Скачать или смотреть কুরআন কিভাবে নাযিল হয় কার উপর নাযিল হয়? কুরআনের উৎপত্তি সংরক্ষণের পদ্ধতি? How Quran revealed?

কোরআনের উৎপত্তি, নাযিল হওয়া ও যাঁর উপর নাযিল হয়েছে – এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:

🌟 প্রশ্ন ১: কোরআনের উৎপত্তি কিভাবে হল?

উত্তর:
কোরআনের উৎপত্তি মানুষের তৈরি নয় বরং এটি আল্লাহর বাণী, যা তিনি মানুষের হিদায়াত বা পথনির্দেশের জন্য প্রেরণ করেছেন। এটি চিরন্তন ও অবিকৃত গ্রন্থ, যার উৎস হল "লোহে মাহফুজ" ( محفوظ اللوح ), অর্থাৎ আসমানে সংরক্ষিত একটি পবিত্র তক্তা, যেখানে কোরআন পূর্ব থেকেই সংরক্ষিত ছিল।

🌟 প্রশ্ন ২: কোরআন কিভাবে নাযিল হয়েছিল?

উত্তর:
কোরআন নাযিল হয়েছে ধাপে ধাপে, ধীরে ধীরে প্রায় ২৩ বছরে।

এটি প্রথমে আসমানের সর্বোচ্চ স্থানে "লোহে মাহফুজ" থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওপর নাযিল হয়।

প্রথম ওহি (আল্লাহর বাণী) নাযিল হয়েছিল ৬১০ খ্রিস্টাব্দে, রমজান মাসে, হেরা গুহায়, যখন নবী করিম (সঃ) ধ্যানমগ্ন ছিলেন।

প্রথম নাযিল হওয়া আয়াত ছিল:


اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ
"পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।" (সূরা আল-আলাক, আয়াত ১)


এরপর বিভিন্ন সময়, ঘটনা, প্রশ্ন ও প্রয়োজন অনুযায়ী আয়াতগুলো পর্যায়ক্রমে নাযিল হয়েছে।

🌟 প্রশ্ন ৩: কোরআন কার উপর নাযিল হয়েছিল?

উত্তর:
কোরআন নাযিল হয়েছে মানবজাতির সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবী,
হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর।
তিনি ছিলেন একজন নিরক্ষর (উম্মী), কিন্তু আল্লাহ তাঁকে জ্ঞান, হেকমত ও নবুয়তের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।

📘 সংক্ষেপে:

প্রশ্ন ও উত্তর:

উৎপত্তি : আল্লাহর কাছ থেকে, লোহে মাহফুজে সংরক্ষিত

নাযিলের প্রক্রিয়া :ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে, ২৩ বছরে ধাপে ধাপে

নবী : হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর

📚 কোরআনের পবিত্রতা সম্পর্কে কুরআনের বক্তব্য:

“নিশ্চয়ই আমি এই কোরআন নাযিল করেছি এবং আমিই একে সংরক্ষণ করব।”
(সূরা আল-হিজর, আয়াত ৯)


প্রশ্ন ২: ওহি বা কোরআনের আয়াত কিভাবে সংরক্ষণ করা হতো? 

ওহি বা কোরআনের আয়াতগুলো প্রথমে যেভাবে নাজিল হতো, সেগুলো বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করা হতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশাতেই ওহি সংরক্ষণের তিনটি প্রধান পদ্ধতি ছিল:

📝 ১. মুখস্থ করা (হিফ্‌জ করা)

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যারা ওহি নাজিল হওয়ার পরপরই তা মুখস্থ করে ফেলতেন।

সাহাবিরা খুব স্মরণশক্তিসম্পন্ন ছিলেন।

হাফেজ সাহাবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) ইত্যাদি।

📜 ২. লেখা করে সংরক্ষণ

রাসূল (সা.)-এর নির্দেশে কিছু নির্দিষ্ট সাহাবি ওহি নাজিল হওয়া মাত্রই তা লিখে রাখতেন।

যারা লিখতেন:

সবচেয়ে প্রধান লেখক ছিলেন হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.)

অন্যান্যরা: হজরত আলী (রা.), মুআবিয়া (রা.), উবাই ইবনে কাব (রা.) প্রমুখ।

যেসব উপকরণে লেখা হতো:

হাড্ডি (উটের পাখার হাড্ডি)

চামড়া (চাপা চামড়া বা চর্ম)

খেজুর পাতার কাণ্ড

পাথরের পাত (ল্যাথ)

কাঠের খণ্ড

🕌 ৩. নামাজে পড়ার মাধ্যমে চর্চা ও সংরক্ষণ

কোরআনের আয়াতগুলো নামাজে পাঠ করা হতো। ফলে তা বারবার পাঠের মাধ্যমে মানুষের মনে গেঁথে যেত এবং তা সহজে বিস্মৃত হতো না।

✅ রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশায় কোরআন সংরক্ষণের বৈশিষ্ট্য:

জিবরাঈল (আ.) প্রতি বছর রমজানে রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে পুরা কোরআন পাঠ করতেন।

রাসূল (সা.) কোনো আয়াত ভুলে গেলে জিবরাঈল এসে তা সংশোধন করে দিতেন।

🔐 উপসংহার:

কোরআনের ওহি সংরক্ষণ করা হতো:

সাহাবিদের মুখস্থ করার মাধ্যমে,

বিভিন্ন বস্তুতে লিখে,

নামাজে পাঠের মাধ্যমে চর্চা করে।

পরে রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের পর হজরত আবু বকর (রা.) ও ওসমান (রা.)-এর খেলাফতের সময়ে কোরআনকে একত্র করে একক কিতাব হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।