Скачать или смотреть গুরাবাদের পরিচয় কি? | Guraba By Mufti Shabbir Ahmad

গুরাবাদের পরিচয় কি?
গুরাবা শব্দটি আরবি "غُرَبَاء" (গুরাবা) থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ "অপরিচিত," "বিদেশি," বা "ভিন্নতাধর্মী।" এটি ইসলামী পরিভাষায় সাধারণত তাদের বোঝায় যারা সত্যের পথে অটল থাকে, যদিও তারা সংখ্যাগরিষ্ঠদের থেকে পৃথক বা কম সংখ্যক। গুরাবাদের ধারণাটি ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে এবং এটি কুরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

গুরাবা শব্দের উৎস ও ইসলামী ব্যাখ্যা:
গুরাবা শব্দটি সরাসরি হাদিস থেকে এসেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"ইসলাম শুরু হয়েছিল অচেনা বা গুরাবা অবস্থায়, আর আবারও তা অচেনা অবস্থায় ফিরে যাবে। তাই গুরাবাদের জন্য সুসংবাদ।"
(সহীহ মুসলিম: ১৪৫)

এই হাদিস থেকে গুরাবাদের মূল ধারণা স্পষ্ট হয় যে, ইসলামের প্রকৃত অনুসারীরা কখনো কখনো তাদের পরিবেশে অপরিচিত বা ভিন্নতাধর্মী মনে হতে পারে।

গুরাবার পরিচিতি:
গুরাবা বলতে এমন ব্যক্তিদের বোঝানো হয় যারা:
1. সত্যের ওপর দৃঢ় থাকে, যদিও তা সমাজের সাধারণ প্রবণতা থেকে আলাদা।
2. ফিতনার সময়েও দ্বীনের ওপর অটল থাকে।
3. সমাজে প্রচলিত ভুল কাজ ও বিদআতের বিরোধিতা করে।
4. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের জীবন পরিচালিত করে এবং দুনিয়াবি লোভ থেকে মুক্ত থাকে।

গুরাবার বৈশিষ্ট্য:
গুরাবাদের ধারণা ইসলামী দর্শনে একটি বিশেষ মর্যাদা বহন করে। কুরআন ও হাদিসে গুরাবাদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে:
1. তাওহীদের প্রতি অঙ্গীকার: গুরাবারা আল্লাহর একত্ববাদে অটল থাকে এবং কোনো শিরক বা বিদআতে লিপ্ত হয় না।
2. সংখ্যায় কম: তারা সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। তাদের অবস্থান সমাজে পৃথক বা "অচেনা" হয়।
3. আদর্শ অনুসরণকারী: গুরাবারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ এবং সাহাবিদের অনুসরণ করে।
4. ইবাদতে দৃঢ়তা: তারা নিয়মিত নামাজ, রোজা এবং অন্যান্য ফরজ ইবাদত পালনে আন্তরিক।
5. সত্যের প্রচার: গুরাবারা সত্য প্রচার করতে ভয় পায় না, যদিও এটি তাদের জন্য কষ্টকর হয়।
6. পরিচ্ছন্ন চরিত্র: তাদের আচার-আচরণ ও নৈতিকতা সর্বদা ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন।

গুরাবাদের ইতিহাসে উদাহরণ:
ইতিহাসে বিভিন্ন সময় গুরাবাদের পরিচয় ফুটে উঠেছে। ইসলামের প্রথম যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত সত্যিকারের মুমিনদের একটি ছোট দল সর্বদা বিদ্যমান ছিল যারা সমাজের ভুল থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে এবং ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা প্রচার করেছে।

1. মক্কার মুসলিমরা: ইসলামের শুরুর দিকে যারা মক্কায় মুসলিম হয়েছিলেন, তারা গুরাবাদের প্রকৃত উদাহরণ। তারা সংখ্যায় কম ছিল এবং তাদের উপর অত্যাচার হয়েছিল, কিন্তু তারা সত্যের পথ ছাড়েনি।
2. মদিনার আনসার: মদিনার সাহাবিদের একটি অংশ যারা কষ্টসহিষ্ণু এবং ইসলামের প্রচারে আত্মনিবেদিত ছিলেন।
3. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের সংগ্রাম: তিনি তার সময়ে বিদআত এবং ভুল আকিদার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং সত্যের পথে অটল থেকেছেন।

গুরাবাদের গুরুত্ব:
গুরাবা শুধু ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণাই নয়, এটি প্রতিটি মুসলিমের জন্য একটি আত্মজিজ্ঞাসার বিষয়। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দুনিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে মিলে চলাই সবসময় সঠিক নয়।

1. দ্বীনের রক্ষক: গুরাবারা নিজেদের ঈমান ও আমলের মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃত রূপ রক্ষা করে।
2. ফিতনার প্রতিরোধ: ফিতনার যুগে গুরাবাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সমাজকে সত্যের পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে।
3. সুসংবাদ: গুরাবাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) সুসংবাদ দিয়েছেন, যা তাদের মর্যাদা ও গুরুত্বকে তুলে ধরে।

গুরাবা হওয়া কেন কঠিন?
গুরাবা হওয়ার পথ সহজ নয়। কারণ এটি একটি কঠোর আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আত্মত্যাগের দাবি করে। একটি সমাজ যখন ভুল পথে চলে, তখন সেই সমাজের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।

1. সমাজের চাপ: গুরাবারা সাধারণত সামাজিক চাপের মুখোমুখি হয়। তারা অনেকে দ্বারা অবহেলিত বা উপহাসিত হয়।
2. আত্মত্যাগ: গুরাবাদের পথ এমন একটি পথ যা দুনিয়াবি লোভ, আরাম-আয়েশ এবং সমাজের সঙ্গে আপস না করার জন্য আত্মত্যাগ দাবি করে।
3. সংখ্যার অভাব: সত্যের পথে চলা মানুষ কম থাকায় অনেক সময় একাকীত্বের অনুভূতি হতে পারে।

উপসংহার:
গুরাবা একটি মহান ধারণা যা মুসলিমদের ঈমানি জীবনে একটি আলোকিত পথ নির্দেশ করে। গুরাবারা সেইসব মানুষ যারা সত্যের জন্য সংগ্রাম করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে। গুরাবাদের পথ কঠিন হতে পারে, কিন্তু এটি দুনিয়া এবং আখিরাতে অসাধারণ পুরস্কার নিয়ে আসে। আমাদের উচিত নিজেদেরকে গুরাবাদের অংশ হিসেবে গড়ে তোলা এবং ইসলামের প্রকৃত আদর্শকে অনুসরণ করা।

#গুরাবা #ইসলামেরসত্যপথ #গুরাবারফজিলত #দ্বীনেরঅপরিচিত #ইসলামেরআলো #সত্যেরপথ #হাদিসেরশিক্ষা #তাওহীদেরদাবি #সুন্নাহঅনুসরণ #ফিতনারসময়