যেমন বাজনা তেমন নাচ: বৌদিমণিদের লক্ষ্মী পূজার দশমীতে মেহারন
লক্ষ্মী পূজার দশমী বাঙালি সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দময় উৎসব। এই দিনে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়, দেবী লক্ষীর মূর্তি বিসর্জন করা হয়, আর সারা পরিবেশ এক ধরনের শোক ও আনন্দের মিশ্রণে ডুবে যায়। তবে এই দিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং জীবন্ত মুহূর্তগুলো তৈরি হয় যখন বৌদিমণিরা মেতে ওঠেন এক উত্তাল নাচে, আর তাদের নাচের সঙ্গী হয় মেহারনের বাজনা।
মেহারন—এক ধরনের সুরেলা ঢোল—যা কেবলমাত্র পূজা বা উৎসবে ব্যবহৃত হয়, তার তালে তালে বৌদিমণিদের নাচ যেন পূজার আনন্দের এক গভীরতা তৈরি করে। এই দৃশ্য, একদিকে পূজার সৌন্দর্য, অন্যদিকে বাঙালি সংস্কৃতির এক অমূল্য রূপ। মেহারনের বাজনায় তালে তালে যে নাচ চলে, সেটি এক ধরনের ঐতিহ্য, যেখানে "যেমন বাজনা, তেমন নাচ" এর বাস্তব রূপ দেখানো হয়।
মেহারনের বাজনা: সুরের অদ্ভুত শক্তি
মেহারনের বাজনা, যেটি সাধারণত ঢোল বা অন্যান্য বাঁশির সুরে মিশে যায়, পূজার আনুষ্ঠানিকতা, উৎসব এবং আনন্দের সময় এক বিশেষ শক্তি তৈরি করে। মেহারনের ঢোলের গম্ভীর ধ্বনি, তার অস্থির গতিতে বাড়তে থাকা তালে তালে—পুরো পরিবেশ যেন এক নতুন জীবন পায়। মেহারনের বাজনা কেবল সুর নয়, এটি অনুভূতির এক অদ্ভুত প্রকাশ, যা পূজার দিনে শোভাযাত্রা বা মন্দিরে এক বিশেষ ধ্বনির সৃষ্টি করে।
তবে, মেহারনের বাজনা বিশেষভাবে বৌদিমণিদের নাচের সঙ্গী হয়ে ওঠে। বাজনার ছন্দে তাদের নাচ যেন এক অদ্ভুত সমন্বয়, যেখানে নাচের প্রতি পদক্ষেপের সাথে বাজনার প্রতিটি ঝংকার একত্রিত হয়ে পরিবেশে এক নতুন রূপ তৈরি করে। এই এক তালে মিলিয়ে চলে একটি শাশ্বত প্রথা, যেখানে "যেমন বাজনা, তেমন নাচ" এর মূলমন্ত্র অনুসরণ করা হয়।
বৌদিমণির উত্তাল নাচ: পূজার উল্লাস
বৌদিমণিরা, যারা প্রতিদিনের জীবনে ঘরকন্না, পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল, পূজার দিন এসে এক ধরনের মুক্তি খোঁজেন। লক্ষ্মী পূজার দশমীতে যখন তারা মেহারনের বাজনার সুরে নাচতে শুরু করেন, তখন সেটি শুধু এক আনন্দের প্রকাশ নয়, এটি তাদের স্বাধীনতারও একটি ছোট্ট প্রতীক।
নাচের প্রতিটি পদক্ষেপে, বৌদিমণিরা যেন তাদের আধ্যাত্মিক সত্তা প্রকাশ করেন। তাদের শরীরের প্রতিটি আন্দোলন মেহারনের বাজনার তালে তালে একে অপরের সাথে মিশে যায়। কিভাবে তারা ঢোলের সুরে ঘুরে, দুলে, নাচেন—তা এক শাশ্বত দৃশ্য। গানের সুরের মধ্যে তারা ঢাকের সুরের তালে তালে মেতে ওঠেন, পুরানো রীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এক ঐতিহ্যবাহী আনন্দের অংশ হয়ে ওঠেন।
এমন নাচ শুধুমাত্র আনন্দ নয়, এটি এক ধরনের সাংস্কৃতিক প্রথা, যেখানে তারা নিজেদের মাটির প্রতি শ্রদ্ধা জানান, একই সঙ্গে দেবী লক্ষীর প্রতি প্রার্থনা করেন। এই নাচের মধ্যে পূজার পূর্ণতা ফুটে ওঠে। একদিকে যেমন আনন্দ ও উল্লাস, অন্যদিকে শুদ্ধতা এবং ধর্মীয় ভক্তির মিশ্রণ থাকে।
মাঠে উত্তাল পরিবেশ:
পুরো মাঠে যখন বৌদিমণির উত্তাল নাচ এবং মেহারনের বাজনা মিশে যায়, তখন সারা পরিবেশ এক নতুন রূপ নেয়। মাঠের এক কোণে ঢোলের আওয়াজ, আর অন্য কোণে নাচের ঢেউ। মেহারনের বাজনা যেন পুরো পরিবেশে রঙ্গের সুর ছড়িয়ে দেয়, এবং নাচের তালে তালে সেই রং আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
এটি যেন এক মেলা—আনন্দ, উৎসব, পূজা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য—সবকিছু একসাথে মিলেমিশে এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি করে। এই মুহূর্তে, সবার মন এক হয়ে যায়, সবাই মিলে পূজার আনন্দে হারিয়ে যায়।
মেহারনের বাজনায় পূজার ঐতিহ্য:
মেহারনের বাজনা কেবলমাত্র আনন্দেরই প্রকাশ নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। এটি বাঙালি জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, বিশেষত পূজার সময়, যখন সঙ্গীত এবং নাচের সাথে মিশে যায় এক ঐতিহ্য, যা সমাজের একতা এবং পারস্পরিক সম্মান প্রতিষ্ঠিত করে।
পুরো মাঠে, মেহারনের বাজনার সুর, বৌদিমণির উত্তাল নাচ—এই দৃশ্য সত্যিই বাঙালি সংস্কৃতির এক অমূল্য রত্ন।
---
SEO হ্যাশট্যাগ: #মেহারন_বাজনা
#লক্ষী_পূজা_দশমী
#বৌদিমণির_নাচ
#পূজার_আনন্দ
#বাঙালি_সংস্কৃতি
#পূজা_দর্শন
#উত্তাল_নাচ
#ঢাক_বাজনা
#লক্ষী_পূজা_২০২৫
#বাঙালি_উৎসব
#মাঠে_পূজা
#বাজার_খোলা
#পূজা_শোভা
#রাজেশ_ঢাকি
Информация по комментариям в разработке