#gazikaluchampaboti #mangroveforest #kaliganj #jhenaidah #tourism #touristplace #mazar #khulnadivission
গাজী কালু ও চম্পাবতী, গল্প থেকে বাস্তব
মধ্যযুগের সাহিত্যের তিন শক্তিমান চরিত্র গাজী কালু ও চম্পাবতী। ১৬৮৪ সালে রচিত কৃষ্ণরাম দাসের রায়মঙ্গল কাব্যে গাজীপীরের নাম প্রথম ব্যবহার করা হয়। ১৭৯৮-৯৯ সালে কবি শেখ খোদা বখশ রচিত গাজী কালু ও চম্পাবতী কাব্যে গাজী-কালুর ফকিরবেশে দেশভ্রমণ, জনৈক হিন্দু রাজার সঙ্গে গাজীর যুদ্ধ, যুদ্ধে রাজার পরাজয় ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ, গাজী শাসনে প্রজাদের দুঃখ-দারিদ্র্য মোচন, ব্রাহ্মণনগরের মটুক রাজার সঙ্গে গাজীর যুদ্ধ, যুদ্ধে রাজার পরাজয় ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ, রাজকন্যা চম্পাবতীর সঙ্গে গাজীর বিবাহ, পরিশেষে সকলকে নিয়ে গাজীর গৃহে প্রত্যাবর্তন ও সুখে জীবন যাপনের যে ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে তাই আজও লোকমুখে প্রচারিত ।
কাব্যের এই কাহিনী স্থানকাল বদলে মানুষের মনে বাস্তব রূপ নিয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশের একাধিক স্থানে গাজী কালু ও চম্পাবতীর মাজারের সন্ধান মেলে। প্রতিটি মাজারেই কাব্যের ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন রসে শোনা যায়। তেমনই একটি মাজার রয়েছে ঝিনাইদহের আগমুন্ডিয়ার রায়পুরা গ্রামে। আজ আমরা যাব গাজী কালু ও চম্পাবতীর সেই মাজারে।
এক শান্ত সকালে যশোর থেকে ঝিনাইদহ সড়ক ধরে আমাদের যাত্রা শুরু। বারোবাজার থেকে পূর্বদিকের গ্রাম্য পিচের রাস্তা ধরে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই গাজী কালু চম্পাবতীর মাজার।
শ্রীরাম রাজার দীঘির দক্ষিণ পাশে পাশাপাশি তিনটা কবর। মাঝের বড় কবরটি গাজীর, পশ্চিম দিকে কালুর কবর আর পূর্ব দিকের ছোট কবরটি চম্পাবতীর। পুরো মাজার ঘিরে আছে বিশাল একটি বটগাছ। এ গাছের একটি ছোট্ট ফোঁকরকে আরেকটি কবর বলে মানেন ভক্তরা। তবে করবটি কার তা কেউ বলতে পারে না।
এ আঙ্গিনায় ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ স্থাপন করা হয়েছে একটি শিলালিপি। যা পড়লেই জানা যায় গাজী কালু চম্পাবর্তীর উপখ্যান।
প্রচলিত আছে বৈরাট নগরের রাজা ছিলেন দরবেশ শাহ সিকান্দর। তারই সন্তান বরখান গাজী। কালু হলেন রাজা দরবেশ শাহ সিকান্দরের পালিত পুত্র। কালুর সঙ্গে গাজীর দারুণ ভাব ছিল। কালু গাজীকে খুব ভালোবাসতেন। যেখানেই গাজী সেখানেই কালু, বিষয়টা এরকমই ছিল। চম্পাবতীর ভালোবাসার টানে গাজী ছুটে এসেছিলেন ছাপাই নগর। এই ছাপাই নগরই পরবর্তিতে বারোবাজার নামে পরিচিতি লাভ করে।
সামন্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার মেয়ে চম্পাবতীর প্রেমে পড়েন গাজী। হিন্দুরাজার মেয়ের প্রেম গাজীকে ভুলিয়ে দিল সে মুসলমান। গাজী ছাপাই নগর চলে আসার পর কালুও নিয়ম মতো বা গাজীর ভলোবাসার টানে তার সঙ্গী হয়ে ছিলেন।
এখানে বলিহর বাওরের তমাল গাছতলায় গাজী নিয়মিত অবস্থান করতেন, আর অপেক্ষা করতেন চম্পাবতীর। এদিকে মুকুট রাজা তো রেগেমেগে আগুন। গাজীকে শায়েস্তার করার ভার দিলেন তার সেনাপতিকে। কিন্তু সেনাপতি দক্ষিণা রাও যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গাজীর কাছে ইসলাম ধর্মের দীক্ষা নেন।
অন্যদিকে রাজা রামচন্দ্র যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চলে আসেন ঝিনাইদহের বাড়িবাথান। এখানে গাজীর সঙ্গী হয় কালু। শেষ পর্যন্ত চম্পাবতীকে উদ্ধার করে নিজের বাড়ি নিয়ে আসলেও বিষয়টা রাজা সিকান্দর মেনে নিতে পারলেন না, তিনি গাজীকে তার বাড়িতে উঠতে তো দিলেনই না। বিতারিত করলেন বলা চলে। শেষ পর্যন্ত গাজী প্রেমের জন্য দরবেশ হলেন। চম্পাবতীকে নিয়ে পথে নামলেন। এভাবেই শেষ পর্যন্ত গাজীর আস্তানা হয় সুন্দরবন এলাকায়। এখানে তার সঙ্গী যথারীতি কালু ও দক্ষিণা রাও।
গাজী কালু চম্পাবতীর মাজারে আশ্বথ গাছের ফোকরে আরেকটি যে কবর আছে সেটি সম্ভাবত দক্ষিণা রাওয়ের।
প্রতিদিন প্রচুর ভক্ত আসেন মাজার দর্শনে। দর্শনার্থী হাতে গোনা। মাজারে প্রবেশের আগে পাশের দোকান থেকে আগরবাতি, মোমবাতি আর সুতো কেনেন ভক্তরা। মোমবাতি দেন মাজারের খাদেমের হাতে। আর আগরবাতি প্রাচীন অশ্বত্থ গাছের ডালে বেঁধে মানত করে জ্বালিয়ে দেন।
ভক্তদের বিশ্বাস একদিন মানত পূর্ণ হবে। আর সেদিন তারা এসে সেই সুতা খুলে নেবেন। হাজারো সুতো ঝুলছে অশ্বত্থ গাছের ডালে। জনশ্রুতি আছে, গাজী কালুর আধ্যাত্মিক প্রভাবে বাঘে ও কুমির একঘাটে জল খেত! হিন্দু ধর্মবলম্বলীরা বনদূর্গার বদলে যাদের পূজা করে তাদের মধ্যে গাজী-কালু অন্যতম।
গাজী কালু চম্পাবতীর মাজার দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীরাম রাজার দীঘিটির সৌন্দর্য মন্ডিত। মাজার বাদ দিলেও স্থানটি শান্ত শীতল মনোরম। দীঘির পাড়ে শীতল বাতাসে মুগ্ধ হবেন সবাই।
বন্ধুরা আবার দেখা হবে অন্যকোন ঐতিহাসিক স্থানে। আদি কথার অন্য পর্বে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
Gazi Kalu Champaboti Mazar, Jhenaidah District, Kaligang Upazilla, Archeology, Archeological Majar Bangladesh, Bangladesh, Khulna Divisssion Tourist Place, Tourist Place, খুলনা বিভাগের পরযটন কেন্দ্র, ঝিনাইদহা জেলার পরযটন কেন্দ্র, যশোর জেলা, Jessore District, Jashore, সুলতানি আমল, গাজী কালু ও চম্পাবতীর মাজার, নবাবদের শহর, নবাবী আমল, খান জাহান আলী, Khanjahan Ali, Prottnotantik, Protnotantik History, History, ইতিহাস, খুলনা বিভাগের অজনা ইতিহাস, Khulna Divission History
ভিডিও তথ্য:
কণ্ঠ : জাহিদুল যাদু
তথ্য সংগ্রহ: হাবিবুর রহমান
ভিডিও ধারণ: জয়নাল আবেদীন ও কামরুজ্জামান
ভিডিও অলংকরণ: কামরুজ্জামান
Follow my Facebook Page: / mkztraveller
Информация по комментариям в разработке