Скачать или смотреть লতিকচু চাষ করে লাভ করেছেন লাখ টাকা।

লতিকচু (Taro) চাষের পদ্ধতি নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:
১. জাত নির্বাচন: লতি কচু চাষের জন্য ভালো ফলন দেয় এমন জাত নির্বাচন করা জরুরি। বাংলাদেশে সাধারণত "বারি পানিকচু-১" (লতিরাজ) জাতটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি প্রচুর পরিমাণে ও ভালো মানের লতি উৎপাদন করে। এর লতি গোলাকার, মোটা ও গাঢ় সবুজ বর্ণের হয় এবং গলা চুলকায় না। অন্যান্য স্থানীয় জাতও রয়েছে, তবে ফলনের জন্য বারি পানিকচু-১ উত্তম।
২. জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি:
#জমি: পলি দো-আঁশ বা এঁটেল দো-আঁশ মাটি লতি কচু চাষের জন্য উপযুক্ত। এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা আছে। তবে বেলে মাটিতে লতিকচু ভালো হয় না।
#সময়: আগাম ফসলের জন্য কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং নাবী ফসলের জন্য মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য বৈশাখ (মার্চ-এপ্রিল) মাসে চারা রোপণ করা যায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য অগ্রহায়ণ-পৌষ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মাস সবচেয়ে ভালো সময়।
#জমি তৈরি: জমি ৪-৫ বার ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে। জমি তৈরির সময় আগাছা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
৩. চারা রোপণ:
#চারার প্রকার: সুস্থ ও সবল কন্দ (শেকড়) থেকে চারা তৈরি করা হয়। চারার বয়স ১৫-২০ দিন হলে তা রোপণের জন্য উপযুক্ত হয়।
রোপণের দূরত্ব: সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি (প্রায় ১.৫ হাত) এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪৫ সেমি (প্রায় ১ হাত) হওয়া উচিত। প্রতি শতকে প্রায় ৩৭-৩৮ টি চারার প্রয়োজন হতে পারে।
#রোপণের নিয়ম: চারা রোপণের আগে এর সমস্ত পাতা, শিকড় ও কাণ্ডের কিছু অংশ কেটে ফেলতে হবে। চারা ২ ইঞ্চি গভীরতায় মাটির নিচে দিতে হবে।
৪. সার ব্যবস্থাপনা:
ভালো ফলনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সার প্রয়োগ অপরিহার্য। প্রতি শতাংশ জমিতে সারের পরিমাণ নিচে দেওয়া হলো:
#জমির শেষ চাষের সময়:
#গোবর বা কম্পোস্ট: যত বেশি সম্ভব (যদি পাওয়া যায়)।
#টিএসপি -৪০০গ্রাম
#এমওপি -৫০০ গ্রাম
জিপসাম: ৫০০ গ্রাম
জিংক সালফেট এবং বরিক অ্যাসিড (প্রয়োজন হলে)
চারা রোপণের ১.৫-২ মাস পর:
এমওপি: বাকি অর্ধেক পরিমাণ
ইউরিয়া: মোট ইউরিয়ার এক-ষষ্ঠাংশ।
ইউরিয়া সার প্রয়োগ: বাকি ইউরিয়া সার ১৫ দিন পর পর সমান কিস্তিতে জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
৫. সেচ ও পরিচর্যা:
সেচ: লতিকচু চাষের জন্য জমিতে সব সময় কিছু পানি থাকা জরুরি। মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত সেচ দিতে হবে। লতিরাজ জাতের জন্য জমিতে ৮-১০ সেমি পানির গভীরতা বজায় রাখলে ভালো হয়।
আগাছা দমন: কচুর জমিতে আগাছা জন্মালে তা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আগাছা পরিষ্কারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন চারার ক্ষতি না হয়।
রোগ-বালাই দমন: লতিকচুর কিছু সাধারণ রোগ-বালাই হলো পাতা পোকা, লেদা পোকা, ব্লাইট রোগ ইত্যাদি। রোগ-বালাই দমনের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
৬. ফসল সংগ্রহ:
সময়: চারা রোপণের প্রায় ২ মাস পর থেকে লতি সংগ্রহ করা শুরু হয়। ৭ মাস বয়স পর্যন্ত লতি সংগ্রহ করা যায়।
ফলন: হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ টন লতি এবং ১৫-২০ টন কান্ড উৎপন্ন হতে পারে।
বিশেষ টিপস:
লতিকচু চাষের জন্য উচ্চ ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করতে পারেন, এতে বন্যার ভয় থাকে না।
বর্ষাকালে জমিতে পানির পরিমাণ ৮-১০ সেমি-এর বেশি হলে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে।
লতিরাজ কচুর চারা সাধারণত কৃষকের কাছে বা কৃষি সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া যায়।
সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে লতিকচু চাষ করে ভালো ফলন ও মুনাফা অর্জন সম্ভব।