বৃষ্টিতে এ কি কান্ড হলো। বৃষ্টিতে এ কি কান্ড হলো।
বৃষ্টি বৃষ্টি আর বৃষ্টি–আকাশ থেকে ধেয়ে নিচে নেমে আসা সেই বৃষ্টির রঙ দেখতে দেখতে হঠাৎ, হা হঠাতই অন্যমনস্কভাবে জিজ্ঞেস করে বসলো ভেরা, এইসব কথা সত্যিই আপনি বিশ্বাস করেন মিঃ লম্বার্ড? হলঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আবার কেমন আনমনা হয়ে পড়লো সে।
অদূরেই বসেছিল লম্বার্ড। ভেরার আচমকা প্রশ্ন শুনে তার মুখের দিকে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো সে, কোন্ কথাগুলো বলুন তো? আপনি কি মিঃ ওয়ারেেভর কথা বলতে চাইছেন?
হ্যাঁ, তাই তো।
কেন, অবিশ্বাসের কথা তো তিনি বলেন নি। তার প্রতিটি যুক্তিই তো যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, নয় কি?
একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না, তবু যেন অবাক করার মতো তার কথাগুলো। আমাদের মধ্যেই একজন খুনী লুকিয়ে আছে, এ যেন বিশ্বাস করতেও মন চায় না।
না চাওয়ার তো কোনো কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি না মিস্ ক্লেথন। আপনার কি মনে হয় না, আগাগোড়া ব্যাপরাটাই অবিশ্বাস্য? বিশেষ করে ম্যাকআর্থার খুন হওয়ার পর এখন একটা ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়ে গেছি, আমরা এক জব্বর খুনীর পাল্লায় পড়েছি।
তা যা বলেছেন, যেন এক একটা দুঃস্বপ্ন। উঃ তিন তিনটে খুন। ভাবাই যায় না। এর পর আরো কি কঠিন ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে, আমরা কেউ তা জানি না। একটু থেমে ভেরা জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা, আমাদের মধ্যে খুনী কে হতে পারে। আন্দাজ করতে পারেন?
তার মানে মৃদু হেসে বলল লম্বার্ড, আপনি মনে মনে ঠিক করে ফেলেছেন, আপনি ও আমি, আমরা দুজনেই অপরাধীর তালিকা থেকে বাদ। সত্যি কথা বলতে কি এ ব্যাপারে আপনার ওপর আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। পাগলামির কোনো লক্ষণই এ পর্যন্ত আমি দেখতে পাইনি আপনার মধ্যে। আর নিজের ব্যাপারে আমি জোর গলায় বলতে পারি, খুনী আমি নই, আর অপ্রকৃতস্থও নই। আপনার মতোই আমিও একজন নিরপরাধ সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ।
সত্যি, আপনার কথাগুলো কতোই না মিষ্টি। শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, যেন আমার কানে মধু বর্ষিত হচ্ছে। লজ্জায় আরক্ত মুখে ভেরা তাকালো তার মুখ পানে, ভেবে অবাক হচ্ছি, আপনার মতো এমন একজন নিষ্পাপ লোকের বিরুদ্ধেও ঐ শয়তানটা অভিযোগ আনলো কোন্ সাহসে।
আপনি সত্যিই বুদ্ধিমতী, একমাত্র আপনিই আমাকে ঠিক চিনেছেন, গদ গদ হয়ে বললো লম্বার্ড, তার কথায় মনে হচ্ছে, এখানে এসে আমি বুঝি মস্ত বড় একটা অপরাধ করে ফেলেছি। যে যাইহোক এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের দুজনকে বাদ দিলে অবশিষ্ট থাকে মোট পাঁচজন। এখন দেখতে হবে, এই পাঁচজনের মধ্যে কে খুনী, কে সেই উন্মাদ। কেন জানি না একেবারে শুরু থেকেই ঐ বুড়ো ভাম ওয়ারগ্রেভের ওপরেই আমার সব সন্দেহ গিয়ে পড়েছে। এসব ঘটনার পিছনে ওর কালো হাতই সক্রিয়।
শিউরে উঠলো ভেরা বিস্ময়াবিষ্ট স্বরে বললো ওয়ারগ্রেভের বিরুদ্ধে আপনার এমন ধারণা হওয়ার কি কারণ ঘটলো জানতে পারি?
কারণটা আমি নিজেই জানি না, বলবো কি করে। তবে এটুকু বুঝি, বুড়ো এখন বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছে, দীর্ঘ চাকরী জীবনে তাকে কোট কাছারী করে কাটতে হয়েছে, বহু জটিল খুনের মামলায় কাজীর বিচারে দেখাতে দেখাতে শেষ অবধি তিনি তার মাথাটাই খারাপ করে ফেলেছেন। এর পরিণাম যা হয় তাই হয়েছে। তিনি নিজেকে সর্বশক্তিমান পুরুষ বলে ভাবতে শুরু করেন হঠাৎ একদিন। মানুষের জীবন রক্ষা এবং জীবন খতম করা, এ দুটোই তার হাতের মুঠোয়, অতএব এখন এখানে যে সব অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলেছে, সেগুলো করতে তার আর বাধা কোথায়?
অসম্ভব কিছু নয়। অন্যের মনের খবর বোঝা মুশকিল।
এসব বলুন,রগার্স জানতে চাইলো, আপনার সন্দেহ কার ওপর?
ডঃ আর্মস্ট্রং, ওঁকেই আমার সন্দেহ হয়।
আমার সন্দেহের তালিকায় উনিই কিন্তু শেষ ব্যক্তি।
কোন যুক্তিতে? মৃদু প্রতিবাদ করলো ভেরা, আমরা জেনেছি, প্রথম দুজনের মৃত্যু হয়েছে বিষ প্রয়োগে। একমাত্র চিকিৎসকদের কাছেই সব সময়ে বিষ জাতীয় ওষুধ রাখা সম্ভব। তার ওপর এও তো হতে পারে, মিস্ রগার্সকে ঘুমের ওষুধের বদলে সরাসরি বিষ খাইয়ে থাকতে পারেন, পারেন না?
হুঁ, আপনার সন্দেহ অমূলক শুধু নয়, যথেষ্ট যুক্তিপূর্ণও বটে।
আমার আরো বলার আছে আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন, পাগল ডাক্তারকে ওপর থেকে ঠিক বোঝা যায় না। বোধহয় তাদের অতিরিক্ত পরিশ্রমের দরুণ পাগলামিটা চাপা পড়ে যায়।
আপনার সব যুক্তিই আমি মেনে নিচ্ছি, কিন্তু একটা হিসেবে কোথায় যেন গরমিল থেকে যাচ্ছে। আজ সকালে ডঃ আর্মস্ট্রং যেটুকু সময় একলা ছিলেন, তাতে অতদূর গিয়ে (যা ছুটে গেলেও সম্ভব নয়।) জেনারেল ম্যাক আর্থারকে খুন করে আবার ফিরে আসা সম্ভব ব্যাপার। অতএব
এরপর এখানে অতএবের কোন স্থান নেই। নিজের যুক্তির সমর্থনে ভেরা বলে হয়তো তখন তিনি সুবিধা মতো সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে যথা সময়ে তিনি তাঁর কাজটা হাসিল করে আবার ফিরে এসেছেন এখানে।
তা সেই সময়টাই বা কখন, এখন একটু খুলে বলবেন?
সেই যে মনে পড়ছে এবার আজ দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজের ঠিক একটু আগে একটু থেমে ভেরা আবার বলে অগ্রণী হয়ে আমাদের সকলকে টপকে তিনি যখন ডঃ ম্যাকআর্থারের কাছে ছুটে গেলেন, তখনি তার কাজ হাসিল হয়ে যায়।
লম্বার্ডের চোখে গভীর বিস্ময়। সত্যি, এ কথাতো আগে কখনো আমার মনে হয়নি। যাই হোক, কাজটা সারতে গিয়ে তাতে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছিল নিশ্চয়ই। তা আপনার বক্তব্য কি, এবার বলবেন?
কেন ঝুঁকি নিতে যাবেই বা কেন? জানেন তো, ডাক্তার হওয়ার অনেক বাড়তি সুযোগ সুবিধে আছে। যেমন ধরুন মৃত রোগীর নাড়ী টিপে বলে দিলেই হলো, ঘণ্টা খানেক আগে মারা গেছে। ব্যস, তাতেই কাজ হয়ে যাবে। বেদ বাক্য বলে চিকিৎসকদের মন্তব্যটা আমাদের মেনে নিতে হবে। ডাক্তারী জ্ঞান আমাদের নেই, তাই তাদের অঙ্গুলী হেলনে সায় দিতে হবে আমাদের।
অপূর্ব। অপূর্ব আপনার বিশ্লেষণ ক্ষমতা। উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় মুখর হয়ে উঠলো লম্বার্ড, বোঝা যাচ্ছে আপনার মাথায় যথেষ্ট পরিমাণ ঘিলু আছে মিস ক্লেথন। আমি ভেবে অবাক হচ্ছি, এতে সব ভাবনা আপনার মাথায় এলো কি করে?
ব্লোরের সান্নিধ্যে এসে অনেকক্ষণ থেকে উসখুস করছিল রগার্স কথাটা বলার জন্য। শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল সে, আমাদের মধ্যে খুনী কে হতে পারে মিঃ ব্লোর?
তেমন করে তো ভাবিনি এখনো।
মিঃ ওয়ারগ্রেভের কথা মতো আমাদের মধ্যে থেকে খুনীকে যদি টেনে বার করতে পারতাম, তাহলে
Информация по комментариям в разработке