Скачать или смотреть কাশ্মীর সংকট: ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের বিরোধের রক্তাক্ত ইতিহাস

বিশ্বের অন্যতম বিরোধপূর্ণ অঞ্চল হলো কাশ্মীর। গত ৭৬ বছরে, কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে এবং এখনো সেখানে চলছে সংঘাত ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। শুধু ভারত ও পাকিস্তান নয়, চীনও কাশ্মীর ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হয়ে উঠেছে।

কাশ্মীর সংকটের সূচনা কিভাবে?
কাশ্মীর সংকটের মূল শুরু ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের সময়। তখন দেশীয় রাজ্যগুলোর কাছে পছন্দ ছিল — ভারত বা পাকিস্তানের সাথে যোগদান অথবা স্বাধীন থাকা।
কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং প্রথমে স্বাধীন থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাকিস্তানি উপজাতীয়দের হামলার মুখে তিনি ভারতের সাহায্য চান এবং যোগদানের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

এর ফলে শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান প্রথম যুদ্ধ (১৯৪৭-১৯৪৮)। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয় এবং কাশ্মীর ভাগ হয়ে যায় — এক অংশ ভারতের দখলে, অন্য অংশ পাকিস্তানের। এই বিভাজন থেকেই আজকের কাশ্মীর সমস্যা।

কেন ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে লড়াই করে?
কাশ্মীর উভয় দেশের জন্য আবেগের, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের কাছে কাশ্মীর তার ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়ের প্রতীক।

পাকিস্তানের মতে, কাশ্মীর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা হওয়ায় এটি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।

এই বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই কাশ্মীর ইস্যু এত দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।
১৯৬৫ সালের যুদ্ধ ও ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ এর বড় প্রমাণ।

২০১৯ সালে কী ঘটেছিল? অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল ও জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট, ভারতের সংসদ অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে।
এই অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল, যার ফলে কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান এবং আইনি স্বায়ত্তশাসন ছিল।

ভারত সরকার যা করেছিল:

বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে।

জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে।

এই সিদ্ধান্তের পর:

ব্যাপক কাশ্মীর বিক্ষোভ শুরু হয়।

লকডাউন ও ইন্টারনেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়।

কাশ্মীরিরা তাদের পরিচয় হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।

কাশ্মীর সংকটে চীনের ভূমিকা
যদিও কাশ্মীর সংঘাত মূলত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে, চীনও একটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ:

চীন ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর আকসাই চিন দখল করে।

চীন কাশ্মীরে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC) এর মাধ্যমে বিশাল বিনিয়োগ করছে।

ফলে, কাশ্মীর সমস্যা এখন শুধু ভারত-পাকিস্তান নয়, বরং ভারত-পাকিস্তান-চীন — তিন পরমাণু শক্তিধর দেশের ইস্যু।

কাশ্মীর সংকটের মানবিক মূল্য
১৯৮০-এর দশক থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহের পর:

অন্তত ৭০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।

হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

কাশ্মীরিরা আজও সহিংসতা, কারফিউ এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বেঁচে আছে।

কাশ্মীর সংকটের সমাধান সম্ভব কি?
কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান অত্যন্ত জটিল:

ভারত মনে করে এটি তার অভ্যন্তরীণ বিষয়।

পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার দাবি জানায়।

কাশ্মীরিদের নিজেদের মতামত অনেক সময় অবহেলিত হয়।

সম্ভাব্য সমাধানের প্রস্তাব:

কাশ্মীরকে অধিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান।

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গণভোট (যা ভারত সমর্থন করে না)।

ভারত-পাকিস্তান সরাসরি আলোচনা।

জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা।

কিন্তু জাতীয়তাবাদের উত্থান ও চলমান সংঘাতের কারণে, দ্রুত শান্তি আসার সম্ভাবনা খুবই কম।

কাশ্মীর সংকট ইতিহাস, রাজনীতি এবং মানবিক বিপর্যয়ের একটি মর্মান্তিক গল্প।
অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার, এবং চীনের প্রভাব — সব মিলিয়ে এই অঞ্চল এখনও একটি বিপজ্জনক উত্তপ্ত বিন্দু।
যতক্ষণ না কাশ্মীরিদের ইচ্ছা ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারকে গুরুত্ব দেয়া হবে, ততক্ষণ এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
#kasmir #viralvideo #news #warzone #war