Скачать или смотреть শ্রীমদ্ভাগবতম(১ম স্কন্ধ, ৩য় অধ্যায়, শ্লোক ১৬-২০)। প্রবক্তা : উত্তম স্বরূপ নিতাই দাস।।

শ্রীমদ্ভাগবতম, স্কন্ধ ১, অধ্যায় ৩, শ্লোক ১৬-২০: বিস্তারিত ব্যাখ্যা

শ্রীমদ্ভাগবতের প্রথম স্কন্ধের তৃতীয় অধ্যায়ে ভগবানের বিভিন্ন অবতারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই অংশটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি কলিযুগের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ অবতারের ইঙ্গিত দেয়।

শ্লোক ১৬

শ্লোক:

ততঃ সপ্তদশে জাতঃ সত্যবত্যাং পরাশরাৎ। চক্রে বেদতরোঃ শাখা যদৃষ্টির্বীতরোহধাত্।।

ব্যাখ্যা:

এই শ্লোকে বেদব্যাসের (কৃষ্ণদ্বৈপায়ন) আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে যে তিনি পরাশর মুনি ও সত্যবতীর সপ্তদশ পুত্র রূপে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর এই অবতারে তিনি বেদবৃক্ষের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা রচনা করেন। এই কর্মের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের সীমাবদ্ধ বুদ্ধি এবং স্বল্প আয়ুর কারণে বেদের বিশাল জ্ঞানকে সহজবোধ্য করে তোলা। বেদকে তিনি ঋক, যজুঃ, সাম ও অথর্ব—এই চার ভাগে বিভক্ত করেন এবং পুরাণ, মহাভারত ইত্যাদি রচনা করে বেদ জ্ঞানকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেন। এই কাজটি তাঁর দূরদৃষ্টির ফল ছিল, কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ভবিষ্যতে মানুষ বেদ অধ্যয়ন ও অনুধাবনে অক্ষম হবে।

শ্লোক ১৭

শ্লোক:

দেবকার্য্যায় সংজাতঃ সুরকার্য্যচিকীর্ষয়া। নরসিংহবপুঃ শ্লোকৈর্বিজিতঃ সাতিঃ।।

ব্যাখ্যা:

এই শ্লোকে ভগবান নৃসিংহদেবের অবতারের কথা বলা হয়েছে। যখন হিরণ্যকশিপু নামক অসুর নিজের তপস্যার শক্তিতে সমস্ত দেবতাকে পরাজিত করে ত্রিলোকের উপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং ভক্ত প্রহ্লাদকে নানাভাবে নির্যাতন করছিল, তখন দেবতাদের প্রার্থনা ও ভক্তের আর্তনাদ শুনে ভগবান নৃসিংহদেব রূপে আবির্ভূত হন। তিনি অর্ধেক নর এবং অর্ধেক সিংহ রূপে প্রকাশ পেয়েছিলেন এবং হিরণ্যকশিপুর বরকে সম্মান রেখে তাকে বধ করেন। তাঁর এই রূপ ছিল ভয়ংকর কিন্তু ভক্তের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এই অবতার দেবকার্য সাধনের জন্য এবং সুরদের (দেবতাদের) মনোরথ পূর্ণ করার জন্য হয়েছিল।

শ্লোক ১৮

শ্লোক:

বামনরূপী বিপ্রর্ষে সর্বাতিগতিকায় চ। বলিং চাপহৃচ্ছক্রস্য ত্রিলোকং সংস্থাপয়িষ্যতি।।

ব্যাখ্যা:

এই শ্লোকে বামন অবতারের বর্ণনা করা হয়েছে। ভগবান কশ্যপ মুনির ঔরসে এবং অদিতি দেবীর গর্ভে বামন রূপে আবির্ভূত হন। তিনি ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণ কুমার। যখন বলি মহারাজ তার যজ্ঞের মাধ্যমে স্বর্গের অধিপতি হওয়ার চেষ্টা করছিলেন এবং দেবতারা নিজেদের বাসস্থান হারাচ্ছিলেন, তখন ভগবান বামন রূপে বলি মহারাজের কাছে তিন পা ভূমি ভিক্ষা করেন। বলি মহারাজ তাকে সামান্য জ্ঞান করে এই দান দিতে সম্মত হন। কিন্তু বামনদেব তার ক্ষুদ্র রূপ পরিবর্তন করে বিশ্বরূপ ধারণ করেন এবং এক পায়ে স্বর্গ, দ্বিতীয় পায়ে মর্ত্য এবং তৃতীয় পায়ের জন্য বলি মহারাজের মাথাতে স্থান নিয়ে তাকে পাতালে পাঠিয়ে দেন। এইভাবে তিনি ইন্দ্রকে তার রাজ্য ফিরিয়ে দেন এবং দেবকার্য সম্পন্ন করেন।

শ্লোক ১৯

শ্লোক:

অষ্টাদশে জাতঃ সত্যবত্যাং পরাশরাৎ। পুরুষপ্রবরঃ শ্রীমান্ রামো ভার্গবসংজ্ঞয়া।।

ব্যাখ্যা:

এই শ্লোকে পরশুরাম অবতারের কথা বলা হয়েছে। যদিও শ্লোকে "অষ্টাদশে জাতঃ সত্যবত্যাং পরাশরাৎ" বলা হয়েছে, এই অংশের সঠিক অর্থ হল তিনি অষ্টাদশ অবতার এবং সত্যবতী ও পরাশরের সাথে তার কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। এখানে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। সঠিক তথ্য হলো, তিনি রেণুকা দেবীর পুত্র এবং জমদগ্নি মুনির সন্তান। তিনি ছিলেন ভার্গব বংশের শ্রেষ্ঠ পুরুষ। তিনি পৃথিবীতে দুষ্কৃতকারী ক্ষত্রিয় রাজাদের দমন করার জন্য এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি একুশবার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করেছিলেন এবং অসীম বীরত্বের অধিকারী ছিলেন।

শ্লোক ২০

শ্লোক:

ঊনবিংশে বিংশতিমে বৃষ্ণিষু প্রাপ্য জন্মনি। রামকৃষ্ণাবিতি ভুবো ভগবান্ হরতি তনুতাম্।।

ব্যাখ্যা:

এই শ্লোকে বলরাম এবং কৃষ্ণ এই দুই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবতারের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, এই ঊনবিংশ এবং বিংশতিমে অবতারে ভগবান বৃষ্ণিবংশে জন্মগ্রহণ করেন। এই দুই অবতার রূপে ভগবান পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে পৃথিবীর ভার হরণ করেন। এখানে 'তনুতাম্' শব্দটি পৃথিবীর ভারকে নির্দেশ করে, যা দুষ্কৃতকারী রাজা ও অসুরদের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরাম তাঁদের লীলার মাধ্যমে বহু অসুরকে নিধন করেন, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ধার্মিকদের রক্ষা করেন এবং ধর্মের প্রতিষ্ঠা করেন। এই অবতার যুগ-যুগ ধরে ভক্তদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

হ্যাশট্যাগ:

#শ্রীমদ্ভাগবতম

#ভাগবত

#অবতার

#দশাবতার

#বেদব্যাস

#নৃসিংহদেব

#বামনদেব

#পরশুরাম

#বলরাম

#শ্রীকৃষ্ণ

#ধর্মরক্ষা

#কলিযুগ

#ভক্তিবাদ

#সনাতনধর্ম

#পৌরাণিককথা