Скачать или смотреть Eid al Adha: The Complete Story of Sacrifice

কুরবানীর সেই সম্পূর্ণ কল্পনার গল্প

অধ্যায় ১ : নিস্তব্ধ রাতের স্বপ্ন

নীরব আকাশ, তারা ভরা রাত। চারপাশ নিঝুম, শুধু হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। তখনই নবী ইব্রাহিম (আঃ) গভীর ঘুমে ডুবে আছেন।
স্বপ্নে তিনি শুনলেন এক রহস্যময় ডাক—
“হে ইব্রাহিম, তুমি কোরবানী করো!”

চমকে জেগে উঠলেন তিনি। ভেবেছিলেন হয়তো আল্লাহ চাইছেন পশু কোরবানী। তাই ভোরে শত উট কোরবানী দিলেন।
কিন্তু পরের রাতেও একই স্বপ্ন, আবারও কোরবানীর নির্দেশ। আবার শত উট কোরবানী করলেন।
তৃতীয় রাতে আবারও সেই স্বপ্ন—
“তুমি তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কোরবানী করো!”

ইব্রাহিম (আঃ) কাঁপতে কাঁপতে ভাবলেন—
“আমার সবচেয়ে প্রিয় তো আমার ইসমাইল… আল্লাহ তাঁকেই চাইছেন।”

অধ্যায় ২ : সন্তানের জন্য মায়ের অশ্রু

সকালবেলা ইব্রাহিম (আঃ) ছেলেকে ডাকলেন—
“বৎস, গোসল করো, সুন্দর জামা পরো। আজ আমরা এক দাওয়াতে যাব।”

শিশু ইসমাইল (আঃ) উচ্ছ্বসিত হয়ে মায়ের কাছে দৌড়াল।
“আম্মা! আব্বা আমাকে দাওয়াতে নিয়ে যাবে!”

মা হাজেরা (আঃ) আনন্দে সাজিয়ে দিলেন ছেলেকে। কিন্তু স্বামীকে বললেন—
“ওকে চোখের আড়াল করবেন না।”
ইব্রাহিম (আঃ) নীরবে মাথা নত করলেন। বুকের ভেতর তুফান বয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারলেন না।

অধ্যায় ৩ : শয়তানের কুমন্ত্রণা

মিনার পথে যাত্রা শুরু হলো। হঠাৎ ইবলিশ হাজেরার কাছে এসে বলল—
“তুমি জানো না? তোমার স্বামী তোমার সন্তানকে জবাই করতে নিয়ে যাচ্ছে!”
হাজেরা (আঃ) তেজস্বিনী কণ্ঠে বললেন—
“আমার স্বামী আল্লাহর নবী। তিনি ধোঁকা দেন না। আল্লাহ যদি চান, আমি রাজি।”
শয়তান ব্যর্থ হলো।

এরপর সে ইসমাইল (আঃ)-এর কাছে গেল।
বলল—“তোমার পিতা তোমাকে হত্যা করবে।”
ইসমাইল (আঃ) দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিলেন—
“যদি আল্লাহ আমাকে চান, তবে আমি খুশি মনে জীবন দেব। তুমি শয়তান!”
বলেই পাথর ছুঁড়ে মারলেন।
আজও হাজীরা সেই স্মৃতিতে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করেন।

অধ্যায় ৪ : পুত্রের অনুরোধ

মিনা প্রান্তরে পৌঁছে ইব্রাহিম (আঃ) স্বপ্নের কথা খুলে বললেন।
ইসমাইল (আঃ) শান্ত মনে উত্তর দিলেন—
“আব্বা, আপনি যা আদেশ পেয়েছেন তাই করুন। তবে আমার কিছু অনুরোধ আছে।

১. হাত-পা বেঁধে দেবেন—যেন মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করলে আপনার গায়ে না লাগে।
২. চোখ বেঁধে দেবেন—যেন আপনাকে দেখে আপনার হাত কাঁপে না।
৩. আমার জামা আম্মার কাছে দিয়ে দেবেন—বলবেন, আমি আল্লাহর পথে কোরবানী হয়েছি।”

ইব্রাহিম (আঃ)-এর চোখ ভিজে উঠল, কিন্তু তিনি দৃঢ় থাকলেন।

অধ্যায় ৫ : আল্লাহর পরীক্ষা

বিসমিল্লাহ বলে ছুরি চালালেন তিনি। কিন্তু আশ্চর্য! ছুরি এক পশমও কাটল না।
আল্লাহ ছুরিকে আদেশ করেছিলেন—
“ইসমাইলের গায়ে আঁচড় দেবে না।”

বারবার ছুরি চালিয়েও ফল হলো না। ঠিক তখন আসমান থেকে জিবরাঈল (আঃ) এলেন, সঙ্গে এক জান্নাতি দুম্বা।
ইসমাইল (আঃ)-এর বদলে সেই দুম্বা কোরবানী হলো।

আল্লাহ ঘোষণা করলেন—
“হে ইব্রাহিম, তুমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে। তুমি আর তোমার পুত্র উভয়েই আমার সন্তুষ্টি অর্জন করেছো।”

অধ্যায় ৬ : শতাব্দী পরে আরেক গল্প

অনেক বছর পর, দূর এক গ্রামের এক দরিদ্র মানুষ আর তার স্ত্রী। তাদের কোনো সন্তান ছিল না। একদিন এক ছাগল জন্ম নিল, কিন্তু জন্মের পরই তার মা মারা গেল।
তারা ছাগলটিকে নিজের সন্তানের মতো বড় করতে লাগল।

তারা কম দামি খাবার খেলেও ছাগলটিকে খাওয়াত দুধ, ফল, ঘি, শুকনো ফল।
সে অসুস্থ হলে রাত জেগে চিন্তা করত।
লোকটি অসুস্থ হলে ছাগলটিও খাওয়া বন্ধ করত।
সে যেন বোবা প্রাণী নয়, তাদের আপন সন্তান।

প্রতিদিন সে গোসল করত, শরীরে তেল মাখত। গ্রামের মানুষ বলত—
“এ ছাগল নয়, এ তো আপন সন্তান।”

অধ্যায় ৭ : শেষ বিদায়

একদিন হঠাৎ লোকটির স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো। চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন।
তাই বাধ্য হয়ে সে ছাগলটিকে কোরবানীর হাটে নিয়ে গেল।

হাটে ঢুকতেই ছাগলটি কাঁদতে শুরু করল। মালিককে আঁকড়ে ধরল, যেন বলতে চাইছে—
“আমাকে ছেড়ে যেও না।”

মানুষজন অবাক হয়ে গেল।
“এমন কান্না তো আর কোনো পশু করে না।”

লোকটির চোখে জল এলো। বলল—
“এ আমার সন্তান। কিন্তু আজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমি ওকে কোরবানী দিতে প্রস্তুত হয়েছি।”

অধ্যায় ৮ : চিরন্তন শিক্ষা

হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর কাহিনী আর এই সাধারণ মানুষের কাহিনী—
দুটো গল্পই একই সত্য শেখায়।

👉 কোরবানী মানে শুধু পশু জবাই নয়।
👉 কোরবানী মানে হলো ত্যাগ।
👉 আল্লাহর জন্য নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসকেও উৎসর্গ করার মানসিকতা।

এই ত্যাগের শিক্ষা আজও কোটি মুসলমানের হৃদয়ে জীবন্ত।

🌸 এভাবেই কোরবানীর কল্পনার গল্প সম্পূর্ণ হলো।