Скачать или смотреть বর্জ্য পদার্থ : সমস্যা থেকে সম্পদ, নাইমুল সিয়াম

সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীকে অপূর্ব রূপে সাজিয়েছেন৷ এই সুন্দর পৃথিবীতে বসবাসের জন্য সৃষ্টি করেছেন মানুষ ও অসংখ্য জীব৷ দিয়েছেন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, অক্সিজেন সহ প্রয়োজনীয় সব অনুষঙ্গ। পরিবেশ ও জীবের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় পৃথিবীতে সমৃদ্ধ হয়েছে প্রাণের বিকাশ, গড়ে উঠেছে উন্নত সভ্যতার৷

মানুষের ব্যবহার্য সামগ্রীর ব্যবহার অযোগ্য অংশ পরিণত হয় বর্জ্য পদার্থে৷ পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সমান্তরালে বেড়েছে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ। সময়ের সাথে গবেষণায় উঠে এসেছে বর্জ্য পদার্থের নানারকম সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা৷ পরিত্যক্ত বর্জ্যকে ঘিরে সম্প্রসারিত হয়েছে মানুষের চিন্তাভাবনা।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যেকোনো শহরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করা হলে একটি শহর বসবাসের উপযোগিতা হারিয়ে ফেলবে৷ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনিভাবে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ মানুষের এ সংক্রান্ত যথাযথ জ্ঞান এবং দায়িত্বশীল আচরণ। মানুষেযত্রতত্র ফেলে দেওয়া বর্জ্য পদার্থ পয়ঃনিষ্কাশন লাইনগুলো বন্ধ করে ফেলে, যে কারণে সামান্য বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যায় শহরের রাস্তাঘাট।

মানব শরীরে বর্জ্য পদার্থের রয়েছে ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব৷ যত্রতত্র ফেলে রাখা বর্জ্য পদার্থ অ্যাজমা, ক্যান্সার, অপরিণত শিশু জন্মদান, গর্ভপাত সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে৷ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ফেলে রাখা ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্য মাটি, পানি ও বাতাসে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে পারে, যা যেকোনো প্রাণির জন্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে৷ বর্জ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে এর পরিমাণ এবং প্রভাব প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যয়ন পরিবেশ ও জীবিত প্রাণির উপরে এর প্রভাব বোঝার উপায় তৈরি করে৷

কোনো শহরের বর্জ্য পদার্থ খেয়ে জীবনধারণ করে কুকুর, বিড়াল, কাক সহ অনেক প্রাণি৷ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিকভাবে না করা হলে এসব প্রাণির জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, জীববৈচিত্র্যের জন্য তা ধ্বংসাত্মক হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিগত বছরগুলোর মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রায় জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। ব্লুমবার্গ ডট কমের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশের মাতুরাইলে জঞ্জালের ভাগাড় থেকে প্রতি ঘন্টায় ৪০০ কেজি মিথেন গ্যাস নির্গমন হচ্ছে যা এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী এবং মিথেন গ্রিন হাউজ গ্যাস হওয়ায় তা বৈশ্বিক উষ্ণায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷

রাজধানীতে প্লাস্টিক ও বর্জ্য পদার্থে বন্ধ হওয়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল করতে প্রতি বছর সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়৷ নিয়মিত রাস্তাঘাট, ফুটপাত কেটে এই সংস্কার কার্যক্রম একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্যও তা বিপজ্জনক। কিন্তু এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা সম্ভব হলে তা পরিবেশের জন্য যেমন ইতিবাচক, তেমনি যথাযথ পরিশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব বর্জ্য পদার্থ থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব৷ ভারতীয় মন্ত্রী নিতিন গাদকারি আবর্জনা সামগ্রী বিক্রি করে ১৮০ কোটি টাকা উপার্জন করেছেন (সূত্র: টাইমস অফ টুডে নিউজ), যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বানিজ্যিক সম্ভাবনার একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে৷

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন সহ পরিবেশের সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মনযোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি। সৌরজগতের একমাত্র বসবাসযোগ্য গ্রহটিকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে প্রয়োজন আমাদের দায়িত্বশীল হওয়ার, প্রয়োজন সচেতন পদক্ষেপের৷ বানিজ্যিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপ নিলে তৈরি হওয়া নতুন কর্মক্ষেত্র বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে৷ সর্বোপরি, সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন আমাদের জাতীয় উন্নতিতে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে পরিণত করতে পারে