মুফ্তি শফিকুল ইসলাম
অনেক সুন্দর সালাম সম্পর্কে আলোচনা
সালাম (سَلَام) আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো- শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, আরাম, আনন্দ ইত্যাদি। একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামি অভিবাদন হলো- ‘সালাম’। এ কারণে কারও সঙ্গে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কথা বলার আগে সালাম দেয়া প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। তিনি বলেছেন, ‘কথা বলার আগে সালাম দাও।’
সালামের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, যখন দুজন মুসলমানের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়, সালাম-মুসাফাহা (হ্যান্ডশেক) করে তখন একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গুণাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এছাড়া সালামের মাধ্যমে পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়
সালাম একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামী অভিবাদন। আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আদমকে (আ.) সালামের শিক্ষা দেন। হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তায়ালা তাকে ফেরেশতাদের সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও এর উত্তর দেন।
أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يُسَلِّمُ الرَّاكِبُ عَلَى الْمَاشِي وَالْمَاشِي عَلَى الْقَاعِدِ وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ " .
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী ব্যক্তি পথচারীকে, পথচারী ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যককে সালাম করবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " خَمْسٌ تَجِبُ لِلْمُسْلِمِ عَلَى أَخِيهِ رَدُّ السَّلاَمِ وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ " .
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি বিষয় মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের ব্যাপারে ওয়াজিবঃ
১. সালামের জবাব দেওয়া,
২. হাঁচিদাতাকে (তার আলহামদু লিল্লাহ বলার জবাবে) রহমতের দু’আ করা,
৩. দাওয়াত কবুল করা,
৪. অসুস্থকে দেখতে যাওয়া এবং
৫. জানাযার সাথে গমন করা।
সালাম দেওয়া সুন্নাত; কিন্তু সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজেব
সালাম দেওয়া সুন্নাত এ কথা পূর্বোক্ত হাদীসসমূহে বর্ণিত হয়েছে। আর তার উত্তর দেওয়া ওয়াজেব হওয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহর নির্দেশ উপরে বর্ণিত হয়েছে। বলা বাহুল্য সালাম না দিলে সুন্নাত তরক হবে। কিন্তু সালামের উত্তর না দিলে ওয়াজেব তরক তথা তার জন্য কাবীরা গোনাহ হবে।
অবশ্য একটি জামাআত যদি অন্য জামাআতকে সালাম দেয়, তাহলে তাদের মধ্যে একটি লোক সালাম দিলেই যথেষ্ট। অনুরূপ জামাআতের মধ্যে যদি একটি লোক তার উত্তর দেয়, তাহলে ওয়াজেব আদায় হয়ে যাবে।[1] অবশ্য প্রত্যেকের উত্তর দেওয়াটাই উত্তম।
সালামের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। যা বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
♦সালাম শান্তির বার্তা পৌঁছায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
অতঃপর যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আলল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও।
♦সালামকারীকে আল্লাহ হেফাজত করেন।
আল্লাহ তা’আলা সালামের প্রচলনকারীর জন্য জিম্মাদার হয়ে যান। তাদের হেফাজতে রাখেন। যেমন হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণী লোকের জিম্মাদার হন। তাদের মধ্যে প্রথম হলো, যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। অর্থাৎ ঘরে বাবা-মা,স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন, ছোট-বড় যেই থাকুক না কেন; তাদের সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। আল্লাহ তা’আলা ওই বাড়িকে এবং ঐ ব্যক্তিকে হেফাজত করেন।
♦সালাম দিলে সাওয়াব হয়।
♦সালামের দ্বারা জান্নাত মেলে।
♦সালামে মুহাব্বাত বৃদ্ধি পায়।
♦সালাম দিলে অহংকার দূর হয়।
যে প্রথমে সালাম দিলো সে যেনো অহংকার মুক্ত থাকলো। যে,আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে প্রথমে সালাম দিবে, সে যেনো অহংকার থেকে মুক্ত থাকলো›।
আল্লাহ তায়ালা আমাকে,আপনাকে উপরোল্লিখিত হাদিস সমূহের উপর আমল করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত আঁকড়ে ধরে সুন্নাত অনুযায়ী জীবন-যাপন করার তৌফিক দান করুন।আমিন।
Информация по комментариям в разработке