Скачать или смотреть বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভ

বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভ
মোহাম্মদ সেলিম
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককের অপসারণের দাবিতে বিক্ষুব্দ ছাত্ররা ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষুব্দ ছাত্ররা অর্ধ বেলা পর্যন্ত স্কুল চত্বর ও রিকাবীবাজার এলাকায় বিক্ষোভ প্রর্দশন করে। এ সময় তারা নানা রকমের ম্লোগান দেয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডলকে নিরাপত্তার বলয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গতকাল মঙ্গলবারে ছাত্র বিক্ষোভ এ মুহূর্তে প্রশমিত হয়েছে। এদিকে রিকাবীবাজার রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে এখানে ছাত্র বিক্ষোভ দানা বাঁধতে সুযোগ পেয়েছে বলে জোর অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির পঞ্চম ঘন্টায় সামাজিক বিজ্ঞানের ক্লাশ ছিলো। সেই সময়ে মানবিক ও কর্মাসের ক্লাশটি নেন হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল। এই সময়ে বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাশ ছিলো পদার্থ। অথচ সেই ক্লাশের কতিপয় শিক্ষার্থীরা পড়া ফাঁকি দিয়ে যোগদেয় হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল ক্লাশে। বিদ্যালয়ের এ ধরণের অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে যখন ফাঁকি দেয়া শিক্ষার্থীরা মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী মোহাম্মদ হাসিব সরকারের স্কুলের বিক্ষোভ বিষয় নিয়ে আলাপচারিতায়। সেদিন হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল ঐ ক্লাশে বেশ কিছু আপত্তিজনক কথাবার্তা বলেন বলে অডিওতে ধারণ করা বিষয়টি প্রমাণ হিসেব বিচারকদের সামনে চলে আসে। শ্রেণি কক্ষে মোবাইল নিষিদ্ধ থাকলেও সকল শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে মোবাইল শোভা পেতে দেখা গেছে। তাই এখানে বিদ্যালয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবারের ঘটনায় প্রতিয়মান হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডলের সেই আপত্তিজনক কথাবার্তা শিক্ষার্থীরা অডিও রেকর্ড করে রাখে। যা পরে গণযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষককের এ বিষয়টি গেল ২১ মার্চ বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রধান শিক্ষকের কাছে। প্রধান শিক্ষক গতকাল মঙ্গলবার দিন এ বিষয়ে স্কুল পরিচালনা পরিষদের সাথে আলাপ আলোচনা করে অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ করেন। আর তিনদিনের মধ্যে এ বিষয়ে উপযুক্ত জবাব দাবি করেন। তবে এরিমধ্যে নদীর পানি ঘোলা হয়ে বিষয়টি অনেকটা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। তারমধ্যে স্কুল প্রধানের দাবি অনুযায়ি বহিরাগরা স্কুলে প্রবেশ করে স্কুলে ছুটির ঘন্টা দিয়ে দেন। আর তাতে এখানকার ২ হাজার পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা হুরমুর করে ক্লাশ বের হয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে। আর এ ঘটনাটি পরে স্কুল চত্বর থেকে সারা রিকাবীবাজারে ছড়িয়ে পরে। এরমধ্যে বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু শিক্ষকের বাড়িতে লোহার গেইট থাকাতে বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা বাড়ির ভেতরে ডুকতে পারেনি বলে একাধিক সূত্র মতে জানা গেছে। এ পরিস্থিতিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন মুন্সীগঞ্জ থানায় ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে খবর দেন। এই খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুজামান আনিস, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ, মুন্সীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিক, তদন্ত অফিসার রাজিব ও হাতিমারা পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জসহ সঙ্গীয় একাধিক ফোর্স। পরে পুলিশের বেড়িক্যাডের মধ্যে দিয়ে সেই শিক্ষককে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে সম্মানের সাথে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময়ে বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা আবারো ঐ শিক্ষকের বাড়ির দিকে যাওয়ার চেষ্ঠা করে। তবে পুলিশের বাঁধার মুখে তারা সেখান থেকে ফিরে যায়। একাধিক সূত্র মতে জানা গেছে, এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকের পরিবার পরিজনরা এখান থেকে চলে যাবেন বলে তার স্ত্রীর সূত্রে এমনটি প্রচার প্রচারণা চলছে। এদিকে আগত প্রশাসনিক ব্যক্তি বর্গের উপস্থিত বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীদের সাতজনের সাথে ঘন্টাখানিক সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরদের আইনগত বিষয় আলোচনা শিক্ষার্থীরা মেনে নেন বলে জানা গেছে। গতকাল স্কুলে একটি নির্ধারিত পরিক্ষা ছিল। কিন্তু এ ঘটনায় সেই পরিক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এ স্কুলে শিক্ষার্থীদের চুলের ও জামার কলার স্কুলের পরিবেশ অনুযায়ি না বলে আলোচানায় তা জোরালোভাবে উঠে আসে। অভিযোগ শিক্ষক এখানে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করছেন। আর এখানকার প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন গত বছর ধরে এখানে রয়েছেন। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুজামান আনিস ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার বলেন, বিধি অনুযায়ি অভিযুক্ত শিক্ষককের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ বলেন, শিক্ষার্থীরা আজ বুধবার থেকে সুন্দর করে শ্রেণি কক্ষে পড়াশুনায় মন দিতে সকলকে আহবান জানান। রিকাবীবাজার রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককের সাথে আমরা যোগাযোগ করে ছিলাম। তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও অসত্য বলে দাবি করেছেন। এছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাশে কড়াকড়িতে বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থী মিথ্যা আন্দোলনে নেমেছেন।রিকাবীবাজার রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ম.মনিরুজ্জামান শরীফ বলেন, আমাদেরকে এ ঘটনাটি প্রধান শিক্ষক গতকাল মঙ্গলবার ১১টার দিকে জানায়। আগে জানলে এটি এতো দূর গড়াতো না। এদিকে স্কুলে প্রধান ফটকে বড়সড়ো একটি লোহার গেইট রয়েছে। সেটি টপকে কারো পক্ষে ভিতরে প্রবেশ করা সম্ভব না বলে অনেকে মনে করে। এখানকার ছাত্র বিক্ষোভের পিছনে স্কুলের ভেতরে কেউ না কেউ কলকাঠি নাড়াচ্ছে। এমনটিই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তা না হলে এখানে এ ধরণের ঘটনা ঘটতো না। তাছাড়া ছাত্রদের শ্লোগানের ধরণ ছিল অনেকটাই রাজনীতির শ্লোগানের মতো।