________________________________________
১. কুরআনে বিজ্ঞানের প্রমাণ ও হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা
নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো যেগুলো ইসলামী উপাদানে আলোচিত হয় — অবশ্যই ব্যাখ্যা করার সময় সতর্ক থাকতে হবে যে কুরআন মূলত বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তক না, বরং ইমান, নৈতিকতা, সৃষ্টির প্রতীক, চিন্তা-উদ্দীপক বই।
জীবের উৎপত্তি-জল
• সূরা আল-আম্বিয়ার ২১:৩০ আয়াতে, সূরা আন-নূরের ২৪:৪৫ আয়াতে এবং সূরা ইবরাহিমের ৩২ আয়াত- এ
আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি "পানি থেকে প্রতিটি জীবন্ত জিনিস সৃষ্টি করেছেন"। এই আয়াতগুলি প্রমাণ করে যে, জীবনের জন্য পানি অপরিহার্য এবং সকল জীবন্ত বস্তুর মূল উৎস হলো পানি। এটি বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা বলে যে সমস্ত জীবের বেঁচে থাকার জন্য পানির প্রয়োজন। এই বচনে আজকের জীববিজ্ঞান দেখাচ্ছে যে প্রাণী কোষের প্রায় বড় অংশই পানি।
এই প্রেক্ষাপটে জানা যায়, হাদীসে (যেমন - মানব গর্ভের বিকাশবিধি-পর্ব আকারে আলোচনা রয়েছে, যা এই সৃষ্টির চক্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
লৌহ (Iron) “প্রেরণ”
আল্লাহ তা'আলা লৌহ বা লোহা নামক বস্তুকে নাজিল (প্রেরণ) করেছেন, যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি ও মানবজাতির জন্য নানাবিধ উপকারিতা। এখানে 'নাজিল' শব্দটি দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে লোহা এই পৃথিবী থেকে উৎপন্ন হয়নি, বরং আসমান থেকে এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ পরীক্ষা করতে চান যে, যারা আল্লাহকে না দেখেও তাঁর এবং তাঁর রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং তাঁদের সাহায্য করে। আয়াতটি আল-হাদিদ, সূরা ৫৭, আয়াত ২৫ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই আয়াতে বলা হয়েছে যে,
এখানে “প্রেরণ করেছি” (sent down) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে — আজ বিজ্ঞান বলছে, পৃথিবীতে লৌহ বড় অংশে মহাজাগতিক উৎস থেকে এসেছে (উদাহরণ¬ সরূপ -সুপারনোভা বা মেটিওরাইট)।
এটি হাদীসে সরাসরি নেই, তবে কুরআন-বাক্যবিশ্লেষণে এটা উল্লেখ করা হয়।
ব্রহ্মান্ডের সম্প্রসারণ (Expansion of the Universe)
কুরআনের এই আয়াতটি সূরা যারিয়াত (৫১), আয়াত ৪৭-এ রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে: "আকাশ (সৃষ্টি) আমরা শক্তি দিয়ে তৈরি করেছি, এবং অবশ্যই আমরা এটিকে (প্রসারিত) করছি"। এই আয়াতটি মহাবিশ্বের প্রসারণের ধারণার সাথে সম্পর্কিত, যেখানে আকাশ বা মহাকাশকে আল্লাহ তা'আলা শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং এটি প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে।
বিগ ব্যাং ও ব্রহ্মান্ডের সম্প্রসারণ বিষয়ক আধুনিক খুঁজ-নিরীক্ষার সঙ্গে মিল হতে পারে বলে অনেকেই দেখেন।
এখানে হাদীসে সরাসরি এই বিষয় নেই, তবে কুরআনের আয়াত চিন্তা-উদ্দীপক হিসেবে বিবেচিত হয়।
পর্বতগুলোর মূল (“Stake / Peg”) হিসেবে ভূমিকা
পবিত্র কুরআনের সূরা নাবা (৭৮:৬-৭) অনুযায়ী, আল্লাহ পৃথিবী ও পর্বতমালাকে স্থির রাখার জন্য সৃষ্টি করেছেন, যা 'ওয়াদ' (পেরেক)-এর মতো কাজ করে। এই আয়াতে বলা হয়েছে, "এবং পর্বতমালাকে পেরেকস্বরূপ (ওতাদাঁ)"। পর্বতগুলো ভূগর্ভে গভীরে প্রোথিত থাকে, যা পৃথিবীকে স্থির রাখতে সাহায্য করে, অনেকটা পেরেকের মতো যা কোনো কিছুকে স্থির রাখে।
o সূরা নাবা (৭৮:৬-৭) আয়াত: "আমি কি পৃথিবীকে বিছানা করিনি এবং পর্বতগুলোকে (ওতাদাঁ) পেরেক করিনি?"।
• আজ ভূগোল/ভূতত্ত্বে দেখা গেছে যে পর্বতগুলোর মূল ভূস্তর-ভিত্তিতে বেশ গভীরে ঢুকেছে, ভূমিকম্প, প্লেট টেকটনিক্সের ক্ষেত্রে গুরুত্ব বহন করে।
• হাদীসে সরাসরি এই “স্টেক” রূপক উল্লেখ নেই, তবে কুরআনের আয়াত হাদীস-সহ বস্তুগত চিন্তা-করার জন্য খোলা।
মানব গর্ভের বিকাশ-পর্ব
• কুরআনের সূরা মুমিনুনের (২৩:১২-১৪) আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে, আল্লাহ মানুষকে প্রথমে মাটির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তা থেকে একটি 'নুফা' বা বীর্যবিন্দু, তারপর 'আলাকাহ' বা জমাট রক্তপিণ্ড, এবং তারপর 'মুদঘাহ' বা চিবানো মাংসপিণ্ডের মতো পর্যায়ক্রমে রূপান্তরিত করেছেন, যা মানব ভ্রূণের বিকাশের পর্যায়গুলোকে তুলে ধরে।
• মাটির নির্যাস থেকে সৃষ্টি: আল্লাহ মানুষকে মাটির সারাংশ বা নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছেন।
• বিন্দু (নুফা): এরপর সেই মাটির নির্যাস থেকে তাকে বীর্যবিন্দু বা 'নুফা'-তে পরিণত করেছেন।
• জমাট রক্তপিণ্ড (আলাকাহ): তারপর সেই বীর্যবিন্দুকে 'আলাকাহ' বা জমাট রক্তপিণ্ডে রূপান্তর করেছেন, যা অনেকটা জোঁকের মতো দেখতে।
• চিবানো মাংসপিণ্ড (মুদঘাহ): অবশেষে, সেই জমাট রক্তপিণ্ডকে 'মুদঘাহ' বা চিবানো মাংসপিণ্ডের মতো করেছেন, যা মানব ভ্রূণের বিকাশের একটি পর্যায়।
• বিজ্ঞান এই পর্যায়গুলোকে ঠিকভাবে বলতে না পারলেও অনেকেই এটিকে আশ্চর্যকর হিসেবে দেখেন যেহেতু ৭ম শতাব্দীতে চিকিৎসা-বিজ্ঞান এতটা উন্নত ছিল না।
অন্যান্য উদাহরণ
সূরা আর-রাহমানের (৫৫:১৯-২০) এই আয়াত দুটি ব্যাখ্যা করে যে, আল্লাহ তা'আলা দুটি ভিন্ন সমুদ্রকে একত্রিত করেছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে একটি অদৃশ্য বাধা রয়েছে যা তাদের মিশ্রিত হতে দেয় না। এই কারণে, মিঠা ও লবণাক্ত পানির সমুদ্র তাদের নিজস্ব ঘনত্ব ও স্বাদ ধরে রাখে, যা আল্লাহর এক বিশাল সৃষ্টি।
• আয়াত ১৯: তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন যারা পরস্পর মিলিত হয়।
• আয়াত ২০: কিন্তু তাদের উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।
• সূরা আল-আম্বিয়ার (২১) ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, "এবং আমি আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ স্বরূপ; কিন্তু তারা আকাশস্থ নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়"। এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, আকাশকে পৃথিবীর জন্য একটি সুরক্ষিত ছাদ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে, যা এটিকে ওপর থেকে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করে, যেমন একটি তাঁবু বা গম্বুজ রক্ষা করে। মানবের আঙুলের ছাপ (অনন্যতা)-র কথা (সূরা ৭৫:৩-৪)-র মতো আয়াতও আলোচনা
২. হাদীস-আর কুরআন আলোকে বিবেচনা ও উপদেশ
• হাদীসগুলো আমাদেরকে দেখায় যে বিশ্বের সৃষ্টিসম্ভবতা, মানব-উৎপত্তি, গর্ভে বিকাশ-প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ে মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন: হাদীসে বলা হয়েছে — “…মানুষ গর্ভে তৈরি হয় ৪০ দিন বিন্দু, তারপর রক্তক্ষেত্রাকার
টাইটেল: “কুরআনে বিজ্ঞানের চিহ্ন এবং হাদীসের আলোকে — এক চিন্তাশীল জার্নি”
Информация по комментариям в разработке