Скачать или смотреть দূর্গাপূজাকে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদদের চরমপন্থা

দূর্গাপূজাকে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদদের চরমপন্থা
॥ পার্বত্য কণ্ঠ রিপোর্ট ॥ আগেই রিপোর্ট ছিল সরকারের হাতে। আসন্ন নির্বাচনের রাজনীতিকে ঘিরে তৎপর ছিল পাহাড়ের সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদীরা। অবশেষে সরকারের সেই আশংকা-ই সত্যি হল খাগড়াছড়ির ঘটনায়। মারমা ধর্ষণের কথিত নাটকের মুখোশ উন্মোচিত হওয়ায় এই ঘটনা ঘুরছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবার মুখে মুখে।
জানা গেছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা উপজেলার সিঙ্গিনালায় কথিত ধর্ষিতা আদৌ ধর্ষণের শিকার হয়নি। ডাক্তারী তথ্যমতে ধর্ষণের ১০টি আলামতের ভিতরে তাকে ঘিরে কোনো ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। ডাঃ জয়া চাকমা ঘোষিত তদন্ত রিপোর্টে তা উঠে এসেছে।
উক্ত ধর্ষণের ঘটনায় সেনাবাহিনীর তৎপরতায় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত একজন ধর্ষককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় বলে খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার জানান।
এদিকে ১ অক্টোবর বিকাল ৫টায় প্রাপ্ত এক খবরে কথিত ধর্ষণের শিকার মারমা কিশোরী ও তার পরিবারের বক্তব্য পাওয়া গেছে। উভয় সূত্র জানায়, স্বীয় বসতভিটায় উক্ত কিশোরীকে প্রথমে মাথার পিছনে ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। সে পিছনে ঘুরতে আক্রমণকারীকে দেখার চেষ্টা করলে তার মুখ চেপে ধরে তাকে পাশ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। অবশ্য ঘটনার আকস্মিকতায় সে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় তার আর তেমন কিছু মনে নেই বলে জানা গেছে।
অভিযোগে প্রকাশ, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ৫ জনের মধ্যে ২ জন হিন্দু, ২ জন চাকমা ও ১জন ত্রিপুরা বলে জানা গেছে। এখানে কোথাও কোনো বাঙালী মুসলমান বা সংঘবদ্ধ বাঙালী জড়িত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। সচেতন মহল ঢালাওভাবে এর সাথে পার্বত্য অঞ্চলে সামষ্টিক বাঙালীকে জড়িত করার জন্য নিন্দা জ্ঞাপন করেছে।
খবরে প্রকাশ, জনৈক অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া মারমা ছাত্রীর ধর্ষণের খবর চারদিকে চাউর হওয়ায় গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সর্বাত্মক ধর্মঘট আহ্বানের ঘটনা ঘটে। একে ঘিরে উত্তেজিত তথাকথিত জুম্ম-জনতা সেনাবাহিনীর একটি পিকআপকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করে। এছাড়া আরো কয়েকটি পিকআপকে ধর্মঘটের অজুহাতে ধাওয়া করে। ঘটনাটা বাড়তে বাড়তে শেষ পর্যন্ত গত ২৮ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর একজন মেজর ও ১৩ সদস্যকে মারাত্মকভাবে আক্রমণের মাধ্যমে আহত করা পর্যন্ত পৌঁছায়। একই ঘটনায় গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও আহত হয়। এতে সাধারণ জনগণের মধ্যে কমপক্ষে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে নিহতের সংখ্যা ৪ জন পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
এ ঘটনাকে ঘিরে খাগড়াছড়ির গুইমারাসহ বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় পাহাড়ি ও বাঙালী জনগোষ্ঠী পরষ্পরের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় লিপ্ত হয়। উভয় পক্ষ পরষ্পরের ঘর-বাড়িসহ বিবিধ স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
আহত হয় উভয়-পক্ষের অসংখ্য ব্যক্তি। উভয় পক্ষই দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রের পাশাপাশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে পরষ্পরকে আক্রমণ করে। এজন্য ভয়ে গুইমারা ছেড়ে যায় অনেক পাহাড়ি ও বাঙালী জনগোষ্ঠীর পরিবার।
এর আগে খাগড়াছড়িতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে কথিত ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর আধাবেলা হরতাল ও ২৬ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী অবরোধ পালিত হয়। এতে সেনাবাহিনীর পিকআপে অবরোধ পালনকারীরা হামলা করলে ৩ জন সেনা সদস্য আহত হয় বলে খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ সূত্রে জানা গেছে।
উভয় দিনের হরতাল ও অবরোধে জনগণের আংশিক সমর্থন প্রতিফলিত হওয়ায় তারা পূর্ণউচ্ছ্বাসে ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর তিন পার্বত্য জেলায় ধর্মঘট আহ্বান করলে খাগড়াছড়িতে উক্ত ঘটনায় সেনা ও পুলিশ সদস্য আহত হওয়াসহ বেসামরিক ৩ নাগরিক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়া মারফত ধর্মঘট শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছিল কথিত জুম্ম ছাত্র-জনতার মুখপাত্র। উল্লেখ করা যেতে পারে, এ দু’দিনের ধর্মঘট খাগড়াছড়ির কিছু অংশে আংশিক পালিত হলেও রাঙামাটি ও বান্দরবানে তেমনভাবে পালিত হয়নি।
জানা গেছে, সেনাবাহিনীর কাছে পূর্ব-তথ্য থাকার কারণে তাদের গুইমারা অঞ্চলের একটি টিম চলতি দূর্গাপূজার একটি ম-প রক্ষার দায়িত্বে থাকাকালে বারবার যে কোন মূল্যে মন্দির রক্ষার ঘোষণা দেয়।
মূলতঃ আসন্ন নির্বাচনী রাজনীতিকে ঘিরে সুবিধাভোগী সনাতন ধর্মাবলম্বী রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষীরা পাহাড়ে বিদ্যমান সেনাবাহিনী-বিদ্বেষকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ে অস্থিতিশীলতার প্রচেষ্টা চালায়। আসলে উক্ত কথিত ধর্ষিতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের যে অভিযোগ ছিল সেই ধর্ষকদের মধ্যে ২ জনই বাঙালী হিন্দু ও ১ জন মারমা জনগোষ্ঠীর সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিল। এছাড়া অভিযুক্ত অপর ২ ধর্ষণকারী ছিল চাকমা জনগোষ্ঠীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এসব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরাসরি জুম্ম ছাত্র-জনতার অবরোধ পালন কোনোক্রমেই যুক্তিযুক্ত ছিলনা বলে পাহাড়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সর্বশেষ রাঙামাটিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে কোথাও আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গাপূজার উৎসব পালিত হতে দেখা গেছে। খাগড়াছড়ির কথিত ধর্ষণকে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদরা খুব একটা ফায়দা নিতে পারেনি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
-আশিকুর রায়হান ভূঁইয়া, সম্পাদক, সাপ্তাহিক পার্বত্য কণ্ঠ

#durgapuja #bangladeshnews #parbatyachattogram #khagrachari #rangamati #bandarban #hilltracts #bangladeshpolitics #cht #পার্বত্যচট্টগ্রাম #বাংলাদেশসংবাদ #দূর্গাপূজা