এসআইআর মঙ্গলবার থেকেই, সঙ্গে আরও ১১ রাজ্য! ‘ভোটার’ হওয়ার মাপকাঠি কী? কবে প্রকাশ হবে চূড়ান্ত তালিকা?
দ্বিতীয় পর্বের এসআইআর (প্রথম পর্বে হয়েছে বিহারে) হবে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লক্ষদ্বীপ, পুদুচেরি, আন্দামান ও নিকোবরে।
কোনও যোগ্য যাতে বাদ না পড়েন, কোনও অযোগ্য যাতে ঠাঁই না পান। সোমবার দুই নির্বাচন কমিশনার, এসএস সান্ধু ও বিবেক যোশীকে পাশে বসিয়ে দেশের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (এসআইআর) চালুর ঘোষণা করে এই বার্তা দিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার। তাঁর ঘোষণা, ‘‘বিহারে সফল ভাবে এসআইআর হয়েছে। কেউ একটিও ভুল ধরাতে পারেননি। এ বার ধাপে ধাপে সারা দেশেই তা হবে।’’সিইসি জানিয়েছেন, সোমবার রাত ১২টাতেই সংশ্লিষ্ট ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ভোটার তালিকা ফ্রিজ করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ রাত ১২টা থেকে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত সব কাজ বন্ধ থাকবে। নতুন নাম তোলা, সংশোধন, পরিবর্তন করা যাবে না। ২৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) থেকে শুরু হচ্ছে এনুমেরেশন ফর্ম (সংখ্যা যাচাই সংক্রান্ত আবেদনপত্র) ছাপানোর কাজ। একই দিনে শুরু হবে বিএলওদের প্রশিক্ষণের কাজ। যা চলবে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমেরেশন ফর্ম দেওয়া হবে। কেউ রাজ্যের বাইরে গেলে বা প্রবাসীরা অনলাইনেও ফর্ম ভরতে পারবেন। অন্য দিকে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর। এই তালিকা নিয়ে অভিযোগ থাকলে ৯ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। পরবর্তী পর্যায়ে ৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে অভিযোগ শোনা এবং খতিয়ে দেখার কাজ। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে ৭ ফেব্রুয়ারি।
সিইসি জানিয়েছেন, তিন ধাপে দেশে এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে— প্রাক এনুমারেশন, এনুমারেশন এবং এনুমারেশন-পরবর্তী পর্যায়।
প্রাক এনুমারেশন পর্বে রয়েছে, বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও), নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক (ইআরও) এবং অন্যান্যদের প্রশিক্ষণ। আগের ভোটার তালিকার সঙ্গে তথ্য মিলিয়ে দেখা এবং রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে পুরো প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা।
এনুমারেশন পর্বে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিতরণ, সংগ্রহ এবং মিলিয়ে দেখার কাজ হবে। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১২০০ ভোটারের সংখ্যানির্ধারণের বিষয়টিও চূড়ান্ত হবে পর্বে। জ্ঞানেশের স্পষ্ট নির্দেশ— ‘‘সব বিএলও সব বাড়িতে তিন বার করে যাবেন।’’
এনুমারেশন-পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, যাঁদের নাম মেলেনি তাঁদের নোটিস পাঠানো, দাবি এবং আপত্তি সংক্রান্ত শুনানি (সব ঠিক থাকলে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি) এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ।
কারা পাবেন এনুমারেশন ফর্ম? কারা হবেন ভোটার?
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আজ পর্যন্ত যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাঁরা সকলে এনুমারেশন ফর্ম পাবেন। যাঁরা এনুমারেশন ফর্ম জমা দেবেন, তাঁদের সকলের নাম খসড়া তালিকায় উঠবে।
আর ভোটার তালিকায় নাম থাকবে কাদের? কমিশনের নির্দেশিকায় চারটি শর্তের কথা বলা হয়েছে— ১. ভারতীয় নাগরিক হতে হবে ২. ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স হতে হবে ৩. সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় থাকতে হবে ৪. কোনও আইনে ভোট দেওয়ার অধিকার বাতিল হলে চলবে না।
তবে জীবিকা বা অন্য কারণে কেউ বাইরে থাকলে তাঁকে অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে হবে। ‘ইসিআই নেট অ্যাপ’ থেকে তথ্য আপলোড করা যাবে। দু’জায়গায় কারও নাম থাকলে দুটো ফর্মে আবেদন করা হলেও একটি নাম গ্রহণ করা হবে। সেন্ট্রাল ভাবে বিএলও পোর্টালে তথ্য উঠলে। একটি নাম স্বয়ংক্রিয় ভাবে বাদ যাবে।
তবে খসড়া ভোটার তালিকায় নাম উঠলেও যাঁদের নাম ‘ম্যাপিং’-এ নেই, তাঁরা সকলে চূড়ান্ত তালিকায় ঠাঁই না-ও পেতে পারেন। যাঁদের নাম ‘ম্যাপিং’-এ নেই কিন্তু ১২টি নথির (আধার-সহ) কোনও একটি বা একাধিক রয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে শুনানি হবে। তার পর হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। প্রসঙ্গত, এসআইআর মামলায় সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছে, আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। কিন্তু ভোটার তালিকার আবেদনে ‘নথি’ হিসাবে আধারকে গ্রাহ্য করার কথা বলেছে শীর্ষ আদালত।
ভোটার তালিকায় ‘ম্যাপিং’-এর অর্থ— এ বছর প্রকাশিত সর্বশেষ ভোটার তালিকার সঙ্গে ২০০২ সালে শেষ এসআইআর-তালিকা মিলিয়ে দেখা। দুই তালিকায় কত জনের নাম অভিন্ন, দেখা হয় তা। সঙ্গে দেখা হয়, এখনকার ভোটার তালিকায় থাকা কোনও ভোটারের মা-বাবার নাম গত এসআইআরের তালিকায় রয়েছে কি না। এই মিল পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টেরা চিহ্নিত হয়ে যান এমনিতেই। নির্বাচন কমিশনের সূত্রে বলা হচ্ছে, তাঁদের আলাদা করে কোনও নথিপত্র বা প্রমাণ দাখিল করতে হবে না আসন্ন এসআইআরের সময়ে। শুধুমাত্র কমিশনের দেওয়া আবেদনপত্র (এনুমারেশন ফর্ম) ভর্তি করলেই চলবে। যাঁদের নামের মিল বা সূত্র পাওয়া যাবে না, তাঁদের ক্ষেত্রে নথিপত্র-যাচাইয়ের প্রয়োজন হবে।
এসআইআর প্রক্রিয়ায় কার কী দায়িত্ব?
এই কাজে বিভিন্ন আধিকারিক যুক্ত থাকবেন। এঁদের দায়িত্ব কী কী, তা-ও জানিয়েছে কমিশন।
১. বিএলও— বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম দেবেন ও সংগ্রহ করবেন।
২. ইআরও— ভোটার তালিকা তৈরি, দাবি-আপত্তি শুনানি এবং চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবেন।
৩. এইআরও — ইআরও-কে সহায়তা করবেন।
৪. জেলাশাসক (জেলা নির্বাচনী আধিকারিক)— ইআরও-র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম আপিল (আবেদন) শুনবেন।
৫. মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইসি)— জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আপিল শুনবেন।
Информация по комментариям в разработке