Damodar Astakam || দামোদর অষ্টাকম H.G Srimadhusudan Das #Malda
চাতুর্মাস্য ব্রত কি?
─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─
✺ শ্রীভগবান বিষ্ণু ক্ষীর সাগরে শ্বেতদ্বীপে অনন্ত শেষনাগের শয্যায় নিদ্রিত হন। বর্ষার চার মাস। বলা হয় যেদিন তিনি শয়নে যান, সেই দিনটি হলো শয়ন একাদশী বা শয়নী একাদশী (জগন্নাথ রথযাত্রার পর আষাঢ়ী শুক্লা একাদশী)। তারপর যেদিন তিনি পাশ ফিরে শয়ন করেন, সেদিন পার্শ্ব একাদশী (ভাদ্র শুক্লা একাদশী)। যেদিন তিনি নিদ্রা থেকে উত্থিত হন, সেদিন উত্থান একাদশী (কার্তিক শুক্লা একাদশী)।
এই শয়ন একাদশী থেকে উত্থান একাদশী পর্যন্ত মোট চার মাস। শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক। শয়ন একাদশী, কিংবা কর্কট সংক্রান্তি কিংবা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে চাতুর্মাস্য ব্রত শুরু হয় এবং যথাক্রমে উত্থান একাদশী, কিংবা বৃশ্চিক সংক্রান্তি কিংবা কার্তিকী পূর্ণিমাতে ব্রত সমাপ্ত হয় ।
জাগ্রত হয়ে তিনি হিসাব নেন চিত্রগুপ্তের কাছে এই চারমাস কে কতবেশি হরিভজন করেছেন।
✺ বছরের এই চারি মাস প্রাকৃতিক কারণে মানুষের দেহ ও মনে রজো ও তমোগুণী প্রভাব অধিক দেখা যায়। ফলে আমাদের সমাজে লক্ষ্য করা যায়, যত রকমের দুর্যোগ, অশান্তি, মারামারি, কাটাকাটি, হিংসা বছরের সবসময় হলেও এ চার মাসে সর্বাধিক। পশু, পাখি, কীট, পতঙ্গেরাও এ সময়ে বেশি উগ্র প্রকৃতির হয়। শরীর ও মনের উত্তেজনা অধিক থাকে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মাৎসর্যাদি প্রবল হয় । অর্থাৎ যারা লক্ষ্মীমন্ত হতে চায়, তারা অবশ্যই এ সময় ভক্তিযোগ সাধন করবে। সংযত থাকবে। সেজন্য দিনের বেলা ঘুমানো নিষেধ, শ্রীহরির বিগ্রহ অর্চনা করা, স্নান করা ও শুচি থাকা, হরিনাম জপ করা, গীতা-ভাগবত, চৈতন্যচরিতামৃত অধ্যয়ন করা, ঘর-দুয়ার পরিষ্কার রাখা, সাত্ত্বিক খাবার গ্রহণ করা, সংযতভাবে কথা বলা, শুভ কাজে যুক্ত থাকা দরকার।
✺ ভক্তগণ কৃষ্ণভক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে চাতুর্মাস্য ব্রত নিয়ম করেন। শ্রীহরিভক্তিবিলাসে (১৫/১১৩) বলা হয়েছে,
❝চতুর্মাসেষু কর্তব্যং কৃষ্ণভক্তি বিবৃদ্ধয়ে॥❞
অনুবাদ: কৃষ্ণভক্তি বৃদ্ধির জন্যই চাতুর্মাস্য ব্রত কর্তব্য।
✺ ভবিষ্য পুরাণে বলা হয়েছে,
❝ যো বিনা নিয়মং মর্ত্যো ব্রতং বা জপ্যমেব বা।চাতুর্মাস্য নয়েন্ মূর্খো জীবন্নপি মৃতো হি সঃ ॥ ❞
অনুবাদ: যে ব্যক্তি নিয়ম, ব্রত বা হরিনাম জপ ছাড়া এ চার মাস অতিবাহিত করে, সে ব্যক্তি মূর্খ, সে বেঁচে থেকেও মরার মতো ।
✺ শ্রীব্রহ্মা নারদমুনিকে বলছেন, “হে নারদ, চাতুর্মাস্য ব্রত ভক্তি সহকারে পালন করলে মানুষ পরমাগতি লাভ করার সুযোগ পাবে।”
─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─
✤ চাতুর্মাস্যে কি কি গ্রহণযোগ্য ও বর্জনীয়? ✤
─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─
ব্রহ্মচারী চারি মাস ━ শ্রাবণ-ভাদ্র-আশ্বিন ও কার্তিক।
স্কন্দ পুরাণের নাগরখন্ডে বলা হয়েছে-
❝ শ্রাবণে বর্জয়েৎ শাকং দধি ভাদ্রপদে তথা।দুগ্ধম্ আশ্বযুজে মাসি কার্তিকে চামিষং ত্যজেৎ ॥ ❞
অনুবাদ: শ্রাবণে শাক, ভাদ্রে দই, আশ্বিনে দুধ এবং কার্তিকে মাষকলাই ডাল খাওয়া চলবে না। কারণ এই সময়ে এই দ্রব্যগুলি রোগ সৃষ্টি করে। মন বিক্ষিপ্ত করে।
শ্রাবণে অসংখ্য পোকামাকড় শাকগুলোতে ডিম পাড়ে। অসংখ্য সূক্ষ্ম জীবাণু চোখেও ধরা পড়ে না, কিন্তু সেগুলো উদরের নানা রোগ সৃষ্টি করে। তাই শাক বর্জনীয়। ভাদ্র মাসে দই এবং আশ্বিন মাসে দুধও হজমের পক্ষে ভালো নয়। তবে, বাচ্চারা মাতৃস্তন পান করলে ভালো নয়। তবে, বাচ্চারা মাতৃস্তন পান করলে কোনো ক্ষতি নেই। দুধ থেকে ছানা, পায়সান্ন প্রভৃতি তৈরি করে আহারে দোষ নেই। কার্তিক মাসে আমাদের বঙ্গদেশে মাষকলাই খেয়ে বহু লোককে অসুস্থ হতেও প্রচুর দেখা যায়। পেট খারাপ হলে মন খারাপ হয়। তখন মানুষের মেজাজও খিটখিটে হয়ে যায় ।
★ ১ম মাস (শ্রাবণ ) = শ্রীধর মাস = শাক আহার নিষিদ্ধ
◉ সময়সূচী ━ [২১ জুলাই ২০২৪, রবিবার – ১৯ আগস্ট ২০২৪, সোমবার]
[বিঃদ্রঃ পুরুষোত্তম মাসে চাতুর্মাস্য ব্রত পালন করা হয় না।]
◉ বর্জনীয় ━ সকল প্রকার শাক, লাল ও সবুজ পালং শাক এড়িয়ে চলতে হবে।
◉ গ্রহণযোগ্য ━ ধনে পাতা, মেথি পাতা, পুদিনা পাতা, কারি পাতা, নিম পাতা, বাঁধাকপি, ফুলকপি শাক না হওয়ায় খাওয়া যেতে পারে।
★ ২য় মাস (ভাদ্র) = হৃষিকেশ মাস = দই আহার নিষিদ্ধ
◉ সময়সূচী ━ [২০ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার – ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার]
◉ বর্জনীয় ━ প্রধানত দই এবং দই দিয়ে তৈরি উপদান যেমন লস্যি, কারি, বাটার মিল্ক প্রভৃতি এড়িয়ে চলতে হবে।
◉ গ্রহণযোগ্য ━ চরণামৃতে দই থাকলেও সম্মানের সাথে গ্রহণ করা উচিৎ।
★ ৩য় মাস (আশ্বিন) = পদ্মনাভ মাস = দুধ আহার নিষিদ্ধ
◉ সময়সূচী ━ [১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার – ১৭ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার]
◉ বর্জনীয় ━ প্রধানত দুধ এবং দুধ দিয়ে তৈরি উপদান যেমন দুধ দিয়ে তৈরি পায়েস, মিল্ক শেক, আইসক্রিম, কনডেন্সড মিল্ক প্রভৃতি এড়িয়ে চলতে হবে।
◉ গ্রহণযোগ্য ━ দুধের মিষ্টি যেমন রসগোল্লা, সন্দেশ; দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন ছানা, পনীর যেহেতু দুধ রূপান্তরিত এবং ব্যবহৃত। চরণামৃতে দই থাকলেও সম্মানের সাথে গ্রহণ করা উচিৎ।
★ ৪র্থ মাস (কার্তিক) = দামোদর মাস = বিউলি /উরদ/ মাষকলাই ডাল আহার নিষিদ্ধ
◉ সময়সূচী ━ [১৮ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার – ১৫ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার]
◉ বর্জনীয় ━ প্রধানত বিউলির ডাল এবং বিউলির ডাল দিয়ে তৈরি উপদান যেমন ইডলি, ধোসা, বিউলির ডালের বড়ি, অমৃতি প্রভৃতি এড়িয়ে চলতে হবে। তাছাড়া কার্তিক মাসে শিম, বেগুন, পটল, কলমি শাক, বটবটি, দেশী লাউ, মুলো ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
◉ গ্রহণযোগ্য ━ বিউলির ডাল বাদে যে কোন ডালই খাওয়া যাবে।─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─
✤ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও চাতুর্মাস্য ব্রত ✤
─•━━━━━•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱•━━━━•─
গৌড়ীয় বৈষ্ণব জীবনে চাতুর্মাস্য ব্রত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদা বঙ্গদেশের বৈষ্ণবগণ রথযাত্রার পূর্বেই সদলবলে পুরীধাম পৌঁছে যেতেন। সেখানে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সঙ্গে সংকীর্তনরঙ্গে তারা রথযাত্রা উদযাপন করতেন। রথযাত্রার পর সেখানে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সান্নিধ্যে থেকে এই চারটি মাস অতিবাহিত করতেন।
❝ চারিমাস রহিলা সবে মহাপ্রভু-সঙ্গে। জগন্নাথের নানা যাত্রা দেখে মহারঙ্গে
Информация по комментариям в разработке