ভূমিকম্পে পূর্বপ্রস্তুতি, চলাকালীন এবং পরবর্তী করণীয়: বাংলাদেশ ও ঢাকার প্রেক্ষিতে
বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চল ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে সংঘটিত শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঘটনা আমাদের সতর্ক করে দিয়েছে যে, বাংলাদেশেও একই ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। এই ভিডিওতে আমরা ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি, চলাকালীন এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ তিনটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে অস্থির অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে। গত ৫০ বছরে দেশটিতে ২৫০টিরও বেশি ভূমিকম্প হয়েছে, যার মধ্যে কিছু ৬.০ মাত্রার বেশি ছিল6। বাংলাদেশে ১৩টি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা রয়েছে, এবং চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলা এবং সিলেটের জৈন্তাপুর চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে7। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ১৮৯৭ সালের মহান ভারতীয় ভূমিকম্পের মতো একটি ভূমিকম্প আবার ঘটে, তবে গড়ে ২৮% ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং মোট জনসংখ্যার ৩.৭% মারা যাবে ও আহত হবে
ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি
ভবন নির্মাণ ও সংস্কার
• বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০ অনুযায়ী ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ করুন
• ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো ভবনগুলো সংস্কার ও শক্তিশালী করার জন্য 'রেট্রোফিটিং' পদ্ধতি ব্যবহার করুন
• সকল বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করুন
ইউটিলিটি সিস্টেম
• গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের লাইনের সঠিকতা নিশ্চিত করুন
• ভূমিকম্পের সময় গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন
প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা
• ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত মহড়া অনুশীলন করুন
• স্কুল ও স্বাস্থ্য সুবিধাগুলিতে জরুরি পরিকল্পনা করুন1
• ভলান্টিয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দুর্যোগকালীন সময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে শিখুন
জরুরি যোগাযোগ ও সরঞ্জাম
• জরুরি টেলিফোন নম্বর (ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ, হাসপাতাল) সংরক্ষণ করুন এবং দৃশ্যমান স্থানে লিখে রাখুন
• জরুরি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যেমন- টর্চলাইট, রেডিও (অতিরিক্ত ব্যাটারিসহ), বাঁশি, হ্যামার, হেলমেট/কুশন, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, প্রয়োজনীয় ঔষধ, ফার্স্ট এইড বক্স, শিশু যত্নের সামগ্রী নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করুন
ভূমিকম্প চলাকালীন করণীয়
ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জীবন বাঁচাতে পারে। ঢাকা শহরে, ভূমিকম্পের সময় ২০ থেকে ৬০ সেকেন্ডের একটি সময় থাকে, যখন নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে
• সমস্ত বৈদ্যুতিক, গ্যাস এবং পানির লাইন বন্ধ করুন
• ভবনের ভিতরে থাকলে, মজবুত টেবিল বা ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিন
• জানালা, বাহিরের দেয়াল এবং ভারী আসবাবপত্র থেকে দূরে থাকুন
• যদি বাইরে থাকেন, তবে ভবন, গাছ এবং বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকুন
• যদি গাড়িতে থাকেন, তবে খোলা জায়গায় থামুন এবং ভূমিকম্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাড়িতেই থাকুন
ভূমিকম্প পরবর্তী করণীয়
ভূমিকম্পের পরে প্রথম কয়েক ঘন্টা এবং দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে সঠিকভাবে কাজ করলে আরও ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা যেতে পারে
জরুরি সাড়াদান
• দ্রুত সাড়াদান, উদ্ধার এবং অপসারণ অপারেশন শুরু করুন
• আহতদের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করুন
• গৃহহীন মানুষদের জন্য আশ্রয় প্রদান করুন
• বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করুন
নিরাপত্তা পরীক্ষা
• বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আগে কাঠামোগত ক্ষতি পরীক্ষা করুন
• গ্যাস লিক, বিদ্যুৎ আউটেজ বা জলের সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন
• ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে দূরে থাকুন
বাংলাদেশ সরকার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। ঢাকা শহরে DEEPER এবং DEEP প্রকল্পের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য জনগোষ্ঠীর প্রস্তুতি বাড়ানো এবং কর্তৃপক্ষের সাড়াদান ক্ষমতা শক্তিশালী করা1
আমরা সবাই মিলে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিলে এবং সঠিক জ্ঞান আমাদের কাছে থাকলে, ভূমিকম্প যখন আঘাত হানবে তখন আমরা নিজেদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের রক্ষা করতে ভালভাবে প্রস্তুত থাকব।
আমাদের চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন এবং আরও এই ধরনের তথ্যপূর্ণ ভিডিও দেখুন! আপনার নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার।
Информация по комментариям в разработке