Скачать или смотреть অদ্ভুত রেলস্টেশন আউলিয়াগঞ্জ

বাহে হামরা ট্রেনোত ওঠলে টিকিট চেকার টিকিট চায়। টিকিট দিবার না পারলে হামাক ট্রেন থাকি নামে দেয়। হামরা টিকিট পামো কোটে। স্টেশনোত কোন টিকিট বেচায় না। স্টেশন মাস্টারের ঘর বহুদিন ধরি তালা মারা। ' রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন আউলিয়াগঞ্জ স্টেশনের ট্রেনযাত্রী শাখাওয়াপাড়া গ্রামের মাহাবুল হক। স্টেশনে টিকিট বিক্রি না হওয়ায় একই ধরনের কথা শোনা যায় স্টেশনের আরো অনেক যাত্রীর কাছ থেকে।

রংপুরের বদরগঞ্জের অদ্ভুত এ রেলস্টেশনের নাম 'আউলিয়াগঞ্জ'। এই স্টেশনে কয়েক মিনিটের জন্য নিয়মিত ট্রেন থামে। যাত্রীরা ওঠানামাও করে। দিনে ছয়টি ট্রেন থামে আউলিয়াগঞ্জে। তবে ট্রেন চলাচল করতে যে সিগনালের প্রয়োজন হয় সেই লাল-সবুজ বাতির সংকেতের চিহ্ন নেই সেখানে। স্টেশন থেকে বিক্রি হয় না টিকিট। কখন কোন ট্রেন আসবে তার সংকেত জানার উপায়ও নেই। ফলে কেউ কেউ রেললাইনে কান পেতে ট্রেন আসার শব্দ শুনে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে 'ট্রেন আসছে। ' প্রতিদিন ছয়টি যাত্রীবাহী ট্রেনে শত শত যাত্রী ওই স্টেশন থেকে ওঠানামা করে ঝুঁকি নিয়ে। এলাকাবাসী সোহরাব আলী বলেন, 'কাছাকাছি ট্রেন থাকলে লাইনে কান পাতলে শো শো করি শব্দ হয়। এ্যাতে মনে হয় ট্রেন আইসোছে। অনেক সময় লাইনোত দাঁড়িয়ে দেখি ট্রেন আইসোছে কি না। আর ট্রেন আসলে শুরু হয় হুড়াহুড়ি। '

জানা যায়, স্টপেজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে গত ৩০ বছরে দুর্ঘটনায় সেখানে মারা গেছে আট যাত্রী। বুকিং সহকারীর দাবিতে এলাকাবাসীর পক্ষে সেখানে বর্তমানে একটি ব্যানার সাঁটানো আছে। তাতে লেখা-'রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি আউলিয়াগঞ্জ স্টেশনে বুকিং সহকারী চাই। ' সরেজমিন দেখা যায়, স্টেশনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় ১৫টি দোকানঘর। স্টেশন মাস্টারের কক্ষটি প্রায় ১৫ বছর ধরে তালাবদ্ধ। প্ল্যাটফর্মের দুই পাশে যথানিয়মে লাগানো আছে স্টেশনের নাম। স্থানীয়রা স্টেশন মাস্টারের কক্ষের বারান্দায় গরু-ছাগল বেঁধে রাখেন। ধুলা আর খানাখন্দে বারান্দার বেহাল দশা। আর রাতে আউলিয়াগঞ্জ স্টেশনটি চলে যায় দুষ্কৃতকারীদের দখলে।

জানা যায়, প্রায় ৫৫ বছর আগে বদরগঞ্জের মধুপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাওচণ্ডি গ্রামে রেললাইনের পাশে 'টুরি মাই' নামের এক আধ্যাপক বৃদ্ধার একটি কূপ (চুয়া) আবিষ্কার হয়। আর ওই কূপকে ঘিরে স্টেশনটি অবস্থিত। এলাকার মানুষের মুখে মুখে প্রচার পায় ওই বুড়ির কূপের (বুড়ির চুয়া) পানি পান করলে যেকোনো অসুস্থ লোক সুস্থ হয়ে ওঠে। জটিল ও কঠিন রোগও ভালো হয়। এ খবর গোটা উত্তরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। জায়গাটির অবস্থান বদরগঞ্জ ও শ্যামপুর স্টেশনের মাঝখানে হওয়ায় সড়কপথে বুড়ির চুয়ার পানি সংগ্রহ করতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। যাতায়াত দুসাধ্য থাকায় একপর্যায়ে ট্রেনের চালকদের যাত্রীরা অনুরোধ করে কয়েক মিনিটের জন্য ট্রেন বিরতির ব্যবস্থা করেন। দিনে দিনে স্থানটির গুরুত্ব বাড়তে থাকে। পরে স্থানীয়রা বিভাগীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ট্রেনের স্টপেজের জন্য লিখিত আবেদন করেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে কয়েক মিনিটের জন্য ট্রেনের স্টপেজ দেয়। স্টেশনের নামকরণ করা হয় 'আউলিয়াগঞ্জ স্টেশন'। ওই সময় সেখানে স্টেশন মাস্টার ও একজন পয়েন্টম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। যাত্রীদের ওঠানামা করার জন্য দেওয়া হয় টিকিট। সে সময় থেকে ভালোভাবেই চলছিল স্টেশনটির কার্যক্রম। ১৫ বছর আগে হঠাৎ করে লোকসান দেখিয়ে সেখান থেকে লোকবল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় টিকিট বিক্রি। এ অবস্থায় বেকায়দায় পড়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রীরা। কিন্তু সেখানে এখনো নিয়মিত ছয়টি ট্রেনের স্টপেজ বহাল আছে। স্টেশন থেকে প্রতিদিন টিকিট ছাড়াই শত শত যাত্রী ওঠানামা করছে।