প্রয়োজনীয় তথ্য:
আল্লাহ তায়ালা সমগ্র পৃথিবীর জন্য একটি চন্দ্র ও একটি সূর্য সৃষ্টি করেছেন কিন্তু সারা পৃথিবীতে সেগুলোর উদয় ও অস্ত এক সাথে হয় না, বরং একই সময় পৃথিবীর কোথাও রাত আবার কোথায় দিন, কোথাও সকাল আবার কোথাও বিকাল হয়ে থাকে। যেমন বাংলাদেশে যখন সকাল ১০টা, আমেরিকায় তখন রাত ৯টা। পাকিস্থানে যখন বেলা ১২টা লণ্ডনে তখন সন্ধ্যা ৬টা। এখন আপনারা বলুন, সমগ্রপৃথিবীবাসী একই সাথে কিভাবে রোযা ও ইদ পালন করবে? বাংলাদেশের মানুষ যখন ভোর রাত ৪টায় সাহরি খাবে আমেরিকায় তখন বেলা ৩টা বাজবে। এখন বেলা ৩টায় সাহরি খেয়ে কি রোজা রাখা যাবে? অনুরূপ সকাল ১০টায় যখন ভারতে ইদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে আমেরিকায় তখন রাত সাড়ে ৯টা বাজবে। আর রাত ৯টায় কি ইদের নামায আদায় করলে তা সহীহ হবে? অতএব, একথা আমাদের পরিস্কারভাবে মেনে নিতে হবে যে, একই সাথে নয় বরং সারা পৃথিবীতে স্থানীয় সময় অনুযায়ি রোযা ও ইদ পালন করতে হবে। এ কথা প্রিয় নবী ভালো করেই জানতেন তাই তিনি আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে পরিস্কার বলে দিয়েছেন-
صوموا لرويته وافْطِرُوا لرويته فاِنَّ غُبِّيَ عليكم فأكمِلوا عِدةَ شعبانَ ثلاثين-
তোমরা রোযা রাখবে চাদ দেখে এবং চাদ দেখেই ইদ পালন করবে। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তাহলে ত্রিশদিন পূর্ণ কবে। এটা বুখারির, ১৯০৯ নং হাদিস আর মুসলিম, ১০৮১ নং হাদিস।
এ হাদিসের নির্দেশ প্রত্যেক রাষ্ট্রের জন্য আলাদা আলাদাভাবে প্রযোজ্য। যদি কেউ সৌদি বা আমেরিকার সাথে ইদ করে তাহলে নিঃসন্দেহে ভুল করবে।
এ বিষয়ে হাদিস শরিফে একটি সুস্পষ্ট ও বাস্তব ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। যা আলোচ্য বিষয়ের সকল সমস্যার সমাধান ও সকল সন্দেহ দূরকারী। হযরত মুয়াবিয়া র.এর সময়ে শাম বা বর্তমান সিরিয়াবাসী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চাঁদ দেখে শুক্রবার থেকে রোযা পালন করে। আর একই সময়ে হযরত ইবনে আব্বাস র. সহ মদিনাবাসী শনিবার দিবাগত রাত চাঁদ দেখে রবিবার থেকে রোজা শুরু করে। সিরিয়ায় এক দিন পূর্বে চাঁদ দেখার বিষয়টা হযরত ইবনে আব্বাস র. অবগত হওয়ার পরেও এর প্রতি নির্ভর না করে মদিনায় চাঁদ দেখে বা ৩০ দিন রোযা পূর্ণ করে ঈদ উদযাপনের মতামত ব্যক্ত করেন। আর তিনি বলেন, আমরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন নির্দেশনাই পেয়েছি। সহিহ মুসলিম, ১: ৩৪৮, হা. নং ১০৮৭, নাসাই, ১: ৩০০, হা. নং ২১১০, আবু দাউদ, ১: ৩১৯, হা. নং ২৩৩২, তিরমিযি, ১: ১৪৮, হা. নং ৬৯৩। হাদিসটির বিস্তারিত বিবরণ নি¤œরূপ:
عن كريب أن ام الفضل بنت الحارث بتثه الي معاوية بالشام قال فقدمت الشام فضيت حاجتها واستهل علي رمضان وأنا بالشام فرايت الهلال ليلة الجمعة ثم قدمت المدينة في اخر الشهر فسألني عبد الله ابن عباس ثم ذكر الهلال فقال متي رايتم الهلال؟ فقلت رأيناه ليلة الجمعة فقال انت رأيته؟ فقلت نعم: وراه الناس وصاموا وصام معاوية فقال لكنا رأيناه ليلة السبت فلا نزال نصوم حتي نكمل ثلاثين أو نراه
হযরত কুরাইব সুত্রে বর্ণিত।তিনি বলেন, উম্মে ফযল বিনতে হারিস তাকে সিরিয়ার গভর্ণর মুয়াবিয়ার নিকট পাঠালেন, কুরাইব আরো বলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে তার দায়িত্ব পালন করি। সিরিয়ায় রমযানের চাঁদ দেখা গেলো, আমি তখন সিরিয়ায়। আমরা শুক্রবার রাতে চাঁদ দেখলাম। রমযানের শেষ দিকে আমি মদিনায় পৌছি। ইবনে আব্বাস আামাকে চাদ দেখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। বললেন, তোমরা কখন চাঁদ দেখেছো? আমি বললাম, আমরা বৃহস্পতিবার দিবাগত শুক্রবার রাতে চাঁদ দেখেছি। তিনি প্রশ্ন করেন, তুমি নিজে দেখেছো? আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি নিজে দেখেছি এবং লোকজনও দেখেছে। আর সবাই রোজা রেখেছে এবং মুয়াবিয়াও রোজা রেখেছেন।
ইবনে আব্বাস বললেন, আমরা একদিন পর শুক্রবার দিবাগত শনিবার রাতে চাঁদ দেখেছি, অতএব, আমরা আমাদের হিসাব মতে পূর্ণ ৩০ দিন রোযা রেখে যাবো অথবা চাঁদ দেখে রোজা সমাপ্ত করবো।
কুরাইব বলেন, فقلتُ أولا نَكتفي برويةِ معاويةَ وصيامِه؟ فقال لا, هكذا أَمَرَنَا رسولُ الله صلي الله عليه وسلم-
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মুয়াবিয়া যে একদিন পূর্বে চাঁদ দেখলেন ও রোযা রাখলেন তা কি যথেষ্ট নয়? তিনি উত্তরে বললেন, না। সিরিয়ার চাঁদ দেখা মদিনাবাসীদের জন্য যথেষ্ট নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এভাবেই আমাদের নির্দেশ করেছেন।
এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়, কোনো এক দেশে চাঁদ দেখা গেলে অন্য দেশবাসীর ওপর রোযা বা ঈদ পালন করার কোনো সুযোগ নেই।
ইবনে রূশদ মালেকি বলেন,
فظاهر هذا الاثر يقتضي أن لكل بلد رويته-
এই হাদিসের প্রত্যক্ষ দাবি, প্রত্যেক দেশে ভিন্ন ভিন্নভাবে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হতে হবে। [মাআরিফুস সুনান, ৫: ৩৩৯।]
হানাফি মাযহাবের অন্যতম আইন বিশারদ, আল্লামা ইবনে হুম্মাম র. সংক্ষেপে ও অত্যন্ত চমৎকার একটি বিশ্লেষণ পেশ করেছেন।তিনি লিখেছেনÑ
ولا شك ان هذا-حديث كريب- اولي لانه نص, وذالك-حديث صوموا لرويته محتمل لكون المراد-
কুরাইব থেকে বর্ণিত ইবনে আব্বাসের হাদিসটি উল্লিখিত বিষয়ে নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। কেননা, এক দেশে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে অন্য দেশে এর ওপর ভিত্তি করে আমল করা হবে না এ বিষয়ে হাদিসটি সুস্পষ্ট এবং অকাট্য দলিল। এ ছাড়া চাদ দেখে রোজা রাখো এ জাতীয় যাবতীয় হাদিস ব্যাখ্যাসাপেক্ষ ও অস্পষ্ট। [ফাতহুল কাদীর, ২: ৩১৯]
উল্লিখিত হাদিসটি আলোচ্য বিষয়ে একেবারেই সুস্পষ্ট। এতে সিরিয়ায় চাঁদ দেখাকে মদীনাবাসীদের জন্য যথেষ্ট নয় বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাই কোনো এক দেশে চাঁদ দেখা গেলেও যে সব দেশ চাঁদ উদয়ের ক্ষেত্রে এ দেশের সঙ্গে মিল নেই, ওই সব দেশে তা কার্যকরী বলে গণ্য হবে না। এ ছাড়া এ হাদিসটি মুসলিম শরিফসহ হাদিসের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযি র. এ হাদিসটিকে সহীহ-বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। তাই এ হাদিসই সকল ধরণের সন্দেহ নিরসনে ও আলোচ্য বিষয়ে প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট।
তাই সৌদি আরবে চাঁদ দেখে পৃথিবীর সর্বত্র একই দিনে রোযা ও ইদ পালন করার কোনো সুযোগ নেই।
Информация по комментариям в разработке