Скачать или смотреть সাদা ঘুঘু পালন। White Dove Farming

সাদা ঘুঘু পালন। White Dove Farming
খামারে অস্ট্রেলিয়ান জাতের কয়েকটি সাদা রঙের ঘুঘু

ঘুঘু মূলত পায়রা জাতীয় পাখি । ঘুঘু সাধারণত মাঠে-ঘাটে ও বাগানে সর্বত্রই দেখা যায় । ঘুঘু ও কবুতর একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত । এই শ্রেণীতে পাখি রয়েছে ৩১০ প্রজাতির । এর মধ্যে ঘুঘু রয়েছে ৩৬ প্রজাতির । ঘুঘু প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় ৬ প্রজাতির । আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, পিতরাজ ঘুঘু । এদের পালকের রং, বুকের নিচে ধূসর, পিঠ বাদামি, গলায় কালোর মধ্যে সাদা ফোটা ফোটা স্পর্ট থাকে । এদের ঠোঁট লালচে বাদামি হয়ে থাকে । পিতরাজ ঘুঘু লম্বায় সাধারণত ২৮ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে । বাংলাদেশে গৃহপালিত ঘুঘুর মধ্যে একটি জাতি হলো, গ্রে ডায়মন্ড বার্ড । এটি একটি অস্ট্রেলিয়ান জাতের ঘুঘু ।



ওজন মাত্র ৩০ থেকে ৩২ গ্রাম । লম্বায় ১৯৩ থেকে ২১৩ মিলিমিটার হয়ে থাকে । ছোট বাচ্চা অবস্থায় এদের গায়ের রং ধূসর । পূর্ণবয়স্ক হলে, এদের ডানার রং আস্তে আস্তে সাদায় পরিবর্তিত হয় । একটি পূর্ণবয়স্ক ঘুঘু যখন ডিম উৎপাদনের সময় উপযোগী হয়, তখন চোখের বৃত্ত ছোট হয়ে যায় । পুরুষ ঘুঘুর চোখের বৃত্তের রং হয়, কমলা অথবা লাল । পরিধি মাত্র দুই থেকে তিন মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে যায় । স্ত্রী ঘুঘুর রং বাদামী ধূসর রঙের হয়ে থাকে । একটি ঘুঘু ১০ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত আয়ুকাল বেঁচে থাকে । অনেক সময় ২০ থেকে ২১ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে । ঘুঘু ৬ মাস বয়স হলেই ডিম পাড়তে শুরু করে এবং প্রতি মাসে ডিম পেড়ে বাচ্চার জন্ম দেয় ।
রাজশাহীর পবা উপজেলার হুজুরিপাড়া ইউনিয়নের ঘিপাড়া গ্রামের তরুণ ঘুঘুপ্রেমিক গোলাম মোদাচ্ছের শখের বশে কয়েকটি বিদেশি জাতের ঘুঘু কিনে বাড়িতে লালন-পালন শুরু করেন। সেই শুরু। এর পর থেকে তাঁর সংরক্ষণে ঘুঘুর সংখ্যা বাড়তেই থাকে। একসময় ঘুঘুর জন্য খামারই গড়ে তুলতে হয় তাঁকে। মাত্র দুই বছরের মাথায় এখন তাঁর খামারে বিদেশি ঘুঘুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১০। এরই মধ্যে তিনি অন্তত ৫৫ হাজার টাকার ঘুঘু বিক্রি করেছেন। এভাবে চলতে থাকলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে কেবল ঘুঘু পালন করেই প্রতি মাসে অন্তত ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশাবাদী এই শখের ঘুঘু খামারি।

মোদাচ্ছের জানান, ঘুঘুর প্রতি তাঁর ভালোবাসা শৈশব থেকেই। বাড়ির আশপাশে ঘুঘুর ডাক শুনলে বা ঘুঘু দেখলেই তিনি সেগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করতেন। আবার কেউ যেন শিকার করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখতেন। ঘুঘুর প্রতি এই প্রেম থেকে একসময় বাড়িতে এ জাতের পাখি পালনের শখ জাগে। তবে দেশি প্রজাতির ঘুঘু খাঁচায় পালন করা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে তিনি সেদিকে পা না বাড়িয়ে বিদেশি জাতের ঘুঘু পালনের সিদ্ধান্ত নেন।

বছর দুয়েক আগে তিনি ঢাকা থেকে বিদেশি জাতের দুই জোড়া ঘুঘু কিনে আনেন। এর মধ্যে এক জোড়া ছিল গ্রে ডায়মন্ড ডাভ বা ধূসর বর্ণের ঘুঘু এবং অন্য জোড়া


সিলভার ডায়মন্ড। এই ঘুঘু জোড়া অস্ট্রেলিয়ান জাতের। এর পর থেকে তাঁর খামারে ঘুঘুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে তাঁর খামারে বেশ কিছু অস্ট্রেলিয়ান সাদা ঘুঘু রয়েছে। সেখান থেকে ক্রস প্রজননের মাধ্যমে বিভিন্ন রঙের ঘুঘু জন্ম নিয়েছে তাঁর খামারে। আর এসব ক্রস ঘুঘু দেখতেও অনিন্দ্যসুন্দর।

মোদাচ্ছের বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে প্রথম দিকে এক জোড়া দেশি ঘুঘুর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘুর মিলন ঘটানো হয়। এই সংকরায়নে ভালো ফল পাওয়া যায়। গ্রে ডায়মন্ড ও সিলভার ডায়মন্ড ঘুঘুর ডিম ফুটে ১২ থেকে ১৪ দিনেই বাচ্চা বের হয়। বড় হতে সময় লাগে ২১ দিন। এরপর আবার ওই ঘুঘু দ্রুত ডিম পাড়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। এভাবে ঘুঘু বছরে ১০ থেকে ১২ বার ডিম দেয় এবং সমপরিমাণ জোড়া বাচ্চা উৎপাদন হয়।

এই পাখি খামারি জানান, ডিম উৎপাদন উপযোগী এক জোড়া গ্রে ডায়মন্ড ঘুঘুর দাম দুই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। আর এক জোড়া সিলভার ডায়মন্ড ঘুঘুর দাম হয় তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ১৫ দিন থেকে দুই মাস বয়সের সিলভার ডায়মন্ড ঘুঘুর বাচ্চা বিক্রি হয়। ছয় মাস বয়স হলেই প্রতিটি বাচ্চা ঘুঘু পরিপূর্ণতা লাভ করে। ডিম পাড়ারও উপযোগী হয়ে ওঠে।

ঘুঘু পালন করা সহজ উল্লেখ করে মোদাচ্ছের জানান, শস্যদানা হলো ঘুঘুর প্রধান খাবার। এর মধ্যে ধান, সরিষা, মসুর অন্যতম। তবে প্রজননকালে ওদের ইটের উচ্ছিষ্ট খাওয়াতে হয়। অন্যদিকে ঘুঘুর রোগবালাইও খুব কম হয়। রোগের মধ্যে সাধারণত ঠাণ্ডা লাগা রোগে এরা আক্রান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা প্রতিরোধক ট্যাবলেট বা সিরাপ পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। খাঁচায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রেখেও ঠাণ্ডার আক্রমণ এড়ানো যায়।

গোলাম মোদাচ্ছেরের দেখাদেখি একই এলাকার কুমড়া পুকুরের হেফাজ উদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেনও শখের বশে ঘুঘু পালন শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

রাজশাহী বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র মতে, পৃথিবীতে ঘুঘুর প্রজাতি রয়েছে ৩৬টি। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় ছয়টি প্রজাতি। আফ্রিকা, ইউরোপ, ভারতীয় উপমহাদেশে এসব পাখির দেখা মেলে। এই ঘুঘু সাধারণত ১০ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত বাঁচে। অনেক ক্ষেত্রে ২১ বছর পর্যন্তও বাঁচতে পারে।

ঘুঘুর খামার করার ক্ষেত্রে আইনি বাধা প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মীজানুর রহমান বলেন, 'যেকোনো বন্য প্রাণী খাঁচায় পালন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি ঘুঘুর খামার করতে চায়, তাহলে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অনুমতির প্রয়োজন আছে। অনুমতি নিয়ে ঘুঘু পালন করা হলে আমাদেরও কোনো আপত্তি থাকবে না।'