Скачать или смотреть রOক্তে লাল দয়া নদী - কলিঙ্গ যুদ্ধ - সম্রাট অশোকের অহিংসার পথ

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ঘেঁটে যত ভয়াবহ যুদ্ধের কথা জানা যায়, কলিঙ্গ যুদ্ধ (খ্রিষ্টপূর্ব ২৬১ সালের কাছাকাছি) নিঃসন্দেহে সবার ওপরে থাকবে। আমি যখন এই গল্পটা প্রথম পড়ি, সত্যি বলতে গায়ে কাঁটা দিয়েছিল, কারণ এটা শুধু যুদ্ধের গল্প নয়, এটা এক সম্রাটের ভেতরকার বদলের কাহিনি।

ভাবুন তো, অশোক, যিনি তখন ছিলেন “চণ্ডাশোক”, এক নির্মম বিজেতা। কিন্তু কলিঙ্গরক্তের নদী তাকে এমনভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল যে তিনি পরে “ধর্মাশোক” নামে পরিচিত হন। ইতিহাসে এমন পালাবদল বিরল।

ভিডিওতে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ শিলালিপিতে (Rock Edict XIII) অশোক নিজেই লিখে গেছেন: এই যুদ্ধে এক লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল, দেড় লক্ষ মানুষকে বন্দি বা নির্বাসিত করা হয়, আর যুদ্ধের পর দুর্ভিক্ষ ও রোগে মারা গিয়েছিল অগণিত মানুষ, যতটা সংখ্যা লিখে শেষ করা যায় না। এত বিশাল প্রাণহানির মুখোমুখি হয়ে যে কোনো হৃদয় গলে যাবে, সম্রাটেরটাও গলেছিল।

যুদ্ধের কারণটাও কম নাটকীয় নয়। কলিঙ্গ ছিল এক সমৃদ্ধ সামুদ্রিক বাণিজ্যকেন্দ্র, কৌশলগত দিক থেকেও অমূল্য। মৌর্য সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক লোভ আর শক্তি বিস্তারের তাগিদই মূলত এই সংঘাতের মূলে।

কিন্তু সবচেয়ে বড় মোড়টা আসে যুদ্ধ জেতার পর। রক্তমাখা দয়া নদীর তীরে দাঁড়িয়ে অশোক বুঝতে পারেন, এ রক্তজয় কোনো গৌরব নয়। তখনই তিনি দিগ্বিজয়ের বদলে ‘ধম্মবিজয়’ ঘোষণা করেন, অর্থাৎ জয়ের পথ হবে ধর্ম, অহিংসা, সামাজিক কল্যাণ আর সহনশীলতার মাধ্যমে। এই পথ ধরেই পরে বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা পৃথিবীতে।

ইতিহাসবিদরা বলেন, পুরো ঘটনার সবচেয়ে জীবন্ত দলিল হল সেই ত্রয়োদশ শিলালিপি। অশোকের নিজের কলমের এই স্বীকারোক্তিই কলিঙ্গ যুদ্ধের মানবিক বিপর্যয়কে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে সামনে আনে।

ভিডিওটা তাই শুধু এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের নয়, বরং দেখায় কীভাবে এক শাসকের বিবেক তাকে নৃশংস সম্রাট থেকে মানবিক দিশারীতে পরিণত করেছিল।