Sage Veda’s pupil Utanka’s devotion | The root of Utanka’s-Taksaka conflict
ঋষি বেদ’র শিষ্য উতঙ্ক’র গুরুদক্ষিণার কাহিনী । উতঙ্ক-তক্ষক বিরোধের মূল কারণ
পুরাণ কালে বেদ নামক এক ঋষি ছিলেন। তিনি গুরু হিসেবে শিষ্যদেরকে শিক্ষা দিতেন। কিন্তু তিনি শিষ্যদেকে বলতেন না যে এই কর্ম কর, ঐ কর্ম কর বা আমার শুশ্রুষা কর ইত্যাদি। কারণ গুরুগৃহবাসের দুঃখ তিনি জানতেন, সেজন্য তিনি শিষ্যদের কষ্ট দিতে চাইতেন না। গুরু বেদ-এর ছিলো তিন শিষ্য। পৌষ্য, জনমেজয় এবং উতঙ্ক। এর মধ্যে পৌষ্য এবং জনমেজয় ছিলো দুই ভিন্ন দেশের রাজপুত্র। তারা গুরুগৃহবাস ও শিক্ষা সমাপ্ত করে নিজ নিজ দেশে গিয়ে প্রজাপালন করতে লাগলেন। কিন্তু উতঙ্ক গুরুগৃহে থেকে আরও শিক্ষা গ্রহণ করতে লাগলেন।
একদা গুরু বেদ বিশেষ কার্যের জন্য বিদেশে গেলেন এবং যাবার সময় উতঙ্ককে ব’লে গেলেন, আমার প্রবাসকালে গৃহে যে বিষয়ের অভাব হবে তুমি তা পূরণ করবে। উতঙ্ক গুরুগৃহে থেকে সকল কর্তব্য পালন করতে লাগলেন। একদিন আশ্রমের নারীরা এসে তাঁকে বললেন, তোমার গুরুপত্নী ঋতুমতী হয়েছেন কিন্তু তাঁর পতি তো এখানে নেই; এমতাবস্থায় তার ঋতু যেন নিষ্ফল না হয় তার ব্যবস্থা তুমি কর। উতঙ্ক উত্তর দিলেন, আমি স্ত্রীলোকদের কথায় এমন অকার্য করতে পারি না, গুরু আমাকে অকার্য করবার আদেশ দেন নি। কিছুকাল পরে বেদ ফিরে এলেন এবং সকল বৃত্তান্ত শুনে খুশী হয়ে বললেন, বৎস উতঙ্ক, আমি তোমার কি ইচ্ছা পূরণ করব বল। তুমি ধর্মানুসারে কাজ করেছ, আমাদের পরস্পরের প্রীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি আশীর্বাদ করছি- তোমার সকল কামনা পূর্ণ হবে। আর এখন তুমি তুমি স্বগৃহে যেতে পারো।
উতঙ্ক বললেন, আমি গুরুদক্ষিণা না দিয়ে যেতে চাই না। আপনার কি ইচ্ছা বলুন। বেদ বললেন, বৎস, এখন থাকুক। একথার পর উতঙ্ক গুরুগৃহেই থেকে গেলেন। কিছুকাল পরে উতঙ্ক পুনরায় গুরুকে দক্ষিণার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। বেদ বললেন, তুমি বহুবার আমাকে দক্ষিণার কথা বলেছ; ঠিক আছে, তুমি গৃহমধ্যে গিয়ে আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা কর কি দিতে হবে। তখন উতঙ্ক গুরুপত্নীর কাছে গিয়ে বললেন, ভগবতী, গুরু আমাকে স্বগৃহে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু আমি গুরুদক্ষিণা দিয়ে ঋণমুক্ত হতে চাই। আপনি বলুন কি দক্ষিণা দিবো। গুরুপত্নী বললেন, তুমি তোমার গুরুর অন্য শিষ্য রাজা পৌষ্যের কছে যাও, তাঁর ক্ষত্রিয়া পত্নী দুই কানে যে কুন্ডল পরেন তাই চেয়ে আন। চারদিন পরে ব্রত অনুষ্ঠান হবে, তাতে আমি এই কুন্ডল শোভিত হয়ে ব্রাহ্মণদের পরিবেশন করতে ইচ্ছা করি। তুমি আমার এই অভীষ্ট পূর্ণ কর, তাতে তোমার মঙ্গল হবে, কিন্তু যদি না কর তবে তোমার অনিষ্ট হবে।
উত্তঙ্ক কুন্ডল আনবার জন্য যাত্রা করলেন। পথে যেতে যেতে তিনি প্রকান্ড এক ষাঁড়ের উপর এক মহাকায় পুরুষকে দেখতে পেলেন। সেই পুরুষ বললেন উতঙ্ক, তুমি এই বৃষের মলমূত্র ভক্ষণ কর। উতঙ্ককে অনিচ্ছুক দেখে তিনি আবার বললেন, উতঙ্ক, খাও, বিচার ক’রো না, পূর্বে তোমার গুরুও খেয়েছেন। তখন উতঙ্ক বৃষের মলমূত্র খেলেন এবং পুনরায় যাত্রা করলেন। এক সময় তিনি পৌষ্যর কাছে পৌঁছলেন। পৌষ্য তাঁকে বললেন, ভগবান, আপনি এখানে কেন এসেছেন, কি আজ্ঞা বলুন। উতঙ্ক কুন্ডল প্রার্থনা করলে রাজা বললেন, আপনি অন্তঃপুরে গিয়ে আমার রাণীর কাছ থেকে চেয়ে নিন। উতঙ্ক ঘরের ভিতরে গিয়ে রাজমহিষীকে দেখতে না পেয়ে ফিরে এসে পৌষ্যকে বললেন, আমাকে মিথ্যা কথা বলা আপনার উচিত হয়নি, অন্তঃপুরে আপনার মহিষী নেই। পৌষ্য ক্ষণকাল চিন্তা ক’রে বললেন, নিশ্চয় আপনি এঁটো মুখে আছেন, অশুচি ব্যাক্তি আমার পতিব্রতা ভার্যাকে দেখতে পায় না। উতঙ্ক তখন হাত পা মুখ ধুলেন এবং জল পান ক’রে মুখ মুছলেন। তারপর অন্তঃপুরে গিয়ে মহিষীকে দেখতে পেলেন। উতঙ্কের প্রার্থনা শুনে মহিষী প্রীত হয়ে তাঁকে কুন্ডল দিলেন এবং বললেন, নাগরাজ তক্ষক এই কুন্ডল দুটির প্রার্থী, অতএব সাবধানে নিয়ে যাবেন।
উতঙ্ক সন্তুষ্ট হয়ে পৌষ্যের কাছে এলেন। পৌষ্য বললেন, ভগবান, সৎপাত্র সহজে পাওয়া যায় না, আপনি গুণবান অতিথি, আপনার জন্য কিছু পরিবেশনের ইচ্ছা করি। উতঙ্ক বললেন, ঘরে যে অন্ন আছে তাই শীঘ্র নিয়ে আসুন। অন্ন আনা হ’লে উতঙ্ক দেখলেন তা ঠান্ডা এবং তাতে চুল রয়েছে। তিনি বললেন, আমাকে অশুচি অন্ন দিয়েছেন অতএব আপনি অন্ধ হবেন। পৌষ্য বললেন, আপনি নির্দোষ অন্নের দোষ দিচ্ছেন এজন্য আপনি নিঃসন্তান হবেন। উতঙ্ক বললেন, অশুচি অন্ন দিয়ে আবার অভিশাপ দেওয়া আপনার অনুচিত, আপনি নিজেই দেখুন অন্ন অশুচি কিনা। রাজা অন্ন দেখে বুঝলেন উতঙ্কর কথা ঠিক। তিনি অনুমান করলেন শীতল অন্ন কোনও মুক্তকেশী দাসী এনেছে, তারই কেশ এতে পড়েছে। তিনি ক্ষমা চাইলে উতঙ্ক বললেন, আমার বাক্য মিথ্যা হয় না, আপনি অন্ধ হবেন, কিন্তু শীঘ্রই আবার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। আমাকে যে অভিশাপ দিয়েছেন তাও যেন না ফলে। এই ব’লে তিনি কুন্ডল নিয়ে চলে গেলেন।
উতঙ্ক যেতে যেতে পথে এক নগ্ন সন্যাসীকে দেখতে পেলেন, সে মাঝে মাঝে অদৃশ্য হচ্ছে। তিনি কুন্ডল দুটি রেখে স্নান করার জন্য জলাশয়ে নামলেন, সেই সুযোগে সন্যাসী কুন্ডল নিয়ে পালিয়ে গেল। স্নান শেষ ক’রে উতঙ্ক দৌড়ে গিয়ে সন্যাসীকে ধরে ফেললেন। কিন্তু সে তখনই সাপের রূপ ধারণ করে এক গর্তে প্রবেশ ক’রে নাগলোকে চ’লে গেল। উতঙ্কও সেই গর্ত খুঁড়ে নাগালোকে চলে গেলেন। সেখানে তিনি নানাবিধ প্রাসাদ, হর্ম্য এবং ক্রীড়াস্থান দেখতে পেলেন। তারপর দেখলেন, দুইজন স্ত্রীলোক তাঁতে কাপড় বুনছে, সেই তাঁতের কিছু সুতা কালো এবং কিছু সুতা সাদা। এরপাশে ৬জন যুবক ১২টি পাখি যুক্ত একটি চক্র ঘোরাচ্ছে; একজন সুদর্শন পুরুষ এবং একটি অশ্বও সেখানে রয়েছে। উতঙ্ক এই সকলের স্তব করলেন। সেই পুরুষ উতঙ্ককে বললেন তোমার স্তবে আমরা প্রীত হয়েছি, তোমার কি ইচ্ছা পূরণ করব বল। উতঙ্ক বললেন, নাগগণ আমার বশীভূত হ’ক। পুরুষ বললেন, তুমি এই অশ্বের গুহ্যদেশে ফুৎকার দাও। উতঙ্ক ফুৎকার দিলে অশ্বের সমস্ত ইন্দ্রিয়দ্বার থেকে ধূম্র কুন্ডলী ও অগ্নিশিখা বের হয়ে নাগলোক ব্যাপ্ত হ’ল। তখন ভীত হয়ে তক্ষকনাগ তার বাসভবন থেকে বেরিয়ে এসে বললো, এই নিন আপনার কুন্ডল।
[তথ্যসূত্র: রাজশেখর বসু কৃত মহাভারত’র সারানুবাদ]
Информация по комментариям в разработке