Скачать или смотреть Covid-19 || অতিমারি কোভিড -19 || সাম্প্রতিক ঘটনাবলী কোভিড -19 | রচনা kovid 19 || DrSoumenKumar Bera

কোভিড -১৯
ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় ধ্বংসাত্মক আতঙ্কের নাম হল কোভিড 19 ওরফে করোনাভাইরাস। ল্যাটিন শব্দ ‘করোনা’ থেকে এসেছে যার অর্থ হলো মুকুট। এটি একপ্রকার ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস পরিবারের সমগোত্রীয় ভাইরাস, যা ইনফ্লুয়েঞ্জার মত হাঁচি-কাশি সাধারণ কথাবার্তার মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে। আণুবীক্ষণিক করোনা ভাইরাসকে ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপের নিচে অনেকটা মুকুট'এর মত দেখায়, তাই এর এমন নাম।
বিশ্বের অন্যান্য মহামারী: পৃথিবীর বুকে অভিশাপ হয়ে বারে বারে নেমে এসেছে একাধিক মহামারী। একেকটি ভয়ঙ্কর মহামারী কেড়ে নিয়েছে সহস্রকোটি নিষ্পাপ প্রাণ। অনুন্নত চিকিৎসাব্যবস্থার সেদিনে না ছিল কোন টিকাকরণের বন্দোবস্ত, না ছিল কোন ঔষধ, না জানা ছিল কোন চিকিৎসা পদ্ধতি কিংবা নাগরিক সচেতনতা। পৃথিবীব্যাপী কয়েকটি মহামারী দৃষ্টান্ত হলো - কলেরা যা সমগ্র এশিয়াসহ ফিলিপিনস জাভা ইত্যাদিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। প্লেগের প্রাদুর্ভাবে ইউরোপ, ভারত, চীন ও তার পার্শ্ববর্তী দেশে ব্যাপক আকার ধারণ করে। এরপর 1918 সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পর 1920 কুড়ি সালে নেমে আসে স্প্যানিশ ফ্ল । এভাবে বিভিন্ন শতকে বারেবারে নেমে এসেছে কলেরা, প্লেগ, গুটি বসন্ত, বিভিন্ন ধরনের ফ্ল ইত্যাদির মত নানান মহামারী পৃথিবীর বুকে ধ্বংসাত্মক ছাপ রেখে গেছে।
করোনাভাইরাস এর ইতিহাস প্রকৃতি: প্রাচীনকাল থেকে করোনাভাইরাসের হদিশ পাওয়া যায। 1930 সালের শুরুর দিকে সর্বপ্রথম এটি মুরগির মধ্যে সংক্রামক ব্রংকাইটিক রোগের কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। তারপর 1960 সালে এর শিকার হয় মানুষ। এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মোট ছয় প্রকার করোনাভাইরাসকে শনাক্ত করেছেন যার মধ্যে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক প্রজাতি হলো বর্তমানের নোবেল করোনাভাইরাস, যা আমাদের কাছে কোভিড- ১৯ নামে পরিচিত।
করোণা ভাইরাসের উৎপত্তি: কোভিড- ১৯ রোগের ভাইরাস প্রথম কিভাবে কবে কোথায় দেখা যায় তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অনুমান 2019 সালের 31 শে ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আক্রমণের এক মাসের মধ্যেই রোগীদের সংখ্যা মারাত্মক আকারে বাড়তে থাকে। তবে অন্য একদল চিকিৎসক দলের মতে অন্য কোন প্রাণী যেমন বাদুড় , প্যাঙ্গোলিন ইত্যাদি প্রাণীর মাধ্যমে এর মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে।
ভারতে করোনাভাইরাসের অবস্থা ঃ 30 শে জানুয়ারি 2020 সালে কেরালাতে উহান প্রদেশ থেকে ফেরা ছাত্রর প্রথম সংক্রমণ দেখা যায়। তারপর একে একে দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার, কলকাতা ,মুম্বাই, চেন্নাই ,এমন ভাবে গোটা ভারত ও তার পার্শবর্তী দেশসমুহ ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। ভারত সরকার নানা ব্যবস্থাপনার যেমন, 'গৃহবন্দী', সমস্ত কার্যালয়, স্কুল-কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রেখে এই ছোঁয়াচে রোগের থেকে বাঁচার চেষ্টা করা হয়। তবু এ প্রভাব ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। আবার নতুন রূপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ 2021 সালে হানা দেয়। মৃত্যুর মিছিলে ভারতের অবস্থা বিশ্বের মধ্যে প্রথমে উঠে আসে। তবে বর্তমানে টিকাকরণের মাধ্যমে এই রোগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও সম্পূর্ণ নিধন করা যায়নি।
করোনার লক্ষণ সমূহ: করোনা ভাইরাসের আক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণত দুই দিন থেকে 14 দিনের মধ্যে যে লক্ষণসমূহ দেখা যায় --1. সর্দি 2.গলা ব্যথা 3.কাশি 4. মাথাব্যথা 5.জ্বর 6.হাঁচি এবং শ্বাস নিতে অস্বাভাবিক কষ্ট হওয়া ইত্যাদি।
করোনার প্রতিকার: করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা পদ্ধতি বর্তমানেও আবিষ্কার করা যায়নি। তবে বর্তমানে টিকা প্রদানের মাধ্যমে কিছুটা নিয়ন্ত্রন করা গেছে। এই ভাইরাস সংক্রমণের থেকে রক্ষা পেতে নিম্নলিখিত বিধি মেনে চলা আবশ্যক----
1.হাঁচি-কাশির পর হাত ধুয়ে নিতে হবেত 2. কাশির বা হাসির আগে মুখ ঢেকে রাখতে হবে। 3. যদি মনে হয় কোন ব্যক্তি কোভিড নাইনটিন আক্রান্ত হয়েছ, তবে তার থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখতে হবে ও তার সংসর্গ এড়িয়ে চলতে হবে। 4. নিজেকে সবসময় হাইড্রেট রাখতে হবে। 5. বাইরে গেলে আবশ্যিকভাবে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে এবং কমপক্ষে 1 মিটার এর দূরত্ব বজায় রাখতে হবে 6. আক্রান্ত হয়েছে তাকে তাড়াতাড়ি চিকিৎসালয় নিয়ে যেতে হবে।
নাগরিক কর্তব্য: আমাদের উচিত সরকার নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলা এবং টীকাকরণে অংশ নেওয়া। সামাজিক দূরত্ব অবলম্বন এবং মাস্ক-স্যানিটাইজার ইত্যাদির বহুল ব্যবহার করা। করোনা আক্রান্তকে যথাসম্ভব উপায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া।
ভবিষ্যৎ: বিশ্বের অর্থনীতি একেবারে তলানিতে, সর্বোপরি শিক্ষা সঙ্কটের মুখমুখি। উন্নয়নের চাকা ত্বরণ হারিয়ে প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী প্রজন্ম হয়ত গভির হতাশার। আমাদের উচিত আর অবহেলা না করা সচেতন হওয়া ও সাধারণ জীবনে ধীরে ধীরে সঠিক সুরক্ষার মাধ্যমে পদার্পণ করা।
উপসংহার: কোভিড- ১৯ যদিও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে কিন্তু সতর্কতার মাধ্যমে এই মারন রোগকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সারা বিশ্ব আজ চিকিৎসক, বিজ্ঞানী দিকে তাকিয়ে। বিশ্বাস চিকিৎসাবিজ্ঞানের হাত ধরে এই খারাপ সময় আমরা নিশ্চয়ই উতরে যেতে পারবো এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারব। একদিন করোণা নামের আতঙ্কের অবসান ঘটবে আমাদের জীবন থেকে।