আমার প্রাণপ্রিয় মুসলিম ও অমুসলিম ভাই ও বোনেরা,
গীবত এবং চোগলখোরী এমন দুটি পাপ, যে পাপের কাফফারা কেবল নিজ পুণ্য দিয়ে আদায় করতে হয়| অথচ এগুলোর ভয়াবহতা সম্পর্কে না জেনে আমরা অনায়াসেই এই পাপে লিপ্ত। যখন কারো গীবত করি মনে হয় আমি তো ভাল কাজই করছি, অথচ বুঝে উঠতে পারিনা, আমি আসলে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছি। গীবত এবং চোগলখোরীর ব্যাধিতে আক্রান্ত গোটা সমাজ-পরিবার এবং রাষ্ট্র |এমনকি দ্বীনি মহলও এই ব্যাধির সংক্রমন থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
গীবত বলতে কারোর অনুপস্থিতিতে অন্যের কাছে তার কোন দোষ চর্চাকে বুঝানো হয়। যা শুনলে সে রাগান্বিত অথবা অসন্তুষ্ট হবে। অন্ততপক্ষে তার মনে, সামান্য হলেও কষ্ট আসবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে এর বিস্তারিত পরিচয় দিয়েছেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘তোমরা কি জানো গীবত কাকে বলে? তোমার মুসলিম ভাই অপছন্দ করে, এমন কোন কথা তার পেছনে বলাকে গীবত বলে । জনৈক সাহাবী বললেন: আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যেই থাকে, তাও কি তা গীবত হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি যা বলছো তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তা হলেই তো গীবত। আর যদি তার মধ্যে তা না পাওয়া যায় তা হলে তা বুহ্তান তথা মিথ্যা অপবাদ’। (মুসলিম ২৫৮৯; আবূ দাউদ ৪৮৭৪; তিরমিযী ১৯৩৪)
কারো কারোকে যখন অন্যের গীবত করা থেকে বারণ করা হয় তখন তিনি বলে থাকেন, আমি হুবহু কথাটি তার সামনেও বলতে পারবো। তাকে আমি এতটুকুও ভয় পাই না। মূলতঃ তার এ ধরনের উক্তি কোন কাজের নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গীবত না হওয়ার জন্য এ ধরনের সাহসিকতার শর্ত দেননি। সুতরাং তার সামনে বলার সাহস থাকলেও তা গীবতই হবে।
অন্যদিকে চোগলখোর ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যে মানুষের মাঝে ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে, একজনের কথা অন্যজনের কাছে বর্ণনা করে। এটি গীবত থেকেও জঘন্য । আরবি ভাষায় এর নাম نميمة নামীমাহ। গীবতকারী ও চুগলখোরের মধ্যে পার্থক্য এই যে, চুগলখোরের মধ্যে ঝগড়া লাগানোর ইচ্ছা থাকে। আর গীবতকারীর মধ্যে তা থাকা শর্ত নয়। অন্যের কাছে নিজেকে আপন করে তুলতে বা নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে বা দুনিয়াবী সুযোগ-সুবিধা লাভে কিংবা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে, যে মানুষ, একজনের কথা অন্যজনের কাছে বলে বেড়ায়; সে হচ্ছে চোগলখোর। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা চোগলখোরদের নিন্দা জানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং অনুসরণ কর না তার; যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, পশ্চাতে নিন্দাকারী; যে একের কথা অপরের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়।’ (সুরা ক্বালাম : আয়াত ১০-১১)
আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর পবিত্র কুর’আন মাজীদে মু’মিনদেরকে, এমন অপতৎপরতা চালাতে, কঠিনভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। এমনকি তিনি এর প্রতি মু’মিনদের কঠিন ঘৃণা জন্মানোর জন্যে এক কঠিন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
‘‘তোমরা একে অপরের গীবত চর্চা করো না। তোমাদের কেউ কি চায় সে তার মৃত ভাইয়ের গোস্ত কামড়ে কামড়ে খাবে। বস্তুত: তোমরা তা কখনোই করতে চাইবে না। তা হলে তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই তিনি তাওবা গ্রহণকারী অত্যন্ত দয়ালু’’। (সুরা হুজুরাত : ১২)
আবূ বারযাহ্ আস্লামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:‘‘হে তোমরা যারা মুখে ঈমান এনেছো; অথচ ঈমান তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমদের গীবত এবং তাদের ছিদ্রান্বেষণ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি মুসলিমদের ছিদ্রান্বেষণ করবে আল্লাহ্ তা‘আলাও তার ছিদ্রান্বেষণ করবে। আর আল্লাহ্ তাআলা যার ছিদ্রান্বেষণ করবেন তাকে তিনি তার ঘরেই লাঞ্ছিত করবেন’’। (আবূ দাউদ ৪৮৮০)
এখানে গীবত এবং চোগলখোরী র ৫টি কাফফারা বা ক্ষতিপূরণের কথা উল্লেখ করা হলো, যেগুলোর মাধ্যমে আশা করা যায় গীবতকারীর গুনাফ মাফ হবে ইনশাআল্লাহ।
১। অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করুন।
'আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।'
অর্থ : 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।'
২। যে ব্যক্তির গীবত করা হয়েছে সুযোগ থাকলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন।
৩। উক্ত ব্যক্তির জন্যও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
৪। মজলিশ সমাপ্তির দুআ পাঠ করুন :
সুবাহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র এবং সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য। আমি সাক্ষ্য দেই যে, তুমি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই, তোমার কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি।’
(তিরমিজি, মিশকাত)
৫। যে বৈঠকে কারো গীবত করে ফেলেছেন, ওই বৈঠকেই তার প্রশংসা করুন।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
গীবত এর মারাত্মক পরিণতি ও শাস্তির কথা হৃদয়ে বসাতে হবে। প্রতিজ্ঞা করতে হবে, জীবনে কখনো গীবত করব না। অতঃপর বিনয়ের সাথে আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হবে, ‘হে আল্লাহ! গীবত নামক জঘন্য গুনাহাটি থেকে আমি পরিত্রান চাই। বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে গল্প করার সময় গীবত লিপ্ত হয়ে পড়ি; হে আল্লাহ! আমি শপথ করছি, ভবিষ্যতে কখনো গীবত করব না। কিন্তু আমার এই শপথ ঠিক রাখা এবং এর উপর বদ্ধপরিকর থাকা, তোমার সাহায্য ও তৌফিক ছাড়া সম্ভব নয়। হে আল্লাহ! দয়া করে আমাকে গীবত থেকে বেঁচে থাকার সাহস, উৎসাহ ও তৌফিক দান করো। আমিন।
For any kind of Complain, Suggestion & Copyright issue, please Email us at :
[email protected]
_______________________________________________
আমাদের ফেইসবুক পেইজ ফলো করুন👇
/ ইসলামকে-ভালো. .
ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন👇
/ 73065. .
Like 👍 Comment 📝 Share 🔄 Subscribe
Video credit : pixabay.com
Orginal Background Music Credit :
Flute Sumon
• Islamic Flute Music | Assubhu Bada | Allah...
Thank you for watching 👍
Информация по комментариям в разработке