পেছনে বিএনপির লোকজন দায়ী। পটিয়ার জন্য কে দায়ী? পটিয়ায়ও তো মব হয়েছে। পটিয়া এবং পাটগ্রামে পার্থক্য কিন্তু আছে। পার্থক্য হলো এখানে পাটগ্রামে এই মবের কারণে পুলিশরা এখন বিএনপির লোকজনকে দৌঁড়াচ্ছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এগুলো হয়েছে। কিন্তু পটিয়াতে বরং যিনি ওসি ছিলেন তাকেই ক্লোজ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেন দায়টা পুলিশের। কারণ ওখানে আর এখানে পার্থক্য হল এইটাই যে পাটগ্রামে মবের জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিএনপিকে আর পটিয়াতে মবের জন্য দায়ী করা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অথবা এনসিপির অঙ্গ সংগঠন, ছাত্র সংগঠন আছে- তাদেরকে। সরকারের অবস্থা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ইন্টারেস্টিং হলো- মবে কোথাও কিন্তু জামায়াত অথবা ছাত্রশিবিরের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে না এবং জামাতের আমির কিন্তু এই কথাটাই বলেছেন। উনি আরেকটা কথা বলেছেন। সেটা হলো দেশে দীর্ঘদিন ধরে মব কালচার চলছে। তবে এসব সহিংসতায় জামায়াতের কোনো কর্মী বা সমর্থক জড়িত নেই। এই যে কথাটা, এ কথাটা কিন্তু একদম ভিত্তি নয়। ঘটনা আসলেই সত্য। তারা তাদের নেতাকর্মীদেরকে এতটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন যে তারা এ ধরনের কোনো সহিংসতায় জড়িত আছেন বলে এখন পর্যন্ত সেভাবে আমরা দেখিনি। বিএনপি কেন পারে না? এই প্রশ্নটা কে করবে? কাকে করবে? ঢাকাতেও গত একদিন আগের ঘটনা। বনানীর একটা হোটেলে বিএনপির যুবদলের একজন নেতা সেখানে ভাঙচুর করেছে। এখানে নারী ছিলেন, তাদের গায়ে হাত তুলেছেন। তার লোকরা যে অনেক কিছু করেছেন, তাকে বিএনপি বহিষ্কার করেছে। তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। বিএনপি মামলা করেছে। বিএনপি তাকে বহিষ্কার করেছে, সঙ্গে সঙ্গে ওই লোকটাকে ধরা হচ্ছে না, কেন?
তিনি আরো বলেন, সব মিলিয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলো হলো- যে মবটা এনসিপি বা তার দলের কেউ করছে তাহলে সে মবের জন্য তাদেরকে দায়ী না করে বিরোধী পক্ষকে দায়ী করা হচ্ছে। আর যদি সেই মবের সঙ্গে যদি বিএনপির কারো নাম থাকছে, তাহলে সেটাকে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। জামায়াতের কেউ থাকছে না। জামায়াত এগুলো দেখিয়ে বলছে, আমরা কিছু করছি না। এই হলো টোটাল রিয়েলিটি। এখন বিএনপি যদি বুঝে যে তাদের নেতাকর্মীদের এভাবে দায়ী করা হয়, তাহলে তারা নিজেরা কেন সতর্ক থাকে না
সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন এনসিপির নেতারা যা বলবে তাই শুনতে হবে ড ইউনূসকে #ncp #viral #sheikhhasina
মাসুদ কামাল আরো বলেন, আমি একবার একটা জরিপ করেছিলাম, সারাদেশে যে নানা ধরনের চাঁদাবাজি হচ্ছে, দখলদারি হচ্ছে- এগুলোর পেছনে মূলত কারা দায়ী? সব জায়গায় কিন্তু বলা হয়েছে যে বিএনপি দায়ী। তার মানে বিএনপি এমন একটা পলিটিক্যাল পার্টি, যারা ক্ষমতায় যেতে চায়, কিন্তু তাদের নিজেদের নেতাকর্মীর উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে তারা সব জায়গায় নিজেদের রাজত্ব চালাচ্ছে। এখনো তারা ক্ষমতায় যায়নি। এখনই তাদের এই অবস্থা, ক্ষমতায় গেলে কী হবে? এটা নিয়েও কিন্তু নানা ধরনের আলোচনা আছে।
Информация по комментариям в разработке