রোজাদারের মর্যাদা
আল্লাহপ্রেমে বিভোর হয়ে রহমত ও মাগফিরাত লাভের মাস রমজান। আত্মসংযম, আত্মত্যাগ ও আত্মউন্নয়নের এ মাস সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে গোটা বছরের জন্য ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’
রমজানের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোজাদার যেমন নিজের ভেতরে আল্লাহর ভয় এবং তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলার অভ্যাস রপ্ত করেন, তেমনি পারস্পরিক প্রেম, ভালোবাসা, পরোপকার, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের মতো অতিমানবিক গুণাবলি অর্জন করেন। মোট কথা রোজাদার সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। এজন্যই রোজাদারকে অনেক সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম।
হাদিসে এসেছে “জান্নাতে ‘রাইয়ান’ নামে একটি দরজা আছে। রোজাদার ছাড়া আর কেউ সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে যেতে পারবে না।” এটি রোজাদারের বিশেষ মর্যাদা। ‘রাইয়ান’ শব্দের অর্থ হলো খুবই তৃপ্তিসহ পান করা। রোজাদার ব্যক্তি জান্নাতে গিয়ে এমন সুস্বাদু পানীয় পান করবে, যে আর কোনোদিনই সে তৃষ্ণার্ত হবে না। এ বিশেষ পুরস্কার এজন্য যে, সায়েম ক্ষুধার চেয়েও পিপাসায় কষ্ট করে অনেক বেশি।
হজরত আবু উমামা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘আমি নবিজির (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে জানতে চাইলাম, হে রাসূল (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আমাকে এমন একটি কাজের আদেশ দিন, যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তখন নবিজি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি সিয়াম সাধনা করো। কারণ এর কোনো তুলনা হয় না।’ ইতিহাস থেকে জানা যায়, এরপর সাহাবি আবু উমামার ঘরে দিনের বেলায় আর কোনোদিন খানাপিনা হয়নি।
রোজাদার আল্লাহর কাছে যেমন মহাসম্মানিত, রোজার প্রতিদান যেমন অকল্পনীয় তেমনি রোজা পরিত্যাগের শাস্তিও ভয়াবহ। আবু উমামা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম, একটি সম্প্র্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে! তাদের গলা ফাড়া। গলা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? বলা হলো, এরা সেসব ব্যক্তি, যারা বিনা কারণে রমজান মাসের রোজা ভঙ্গ করেছিল’ (ইবনে খুজাইমা)।
রোজা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইচ্ছায় একটি রোজা ভঙ্গ করে সারাজীবন রোজা রাখলেও একটি ফরজ রোজার সমান হওয়ার নয়। আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি প্রয়োজন ও রোগ ছাড়া রমজানের একটি রোজা ভেঙে ফেলল, তার সারাজীবনে এ কাজা আদায় হবে না, যদিও সে সারাজীবন রোজা পালন করে। তাই সিয়াম সাধনার এ মাসে শরিয়তের পরিপূর্ণ হুকুম মেনে প্রতিটি রোজা যথাযথভাবে আমাদের পালন করা উচিত। তাহলেই আল্লাহ আমাদের মহাসম্মানে ভূষিত করবেন।
প্রকৃত রোজাদারের মর্যাদা
আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের রোজা আমরা অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। রমজান মাস আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি বড় নেয়ামত। রমজানের রোজার মাধ্যমে আমরা সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি।
আমাদেরকে সেই রোজা রাখা উচিত, যা এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের উঠাবসা, চলাফেরা, সর্বোপরি আমাদের প্রতিটি কথা ও কাজ দ্বারা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম হবে এবং আমাদের এসব পুণ্য আমল খোদার সাথে মিলিত করবে।
যে মর্যাদা রোজাদার ছাড়া আর কেউ পাবে না
বিশেষ পুরস্কার ও প্রতিদান পাওয়ার মাস রমজান। উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য এ মাসে বিশেষ ৫টি মর্যাদা পাওয়ার ঘোষণা এসেছে; যা অন্য কোনো নবি-রাসুলের উম্মতকে দেওয়া হয়নি। রোজাদারের জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ ৫ মর্যাদার কথা ঘোষণা করেছেন। সেই ৫ মর্যাদা কী?
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রত্যেকটি আমল বাড়ানো হয়। আর তাদের প্রতিটি নেকি দশ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হবে। তবে রোজা ছাড়া। কেননা রোজা শুধু আমারই জন্য রাখা হয় আর আমিই এর প্রতিদান দেব। বান্দা আমার জন্যই তার কামনা-বাসনা ও খাওয়া-পান করা ত্যাগ করে। রোজাদারের দুইটি আনন্দ। একটি- ইফতার করার সময় আর অপরটি- কেয়ামাতে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। যার হাতে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবন, তাঁর কসম! রোজাদারের মুখের গন্ধ কেয়ামাতের দিন আল্লাহর কাছে মেশক আম্বরের চেয়েও বেশি খোশবুদার হবে। (বুখারি ও মুসলিম)
রোজাদারের জন্য চমৎকার এ ঘোষণার পরও রয়েছে বিশেষ ৫ পুরস্কারের সুসংবাদ। যা অন্য কোনো নবি-রাসুলের উম্মতকে দেওয়া হয়নি। হাদিসে পাকে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আগের কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি। আর তাহলো-
১. রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বরের চেয়ে উত্তম।
২. রোজাদারের প্রতি আল্লাহ এত বেশি খুশি হন, তার কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে মন্দ লাগবে না।
৩. রোজাদার আল্লাহর কাছে অতিপ্রিয় হন বলেই তার (রোজাদারের) সব কাজই আল্লাহর প্রিয় হয়ে যায়।
৪. রোজাদারের জন্য ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করতে থাকেন। (যা সেহরি করার পর থেকেই শুরু হয়)
৫. রোজাদারের জন্য ফেরেশতারা জান্নাতকে প্রতিদিন নতুন করে সাজাতে থাকেন।
#banglawaz
#banglawazmahfil
#islamicvideo
#islamicvideo
#mizanurrahmanazhari
#রোজাদারদের জন্য ১০টি বিশেষ পুরস্কার
#banglawaz2023
Информация по комментариям в разработке