১. তিনি ভ্ৰকুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন(১),
(১) عبس শব্দের অর্থ রুষ্টতা অবলম্বন করা এবং চোখে মুখে বিরক্তি প্ৰকাশ করা। تولى শব্দের অর্থ মুখ ফিরিয়ে নেয়া। [জালালাইন]
২। যেহেতু তার নিকট অন্ধ লোকটি আগমন করেছিল। [1]
[1] ইবনে উম্মে মাকতূমের আগমনে নবী (সাঃ) এর চেহারায় যে বিরক্তিভাব ফুটে উঠেছিল তাকে عبس শব্দ দ্বারা এবং তাঁর অমনোযোগী হওয়াকে تولى শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩। কিসে জানাবে তোমাকে, হয়তো বা সে পরিশুদ্ধ হত। [1]
[1] অর্থাৎ, সেই অন্ধ ব্যক্তি তোমার নিকট থেকে দ্বীনী পথনির্দেশ লাভ করে সৎকর্ম করত যার কারণে তার চরিত্র ও কর্ম সুন্দর হত, তার আভ্যন্তরীণ অবস্থাও শুদ্ধ হয়ে যেত এবং তোমার নসীহত শুনে সে উপকৃত হতে পারত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪. অথবা উপদেশ গ্ৰহণ করত, ফলে সে উপদেশ তার উপকারে আসত।(১)
(১) অর্থাৎ আপনি কি জানেন এই সাহাবী যা জিজ্ঞেস করেছিল তা তাকে শিক্ষা দিলে সে তা দ্বারা পরিশুদ্ধ হতে পারত কিংবা কমপক্ষে আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ করে উপকার লাভ করতে পারত। [দেখুন: মুয়াস্সার; সাদী]
৫। পক্ষান্তরে যে লোক বেপরোয়া, [1]
[1] অর্থাৎ বেপরোয়া ঈমান থেকে এবং সেই জ্ঞান থেকে যা তোমার কাছে আল্লাহর তরফ হতে এসেছে। অথবা এ আয়াতের দ্বিতীয় অর্থ হল যে, যে অভাবশূন্য ও ধনী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬। তুমি তার প্রতি মনোযোগ দিলে। [1]
[1] এতে নবী (সাঃ)-কে অধিক সতর্ক করা হয়েছে যে, বিশুদ্ধচিত্তদেরকে ছেড়ে বৈমুখদের জন্য মনোযোগ ব্যয় করা ঠিক নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭। অথচ সে পরিশুদ্ধ না হলে তোমার কোন দোষ নেই। [1]
[1] কেননা, তোমার কাজ তো কেবল প্রচার করা। সুতরাং এই শ্রেণীর কাফেরদের পিছনে পড়ার কোন প্রয়োজন নেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮। পক্ষান্তরে যে তোমার নিকট ছুটে এল, [1]
[1] এই আশা করে যে, তুমি তাকে মঙ্গলের প্রতি পথ প্রদর্শন করবে এবং ওয়ায-নসীহত দ্বারা উপদেশ প্রদান করবে।
৯। সভয় মনে, [1]
[1] অর্থাৎ, আল্লাহর ভয়ও তার হৃদয়ে আছে, যার কারণে আশা করা যায় যে, তোমার বাণী তার জন্য উপকারী হবে। আর সে তা গ্রহণ করবে এবং তার উপর আমল করবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-১০। তুমি তার প্রতি বিমুখ হলে! [1]
[1] অর্থাৎ, এমন লোকের প্রতি কদর করা উচিত, বৈমুখ হওয়া উচিত নয়। এই সমস্ত আয়াত দ্বারা জানা যায় যে, দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে ইতর-বিশেষ করা উচিত নয়। বরং মর্যাদাবান ব্যক্তি হোক চাই অমর্যাদাবান, রাজা হোক চাই ফকীর, সর্দার হোক কিংবা গোলাম, পুরুষ হোক অথবা নারী, ছোট হোক চাই বড় সকলকে একই মর্যাদা দান করা এবং সমষ্টিভাবে সম্বোধন করা উচিত। আল্লাহ তাআলা যাকে চাইবেন নিজের হিকমতানুযায়ী তাকে হিদায়াত দিবেন। (ইবনে কাসীর)
১১। কক্ষনো (এরূপ করবে) না।[1] এটা তো উপদেশবাণী;
[1] অর্থাৎ, গরীব-মিসকীন ব্যক্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আর ধনবান ব্যক্তির প্রতি খাস মনোযোগ দেওয়া ঠিক নয়। এর ভাবার্থ হল যে, আগামীতে যেন পুনর্বার এইরূপ না ঘটে।
১২। যে ইচ্ছা করবে সে তা স্মরণ রাখবে (ও উপদেশ গ্রহণ করবে)।[1]
[1] অর্থাৎ, যে ব্যক্তি তাতে আগ্রহ রাখে সে যেন তা হতে উপদেশ গ্রহণ করে। তাকে মুখস্থ করে এবং তার প্রতি আমল করে। আর যে তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অমনোযোগিতা দেখায় - যেমন কুরাইশদের মর্যাদাবানরা করেছিল - তো তাদের ব্যাপারে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৩। সম্মানিত পত্রসমূহে (লওহে মাহফূযে তা লিপিবদ্ধ আছে)। [1]
[1] অর্থাৎ, লওহে মাহ্ফূযে সংরক্ষিত আছে। কেননা, সেখান হতেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অথবা এর মর্মার্থ এই যে, এই সহীফা আল্লাহর নিকটে বড় মর্যাদাপূর্ণ বস্তু। কেননা, তা প্রজ্ঞা ও জ্ঞানে ভরপুর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪। যা উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ, পূত-পবিত্র। [1]
[1] مرفوعة অর্থাৎ, আল্লাহর নিকটে মর্যাদাপূর্ণ। অথবা এটা সন্দেহ এবং পরস্পরবিরোধিতা থেকে বহু উচ্চে। مطهرة অর্থাৎ, সেটি একেবারে পূত-পবিত্র। কেননা, তাকে পবিত্র লোক (ফিরিশতা)গণ ছাড়া কেউ স্পর্শ করে না। কিংবা তা কম-বেশী হতে পাক-পবিত্র।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫। এমন লিপিকারদের হস্ত দ্বারা (লিপিবদ্ধ)। [1]
[1] سفرة শব্দটি سافر এর বহুবচন। এর মানে দূত। এখানে এ থেকে উদ্দেশ্য হল ফিরিশতাদল। যাঁরা আল্লাহর ওহী তদীয় রসূল পর্যন্ত পৌঁছে থাকেন। অর্থাৎ, আল্লাহ এবং রসূলের মাঝে দূতের কর্ম আঞ্জাম দেন। এই কুরআন এমন দূতগণের হাতে থাকে যাঁরা তা লাওহে মাহ্ফূয থেকে বহন করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬। (যারা) সম্মানিত ও পুণ্যবান (ফিরিশতা)। [1]
[1] চরিত্রের দিক দিয়ে তাঁরা হলেন সম্মানিত; অর্থাৎ, শ্রদ্ধেয় এবং বুযুর্গ। আর কর্মের দিক দিয়ে তাঁরা পুণ্যবান ও পবিত্র। এখান থেকে জানা যায় যে, কুরআন বহনকারী (হাফেয এবং আলেমগণ)-কেও চরিত্র এবং কর্মের দিক দিয়ে ‘কিরামিম বারারাহ’র মূর্ত-প্রতীক হওয়া উচিত। (ইবনে কাসীর) হাদীসেও ‘সাফারাহ’ শব্দ ফিরিশতাদের জন্য ব্যবহার হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে কুরআন পাঠ করে এবং তাতে সুদক্ষ হয়, সে ‘কিরামিম বারারাহ’র সাথে - অর্থাৎ, সম্মানিত পুণ্যবান ফিরিশতাগণের সাথী হবে। আর যে কুরআন পাঠ করে কিন্তু কষ্টের সাথে (আটকে আটকে) পাঠ করে তার জন্য ডবল সওয়াব রয়েছে।’’ (সহীহ বুখারী তাফসীর সূরা আবাসা, মুসলিম নামায অধ্যায়, কুরআনে সুদক্ষ হওয়ার মাহাত্ম্যের পরিচ্ছেদ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭। মানুষ ধ্বংস হোক! সে কত অকৃতজ্ঞ!
[1] এ থেকে সেই মানুষ উদ্দেশ্য, যে বিনা প্রমাণ ও দলীলে কিয়ামতকে অস্বীকার করে। قتل অভিশপ্তের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। ما أكفره ফে’ল তাআজ্জুব। অর্থাৎ, কত বড় অকৃতজ্ঞ ও নিমকহারাম সে! পরবর্তীতে এই অকৃতজ্ঞ মানুষকে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে, যাতে সে কুফরী হতে ফিরে আসে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯। শুক্রবিন্দু হতে তাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে সুপরিমিত করেছেন।
[1] অর্থাৎ, যার জন্ম এমন ঘৃণিত পানির বিন্দু থেকে, তার কি অহংকার করা শোভা পায়?
[2] এর ভাবার্থ হল যে, তাকে তার প্রয়োজনীয় কল্যাণ দান করা হয়েছে;
80: সূরা 'আবাসা ও বাংলা অনুবাদ | عبس | Surah Abasa with bangla translation | Saifullah khan
Al Quran আল কোরআন মানবতার সমাধান
Информация по комментариям в разработке