একই কন্যার ৫ পুরুষের সাথে বিবাহ, এটা কেমন ব্যাপার?
এক পতির বহু পত্নীর কথা শোনা যায়। কিন্তু এক পত্নীর বহু পতি-তা কী করে সম্ভব!
কোন পরিস্থিতিতে দ্রৌপদী ৫ জনকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলো ?
এই ঘটনা পৃথিবীতে একবারই ঘটেছিলো।
হিন্দুধর্মে পুনর্জন্ম বিশ্বাস করা হয় এবং এটা চিরন্তন সত্য
দ্রৌপদীর ৫ স্বামীও ছিলো তার পূর্বজন্মেরই প্রার্থনার ফল। কেননা, পূর্বজন্মে দ্রৌপদী ১৪টি গুণসম্পন্ন স্বামীর জন্য তপস্যা করে। মহাদেব শিব তাঁকে সেই মতো বরদানও করেন। কিন্তু একটি মানুষের মধ্যে এতগুলি গুণ থাকা সম্ভব নয়। তখন শিব তাঁকে জানান, পাঁচজন মানুযের মধ্যে এমন গুণের সমাহার ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে তাঁকে পঞ্চস্বামী বরণ করতে হতে পারে। পরের জন্মে দ্রৌপদীর জীবনে ঠিক সেই ঘটনাটিই ঘটে।
দ্রৌপদীর ৫ স্বামী হওয়ার আরেকটা কারণ হলো
অধর্মকে বিনাশ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠাই ছিলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্য এবং শ্রীকৃষ্ণের পরিকল্পনা মতোই পঞ্চপাণ্ডবের সাথে দ্রৌপদীর বিয়ে হয়। একারণেই দ্রৌপদীকে স্বয়ংবর সভায় জিতে নেওয়ার খবর যখন হস্তিনাপুরে যায়, তখন ভীস্ম বুঝতে পারে, অর্জুনই এটা করেছে, আর তখন হস্তিনাপুরের মহামন্ত্রী বিদুরকে, ভীষ্ম, পাঞ্চালে পাঠায় তাদেরকে হস্তিনাপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু পাঞ্চালে গিয়ে বিদুর জানতে পারে দ্রৌপদীর বিয়ে হয়েছে পঞ্চপাণ্ডবের সাথে। এতে সে কিছুটা অবাকই হয় এবং শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করে, একই কন্যার ৫ পুরুষের সাথে বিবাহ, এটা কেমন ব্যাপার? জবাবে শ্রীকৃষ্ণ বলে, পাণ্ডবরা ৫ জন কোথায় মহামন্ত্রী ? ওরা তো একই শক্তির ৫টি রূপ।
মহাভারতে, পাণ্ডবদের স্বেচ্ছায় প্রথম বনবাসের সময়, বনের মধ্যে কুঠুরি বানিয়ে মা এবং ৫ ভাই থাকতো। সেই দিন তাদের মা কুন্তি, কিসের যেন ব্রত করার জন্য সারাদিন চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছিলো; আর ৫ ভাই, কৌরবদের কেউ যেন তাদেরকে চিনতে না পারে, সেজন্য ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে বনের আশে পাশে ঘুরে ঘুরে কাজ বা খাবারের সন্ধান করছিলো; সেই দিনই আবার ছিলো দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভা এবং তারা ঘটনাচক্রে অনিচ্ছা সত্ত্বেও দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় গিয়ে উপস্থিত হয়
বড় বড় ক্ষত্রিয় মহারথীগণ সেখানে দ্রুপদের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলেন, ব্রাহ্মণবেশী অর্জুন সেখানে অনায়াসে লক্ষ্যভেদ করে পাঞ্চালী দ্রৌপদীকে জয় করলেন। তারপর পান্ডবগণ দ্রৌপদীকে নিয়ে কুটিরে ফিরে এলেন।
তখনও সেখানে কুন্তি চোখ বন্ধ করে ধ্যান অবস্থায় ছিলো। ৫ ভাইয়ের কেউ একজন বলে, মাতা, দেখুন, আজ আমরা কী লাভ করেছি ? চোখ না খুলেই কুন্তি বলে, যা পেয়েছো, তা ৫ জন মিলে ভাগ করে খাও। পরে, দ্রৌপদীর ব্যাপারটা জানতে পেরে, কুন্তি তার ভুল বুঝতে পারে এবং সে তার কথাকে ফিরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু যুধিষ্ঠির, যার কাছে ধর্মই হচ্ছে শেষ কথা, সে বলে, ধনুক থেকে ছুটে যাওয়া তীর যেমন আর ধনুকের কাছে ফিরে আসে না, তেমনি মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া কথাকেও আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।
এই পরিস্থিতিতে দ্রৌপদী যদি শুধু একজনকে বিয়ে করে, তাহলে অন্য চার ভাইকে সন্ন্যাস গ্রহন করে সংসার ত্যাগ করতে হবে; কিন্তু দ্রৌপদী, নিজেও এটা চাচ্ছিলো না যে, সে একজনকে বিয়ে করে সুখে থাক, আর তার কারণে অন্য চার ভাই সন্ন্যাসীর জীবন কাটাক এবং সেজন্য সমাজ তাকে দায়ী করুক, তাই সে ৫ জনকেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত এটা ছিলো দ্রৌপদীরই সিদ্ধান্ত, পঞ্চপাণ্ডবের কারোরই নয়।
দ্রৌপদী যখন বুঝতে পারে যে, ৫ জনকে বিয়ে করাই তার নিয়তি
এক স্বামীর সাথে একটানা ১ বছর অবস্থানের পর, সে পরবর্তী এক বছর কারো সাথে অবস্থান না করে তপস্যা করবে এবং এভাবে দেহকে শুদ্ধ করার পর, পরের বছর অন্য স্বামীর সঙ্গে থাকবে
সেই একবছর দ্রৌপদী যাকে তার ভবনে প্রবেশের অধিকার দেবে, সে ই শুধু প্রবেশ করতে পারবে, অন্য কেউ যদি প্রবেশ করে তাকে কয়েক বছরের জন্য সন্ন্যাস নিয়ে তার ভুলের প্রায়শ্চিত্য করতে হবে।
এজন্যই কোনো হিন্দু মেয়ে, দ্রৌপদীর এই ঘটনাকে স্মরণ করে এক সাথে একাধিক পুরুষকে কখনো বিয়ে করে নি আর ভবিষ্যতেও কখনো করবে না;
#দ্রৌপদীরপাঁচজনস্বামী
#মহাভারতেরগল্প
#হিন্দুমিথলজি
#ভারতীয়ঐতিহাসিকগল্প
#পাঁচপতিব্রত্য
#মহাভারতচরিত্র
#দ্রৌপদীরপাঁচস্বামী
#ভারতীয়পুরাণ
#ইপিকগ্রন্থ
#মহাভারতগল্প
Информация по комментариям в разработке